এ এইচ এম ফারুক, এই প্রবন্ধের লেখক
বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্ধশতকের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনো রয়ে গেছে রাজনৈতিক ও ভৌগলিকভাবে স্পর্শকাতর এক জনপদ হিসেবে। এই অঞ্চলকে ঘিরে যে সংকট, তা কেবল ইতিহাসের নয়- এটি এখনো বর্তমান। বিচ্ছিন্নতাবাদ, সশস্ত্র সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ- সবই এখানে ঘটেছে এবং এখনো ঘটছে। বাঙালি-পাহাড়ি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মাঝে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল এক জটিল, অস্থির এবং সন্দেহপ্রবণ পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের পারস্পরিক অবিশ্বাস, রাজনৈতিক উত্তেজনা, এবং অতীতের সংঘাত- একটি এমন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, যেখানে একটি ছোট ঘটনা থেকেও বড় দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এই অস্থিরতার ভেতরেই সক্রিয় রয়েছে একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনা- যার মধ্যে “জুম্মল্যান্ড” গঠনের স্বপ্ন, “কুকিচীন” রাষ্ট্রের দাবিসহ নানা ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা রয়েছে। সব মিলিয়ে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এখানে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দীর্ঘদিনের। অথচ এই সেনাবাহিনীকে ঘিরেও বারবার উঠছে বিতর্ক, উঠছে প্রত্যাহারের দাবি। আর এ দাবির ক্রীড়ানক হিসেবে কাজ করে মুষ্টিমেয় উপজাতি লোকের গড়ে তোলা সশস্ত্র আঞ্চলিক সংগঠন। একাধিক সংগঠন বিদ্যমান থাকলেও একেকটা ইস্যুতে একেকটা সংগঠন সক্রিয় হয়।
প্রতিটি ধর্ষণ, খুন, অপহরণ বা অপ্রীতিকর ঘটনার যথাযথ বিচার হওয়া কাম্য। ভিকটিমের অধিকার বিচার পাওয়া। কিন্তু বিচার চাওয়ার দাবির মোড় ঘুড়িয়ে “পাহাড় থেকে সেনা হটাও” দাবি তোলার পেছনের কারণ কী?
এই দাবির পেছনে যে রাজনৈতিক ছক রয়েছে, তা বুঝতে হলে আমাদের দেখতে হবে- কীভাবে প্রতিটি ইস্যুর মোড় ঘুরে যায় “পাহাড় থেকে সেনা হটাও” স্লোগানে। ধর্ষণ, খুন, অপহরণ, ভূমি বিরোধ, এমনকি সামাজিক অপরাধ- সবকিছুর প্রতিবাদ যেন শেষ পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ায় একটি জায়গায়: “পাহাড় থেকে সেনা হটাও”।
কারণ- এসব পরিকল্পনার বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখা হয় সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে। তাই সেনাবাহিনীকে পাহাড় থেকে হটাতে পারলে, সেই স্বপ্নপূরণের পথে বড়সড় সাফল্য অর্জন হবে। বোদ্ধা মহলের ধারণা- এমন বিশ্বাস থেকেই বারবার উঠে আসে সেনা প্রত্যাহারের দাবি।
বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- এই দাবির পুনরাবৃত্তি এতটাই নিয়মিত, এতটাই পূর্বপরিকল্পিত, যে তা অনেকটা পুরনো পুনরাবৃত্তিমূলক রচনার মতো হয়ে গেছে। সেখানে যেই রচনাই লিখতে বলুক শেষটা গিয়ে ঠেক একই জায়গায়। যেমন পাশে একটা নদী থাকে, নদীতে কুমির থাকে, আর কুমিরের লেজে থাকে খাজ কাটা, খাজ কাটা, খাজ কাটা। তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি আন্দোলনের মোড় ঘুরে যায় সেই পুরনো স্লোগানে: “পাহাড় থেকে সেনা হটাও, সেনা হটাও, সেনা হটাও”।
পাহাড়ে সেনাবাহিনী কেন?
পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি কোনো দখলদারিত্ব নয়। এটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের অংশ। এই অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার নিয়োজিত থাকলেও বাস্তবতা হলো- সশস্ত্র সংগঠনগুলোর আধুনিক অস্ত্রের মুখে তারা প্রায়ই অসহায়। পাহাড়ে মুষ্ঠিমেয় উপজাতীয়দের গড়ে তোলা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো যেভাবে আধিপত্য বিস্তার করে, তাতে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে এককভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব।
এই বাস্তবতায় সেনাবাহিনী এখানে রয়েছে সহায়ক শক্তি হিসেবে। তারা শুধু পাহাড়ে নয়, দেশের অন্যান্য স্পর্শকাতর এলাকাতেও দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। উদ্দেশ্য একটাই- রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
ইস্যু যাই হোক, মোড় ঘুরে যায় সেই পুরনো স্লোগানে:
পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক সময় এমন ঘটনা ঘটে, যার শুরুটা হয় একেবারে ব্যক্তিগত পর্যায়ে। যেমন দুইজন তরকারি ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে তর্ক, কিংবা ব্যবসায়িক কারণ নিয়ে ঝগড়া বাধলো। কিন্তু সেই ঝগড়া যদি বাঙালি ও উপজাতি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে হয়, তাহলে সেটিও রূপ নিতে পারে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায়। তারপর শুরু হয়- বিচারের দাবিতে ব্যানার হাতে মাঠে নেমে আন্দোলন, বিক্ষোভ, হরতাল, জালাও-পোড়াও। কিন্তু সেই প্রতিবাদের এক পর্যায়ে মোড় ঘুরে যায় সেই পুরনো স্লোগানে- “পাহাড় থেকে সেনা হটাও, সেনা হটাও, সেনা হটাও”।
এমনকি পাহাড়ে রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক কার্যক্রমের বাইরে, ব্যক্তি পর্যায়ে মারামারি, কাটাকাটি, খুন, ধর্ষণ- যাই হোক না কেন, ঘটনার প্রকৃত তদন্তের আগেই চেষ্টা করা হয়- এই ঘটনায় বাঙালিকে সম্প্রদায়গতভাবে অপরাধী সাজানোর কানেকশন খোঁজার। কিছু ঘটনায় উপজাতি বনাম একজন বা একাধিক বাঙালি অথবা বাঙালি বনাম এক বা একাধিক উপজাতি জড়ীত থাকেন না, তা নয়। কিন্তু তা কোনো ভাবেই সম্প্রদায়গত না। অথচ সেটাকে সম্প্রদাগত রূপ দিয়ে তারপর শুরু হয় আন্দোলন, বিক্ষোভ, জালাও-পোড়াও, হরতাল। প্রতিবাদ বিক্ষোভের সেই ঘটনা কখনো কখনো আবারো খুনোখুনির পর্যায়েও পৌঁছে যায়। আর এসবকে কেন্দ্র করে ফের সেই পুরনো খাজ কাটা স্টাইলে আন্দোলনের মোড় ঘুরে যায় সেই খাজ কাটা, খাজ কাটা, খাজ কাটা পুরনো গল্পেরমতো স্লোগানে- “পাহাড় থেকে সেনা হটাও, সেনা হটাও, সেনা হটাও”।
অতীতের কিছু ঘটনা- যেখানে আন্দোলনের মোড় আগে ঘুরেছে, পরে বেরিয়েছে সত্য:
২০১৭ সালে চাঞ্চল্যকর খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের ছাত্রী ইতি চাকমাকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা নিশ্চয় মনে আছে? ঘটনার পরপরই বাঙালিদের দায়ী করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে খাগড়াছড়ির রাজপথ। জালাও-পোড়াও হরতালের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ এলাকায়। সেই ঘটনায়ও বিচার দাবিতে চলমান আন্দোলনের মোড় ঘুরে সেই কুমিড়ের লেজ খাজ কাটা, খাজ কাটা, খাজ কাটা পুরনো গল্পেরমতো স্লোগানে- “পাহাড় থেকে সেনা হটাও, সেনা হটাও, সেনা হটাও” দাবি জোড়ালো করা হয়। কিন্তু শেষে তদন্তে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। তুষার চাকমা ও তার সহযোগী ৫ চাকমা যুবক এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, কারণ ইতি তার প্রেম প্রত্যাখ্যান করেছিল।
(সুত্র: সংবাদ, ইত্তেফাক ও ইনকিলাবসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম)।
একই বছর (২০১৭) পানছড়িতে বালাতি ত্রিপুরাকে হত্যা করে সাধন ত্রিপুরা ও তার সহযোগীরা। কিন্তু প্রথমে তিন বাঙালিকে দোষারোপ করে আন্দোলন শুরু হয়। গুজবের ডালপালা ছড়িয়ে স্লোগান তোলে- “সেনা হটাও, সেনা হটাও, সেনা হটাও”। কিন্তু মাত্র ছয় দিনের মাথায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে মূল খলনায়ক সাধন ত্রিপুরাকে, যিনি নিজেই বাঙালিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ পাঠিয়েছিলেন। (সূত্র: দৈনিক পূর্বকোণ, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭)
আবার নিকট অতীতে গত বছর (২০২৪) সালের অক্টোবর মাসের শুরুতে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক বাঙালি শিক্ষককে ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে উপজাতীয় একটি সংগঠনের একাংশ। ঘটনায় বিচারের দাবি তুলে বিক্ষোভ করতে গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডুকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়া চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ছিল ভয়াবহ, নির্মম এবং বিচারবহির্ভূত। তবু তদন্তের আগেই প্রায় সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উপজাতীয় সংগঠনগুলো মাঠে নামে, জালাও-পোড়াও, হরতাল-অবরোধ শুরু হয়। আর সেই আন্দোলনের দাবিরও মোড় ঘুরে যায় সেই পুরোনো স্লোগানে- “পাহাড় থেকে সেনা হটাও, সেনা হটাও, সেনা হটাও”।
২০১৬ সালে আয়না চাকমা নামে এক কিশোরী কলেজে ভর্তির আবেদন করতে এক বাঙালি ছেলের দোকানে গেলে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতারা তাকে ধরে নিয়ে যৌন নির্যাতন করে। এ ঘটনায় পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু তাদেরই মুক্তির দাবিতে হরতাল-অবরোধ করে খোদ উপজাতীয় সংগঠন। তখনও যথারীতি দাবি ওঠে পাহাড় থেকে “সেনা হটাও, সেনা হটাও, সেনা হটাও”, যেনো সেই খাজ কাটা, খাজ কাটা, খাজ কাটা পুরনো গল্পের পুনরাবৃত্তি। (সূত্র: পরিবর্তন ডটকম, ২৭ জুন ২০১৬)
২০১৪ সালে রাঙামাটিতে বিশাখা চাকমার লাশ পাওয়া যায় কাপ্তাই হ্রদে। ঘটনার পরপরই শুরু হয় বাঙালিদের দোষারোপের খেলা। শুরু হয় বিক্ষোভ, জালাও-পোড়াও হরতাল। আর যথারীতি গল্পের শেষে দাবি পৌছে যায় “পাহাড় থেকে সেনা হটাও, সেনা হটাও, সেনা হটাও”। কিন্তু পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে- ভিকটিমের স্বামী লক্ষীরাম চাকমার উপস্থিতিতে সঞ্জয়, তত্তারাম ও বিনোদ চাকমা মিলে ধর্ষণ ও হত্যা করে। (সূত্র: সিএইচটি টাইমস, ২২ নভেম্বর ২০১৪)
একই বছর (২০১৪) বান্দরবানে ব্র্যাক স্কুলের শিক্ষিকা উ প্রু মারমাকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ উঠে। সাথে সাথে সন্দেহ তৈরি করে মুসলিম উদ্দিন নামে এক বাঙালি কাঠুরিয়াকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু তদন্তে দেখা যায়- মূল খলনায়ক বিজয় তঞ্চঙ্গ্যা, একজন উপজাতি যুবক। (সূত্র: পার্বত্য নিউজ, ৮ জুন ২০১৪)
২০১৪ সালে খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে সবিতা চাকমার লাশ পাওয়া যায়। বাঙালি ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারকে দায়ী করে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলন মোড় নেয় “পাহাড় থেকে সেনা হটাও, সেনা হটাও, সেনা হটাও” দাবিতে। কিন্তু ময়নাতদন্তে ধর্ষণের কোনো আলামতই পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালসহ পাহাড়ের হাসপাতালগুলোতে অধিকাংশ চিকিৎসকই উপজাতি।
বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনার ছক:
পার্বত্য চট্টগ্রামে “পাহাড় থেকে সেনা হটাও” স্লোগান শুধু একটি প্রতিবাদ নয়, এটি একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ছক। এই ছকের পেছনে রয়েছে একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন, যার বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখা হয়।
এই পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম হলো “জুম্মল্যান্ড” রাষ্ট্র গঠন। এটি একটি কাল্পনিক ভূখণ্ড, যেখানে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, মুরং, বম, লুসাই, খিয়াং, রাখাইন, খুমি প্রভৃতি উপজাতিকে একত্র করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দাবি তোলা হয়। এই দাবির পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক লবিং, এমনকি ভারতের কলকাতায় আয়োজিত এক সম্মেলনে “জুম্মল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রী” পরিচয় দিয়ে অংশগ্রহণের ঘটনাও ঘটেছে। বাংলাদেশ সরকার এই দাবিকে সার্বভৌমত্ববিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করে।
আরেকটি পরিকল্পনা হলো “কুকিচীন রাষ্ট্র”। এই ধারণা অনুযায়ী, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল (মিজোরাম, মণিপুর, ত্রিপুরা), মিয়ানমারের চিন হিলস এবং বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামকে একত্র করে একটি বৃহৎ কুকি-চীন জাতিগোষ্ঠীভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখানো হয়। এই পরিকল্পনার পেছনে রয়েছে জাতিগত ঐক্য ও ধর্মীয় পরিচয়ের মোড়কে রাজনৈতিক বিভাজনের ছক, যা আঞ্চলিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
এইসব পরিকল্পনার বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীকে পাহাড় থেকে হটাতে পারলে, বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড গঠনের পথে বড়সড় সাফল্য অর্জন হবে—এমন বিশ্বাস থেকেই বারবার উঠে আসে “সেনা হটাও” স্লোগান। তাই দেখা যায়, ধর্ষণ, খুন, অপহরণ, কিংবা বাজারে তর্কাতর্কি—যে কোনো ইস্যু হোক, আন্দোলনের মোড় ঘুরে যায় সেই পুরোনো দাবিতে। এই দাবির পুনরাবৃত্তি এতটাই পূর্বপরিকল্পিত, এতটাই ছকবদ্ধ, যে তা অনেকটা সেই পুরোনো গল্পের মতো—যেখানে নদী থাকে, নদীতে কুমির থাকে, আর কুমিরের লেজে থাকে খাজ কাটা, খাজ কাটা, খাজ কাটা।
সেনা নয়, সন্ত্রাস হোক বিতাড়িত:
এইসব ঘটনা প্রমাণ করে- পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক সময় ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটনের আগেই আন্দোলনের মোড় ঘুরে যায়। সেনাবাহিনীকে দায়ী করার প্রবণতা যেন একটি পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক ছক। এই ছকের পেছনে রয়েছে- অস্ত্রধারী গোষ্ঠীর আধিপত্য, আন্তর্জাতিক সহানুভূতির কৌশল, এবং রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করার ষড়যন্ত্র।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চাইলে সেনাবাহিনী নয়, সন্ত্রাসের বিতাড়ণ করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি জরুরি। যে গোষ্ঠী “পাহাড় থেকে সেনা হটাও” স্লোগান তোলে, তারা আসলে সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতা করে। তাদের ছক বুঝতে হবে, তাদের মুখোশ খুলতে হবে।
গল্পের কুমিরের লেজে খাজ থাকতেই পারে, কিন্তু প্রতিটি গল্পের মোড় যেন সেই খাজ কাটার দিকে না ঘুরে যায়। বরং মোড় ঘুরুক সত্যের দিকে, ন্যায়ের দিকে, শান্তির দিকে।
লেখক : সাংবাদিক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক farukkht@yahoo.com