কবর। ছবি : সংগৃহীত

মতামত

কবর পাকা করা যাবে কি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

একজন মুসলিম মারা গেলে তাকে মাটিতে দাফন করা হয়। দাফন করা স্থানকে কবর বলা হয়। অনেকে কবরের যত্ন নিতে তা ইট-সিমেন্ট দিয়ে কবর করে থাকেন।

এমন অনেকেই আছেন যারা নির্দিষ্ট স্থান নিয়ে শুধু মাত্র নিজেদের আত্মীয়স্বজনদের কবর সেখানে দেন এবং সেই কবরগুলো পাকা করে রাখেন। কেউ কেউ আবার ওলি-আউলিয়ার মাজার স্থাপন, তাদের কবরের পাশে মসজিদ নির্মাণকে পুণ্যের কাজ মনে করে থাকেন। অথচ কবর পাকা করার কোনো রীতি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর আদর্শে নেই। সাহাবায়ে কেরামও কখনো ও কোনোদিন কবর পাকা করেননি।

কেউ আছেন নিজের জায়গা-জমিতে কবরস্থান বানিয়ে তা পাকা করে থাকেন। পারিবারিক কবরস্থান হয়ে থাকে। প্রশ্ন হলো কবর পাকা করা যাবে কি?

কবর পাকা করার রীতি নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে ও তার পরবর্তী সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিলো না। তবে কবর চিহ্নিত করার রীতি ছিল। নবী কারিম (সা.)-এর যুগে কবরের বুক বরাবর স্থানটি উটের কুজের মতো সামান্য উঁচু করে দেয়া হতো। মাথার দিকে একটি পাথর কবরটি চেনার জন্য রাখা হতো।

কবর পাকা করা যাবে না। কেননা নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (স.) কবরে চুনকাম করতে, কবরের ওপর গৃহ নির্মাণ করতে এবং কবরের ওপর বসতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসলিম ৯৭০)

অন্য হাদিসে আবুল হাইয়াজ আসাদি থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘একবার হজরত আলী (রা.) আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে সেই কাজে পাঠাব না, যে কাজে রসুল (স.) আমাকে পাঠিয়েছিলেন? ওই কাজ এই যে, কোনো মূর্তি দেখলে তা নষ্ট করে ফেলবে, আর কোনো উঁচু কবর দেখলে তা সমান করে দেবে।’ (মুসলিম ৯৬৯)

কবরকে মাজার বানানো কি জায়েজ?

অনেক সময় দেখা যায় পূর্ববর্তী বুজুর্গদের (পীর/আউলিয়া) কবরগুলো প্রায় সবই পাকা করা। হজরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.)-এর আমলেও অনেক আলেমের কবর পাকা হয়েছে। এ ছাড়া হজরত শাহজালাল (রহ.), হজরত মইনুদ্দিন চিশতি (রহ.)-সহ অনেক পীর-আউলিয়ার কবর পাকা।

যেহেতু নবীজি (স.) কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন। সাহাবাদেরও এর বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল। তা ছাড়া ফিকহের ইমামরাও কবর পাকা করার কোনো অনুমতি দেননি। তাই এদের কবর পাকা করা ঠিক হয়নি এবং নতুন করে এমন কবরকে পাকা করা যাবে না।

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন। ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) কর্তৃক সংকলিত কিতাবুল আসারে উল্লেখ করেছেন, ‘আমরা (কবরকে) চুনকাম করা, পাকা করা, অথবা তার নিকটে মসজিদ নির্মাণ করা, ঝান্ডা টানানো, কোনো কিছু লেখা মাকরুহ মনে করি। এবং আমরা কবরকে ইট দিয়ে পাকা করা, কবরে প্রবেশ করাকে মাকরুহ মনে করি। তবে কবরে পানি ছিটিয়ে দেওয়াতে কোনো সমস্যা নেই।’ (কিতাবুল আসার লিমুহাম্মদ : ২/১৯১)

এছাড়াও প্রখ্যাত ফিকাহবিদ ও হাদিস-গবেষকগণও কবরকে পাকা করাকে মাকরুহ উল্লেখ করেছেন। (মাজমাউল বিহার লি- আল্লামা তাহের : ৩/২২৬; ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/২৩৬; ফাতহুল বারি লি-ইবনে হাজার আসকালানি : ৩/৫৫৯)

যেখানে পরিষ্কার ভাষায় হাদিসে ইরশাদ রয়েছে, গ্রহণযোগ্য ফুকাহায়ে কেরামরা যুগে যুগে মাকরুহ বলেছেন। সুতরাং কোনো বড় ব্যক্তির কবর পাকা থাকলেই সে কাজ জায়েজ হয়ে যাবে না। তাছাড়া যেসব মনীষীর কবরকে পাকা করা হয়েছে, তারা নিজেরা কি কখনও তাদের পূর্ববর্তী কোনো বুজুর্গের কবরকে পাকা করেছেন? কিংবা তারা কি তাদের কবরকে পাকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন?

ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার ভক্ত ও মুরিদ বা পরবর্তী ব্যক্তিরা কোনো কাজ করলেই— সেটি ওই বুজুর্গের কাজ বলে সাব্যস্ত হয় না। সুতরাং হাদিসের দ্বারা এবং ফুকাহায়ে কেরামের মতামত দ্বারা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত যে, কবরকে পাকা করা অনুচিত ও নাজায়েজ।