জাতীয়

অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ফেজ-২ : দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ফেজ-২ সহ বিভিন্ন অভিযানে গত এক বছরে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।

সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে বিশেষ যৌথ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ কার্যক্রম শুরু করে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে এই অভিযানে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বছরজুড়ে বিভিন্ন অভিযানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। 

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২ অভিযান : 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে চালু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২ অভিযানে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ হাজার ৯৯৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, এ অভিযানে ১০২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৫৩ রাউন্ড গুলি, ১৬৯ রাউন্ড কার্তুজ, ৮৯টি দেশীয় অস্ত্র, গ্রেনেড, মর্টারের গোলা, গান পাউডার, আতশবাজি, বোমা তৈরির উপকরণ, ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় মামলা ও ওয়ারেন্টমূলে ১২ হাজার ৩৪৮ জনসহ মোট ২২ হাজার ৩৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

নিরাপত্তায় নতুন ৫ ব্যাটালিয়ন আনসার :

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে দুই সহস্রাধিক পদ সৃষ্টি করে আনসারের পাঁচটি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। গত ২৮ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। নতুন ব্যাটালিয়নগুলো ঢাকা, বরিশাল সদর, চট্টগ্রাম, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা এবং কক্সবাজারের উখিয়ায় মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন :

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের দেওয়া সুপারিশগুলো জনবান্ধব পুলিশিং, জবাবদিহিতা ও মানবাধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে নেওয়া হয়। সেগুলোর এখন বাস্তবায়ন চলছে। এর মধ্যে পুলিশে আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন, নতুন আইন প্রণয়ন এবং কাঠামোগত পরিবর্তনে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। 

‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ পাস :

পুলিশ প্রশাসনে কাঠামোতে স্বচ্ছতা ও তদারকি নিশ্চিত করতে ‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ পাস করা হয়েছে। 

বদলি ও পদোন্নতি :

নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারা দেশের পুলিশ সুপার (এসপি) ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পদে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সংস্কার :

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে পুলিশের চেইন অব কমান্ড পুনরুদ্ধারে ব্যাপক সংস্কারমূলক কাজ করা হয়েছে। ২০২৫ সালে নতুনভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং প্রশিক্ষিত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশিং এবং থানায় সেবার মান বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার অভিযান :

২০২৫ সালে দেশব্যাপী অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান পুলিশের অন্যতম প্রধান অর্জন। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকা এবং শহরাঞ্চলে মাদক সিন্ডিকেট নির্মূলে বড় সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণ :

ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সাইবার অপরাধ দমনে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন আরও সক্রিয় হয়েছে। ২০২৫ সালে অনলাইনে গুজব ছড়ানো এবং আর্থিক জালিয়াতি রুখতে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটের সক্ষমতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা :

বড় শহরগুলোতে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে এআই চালিত সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা এবং আধুনিক ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগ দেখা গেছে।

কমিউনিটি পুলিশিং ও গণমুখী সেবা :

পুলিশকে জনগণের আস্থায় ফিরিয়ে আনতে ‘বিট পুলিশিং’ এবং ‘কমিউনিটি পুলিশিং’ কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও প্রায় পুরো দেশেই অনলাইনে জিডি এবং পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হয়েছে। 

পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫ : 

এ বছরের পুলিশ সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘আমার পুলিশ আমার দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’। এবার আড়ম্বরপূর্ণ প্যারেড বাদ দিয়ে পেশাদারিত্ব এবং সেবামূলক কার্যক্রমের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।

লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার : 

থানা থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে জোরদার অভিযান চালানো হয়েছে এবং অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

নির্বাচনকালীন প্রস্তুতি :  

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের দৃশ্যমান উপস্থিতি বৃদ্ধি এবং চেকপোস্ট. তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে।

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন গ্রেফতার :

গত ২৭ মে ভোরে কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় তিন ঘণ্টার এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদকে আটক করে সেনাবাহিনী। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে সুব্রত বাইনের অন্য দুই সহযোগী শুটার আরাফাত ও শরীফকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড অ্যামোনিশন এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়।