রাজনীতি

নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতেই হবে। সকল রাজনৈতিক দলও বিষয়টি জানে বলে মনে করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কিনা এ ব্যাপারে জনগণের মাঝে যে আস্থার অভাব রয়েছে, সে প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অবশ্যই নির্বাচন হবে, ফেব্রুয়ারিতেই হবে। তবে যে অবিশ্বাস মানুষের মাঝে তৈরি হয়েছে সেটা দূর করে বিশ্বাস সৃষ্টির জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে, সেভাবে এগুতে হবে।’

মির্জা ফখরুল মনে করেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসও খুব দৃঢ়চিত্তে সহযোগিতা করছেন।

বিশেষ করে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকের পর, এটা আপনারা নিশ্চিত হয়ে গেছেন। আমার দৃষ্টি থেকে যতটুকু দেখি, রাজনৈতিক দলগুলো জানে যে, নির্বাচন হবে। প্রাতিষ্ঠানিক যেসব স্টেকহোল্ডার আছে যেমন, সেনাবাহিনী, প্রশাসনও জানে যে, নির্বাচন হবে। কিন্তু একটা জিনিস মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশে সহজ সরল ব্যাপার নাই। এটা সবসময় একটা জটিলতার মধ্যে পড়েছে। যেকোনো কারণেই হোক আমাদের শত্রুরা বাংলাদেশকে একটা অস্থির অবস্থার মধ্যে রাখতে চেয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে বিপরীত দিকে হাঁটছে এনসিপি-জামায়াত। তারা কিছু দাবির কথা বলছে এবং সেগুলো পূরণ না হলে নির্বাচনে যাবেন না বলছেন- এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এসব হচ্ছে রাজনৈতিক দলের ন্যাচার। দল সবসময় একটা বার্গেইন করতে থাকে। বার্গেইন করে সেরাটা আনতে চায়। এটা আমি কোনো অপরাধ মনে করি না। যদি কোনো দল বার্গেনিংয়ের মাধ্যমে ম্যানুপুলেশন করে যদি কিছু আনতে পারে, এটা সেই দলের যোগ্যতা। দলগুলো যে জিনিসগুলো নিয়ে আবদার করছে, এটাকে আলোচনার মাধ্যমে শেষ করা খুব কঠিন ব্যাপার নয়। এরইমধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। অনেকটা জায়গা তৈরি হয়েছে যেখানে আরো আলোচনার সুযোগ রয়েছে।’

আওয়ামী লীগ এবং তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের কথা আর কি বলবো! দেশের সবচেয়ে পুরনো দল হওয়ার পরেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা নিজেরাই নিজেদের মেরে ফেলেছে। তারা সমস্ত চরিত্রকে বিলীন করে দিয়ে একটা ফ্যাসিস্ট দলে পরিণত হয়েছে। ফলে তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের ভালোবাসাও নেই, আস্থাও নেই। আওয়ামী লীগের যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, যারা ইনস্টিটিউশন নষ্ট করায় জড়িত তাদের সবার বিচার হওয়া উচিত, পাশাপাশি দণ্ডও দেয়া উচিত।’

আওয়ামী লীগকে দণ্ড দেয়া এবং দল হিসেবে তাদের রাজনীতি করতে না দেয়া- এই বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, আমি খুব পরিষ্কার করে বলি, এ ব্যাপারে অনেক কথা বলতে হয়েছে, শুনতে হয়েছে। এটা নিয়ে বাংলাদেশে অনেক কথাবার্তা চলছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আগেও বলেছি, আমাদের চেয়ারম্যান এবং অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান সাহেবও বলেছেন যে, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। কিন্তু যদি সেই রাজনৈতিক দল কোনো গণহত্যার সঙ্গে জড়িত হয়, দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে দেয়ার জন্য দায়ী হয় তাহলে নিশ্চয়ই তাদের শাস্তি পেতে হবে।

আমি একটা রাজনৈতিক দল, আরেকটা রাজনৈতিক দলকে ব্যান করতে যাবো কেন? কিন্তু যদি সেই পার্টি জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, প্রতারণা করে, গণহত্যা করে তাহলে অবশ্যই তার বিচার হতে হবে।

ভারতীয় একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনি যদি চান এই লোকটাকে মিডিয়ার মাধ্যমে ঝামেলায় ফেলবেন, সেটা ইচ্ছা করলেই পারেন। কিন্তু আমার সঙ্গে তাদের (এই সময় পত্রিকার) সেরকম কোনো কথাই হয়নি। আমি পড়েছি (প্রকাশিত সাক্ষাৎকার)। আমি তো কিছুদিন আগে বলেছিই যে, আওয়ামী লীগের তার কাজের জন্য বিচার হওয়া উচিৎ। জাতীয় পার্টির কথা বলেছি যে, তারা যদি কোনো অপরাদের সাথে জড়িত থাকে তাদের বিচার হওয়া উচিৎ। কিন্তু জাতীয় পার্টিকে ব্যান করে দেয়া- এটা আমি কখনো বলিনি।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাকের রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে ফখরুল বলেন, ‘যেই মুহূর্তে সব লিগ্যাল সমস্যাগুলো শেষ হবে, যেই মুহূর্তে আমরা মনে করবো, রাজনৈতিকভাবে সময় তৈরি হয়েছে তখনই তারেক রহমান দেশে আসবেন। তিনি এখন জাতীয় নেতা। তার সমস্ত নিরাপত্তা আমাদের দিতে হবে। তবে নিরাপত্তা ঝুঁকি না থাকলেও দল যখন মনে করবে তিনি আসতে পারেন তখন তিনি ফিরে আসবেন।’

উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা।