রাজনীতি

গণতান্ত্রিক যাত্রায় যারা বাধা দেবে, জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে: সালাহউদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘গণতান্ত্রিক যাত্রায় যারাই বাধার সৃষ্টি করবে, তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে জনগণ।’

তিনি বলেন, ভোটাধিকার আদায়ের জন্য আমাদের দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সংগ্রাম করতে হয়েছে, ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। সেই গণতান্ত্রিক যাত্রায় যারা বাধা দেবে, জনগণ তাদেরকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।

আজ সোমবার ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিন এ কথা বলেন। 

বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সারা দেশের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা অংশ নেন।

বিএনপি’র এই সিনিয়র নেতা বলেন, দেশের একটি রাজনৈতিক দল ধর্মের ট্যাবলেট বিক্রির নামে জাতির সঙ্গে প্রতারণায় নেমেছে। যে দলের কোনো নীতি নেই, কোন আদর্শ নেই, কোনো পরিকল্পনা নেই। যে দলটি ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে প্রতারিত করার চেষ্টা করছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়ে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, ধর্ম ব্যবসায়ী ভাইয়েরা কেবলই বলছেন, এটাতে ভোট দিয়ে তরতরিয়ে জান্নাতে যাওয়া যাবে। এর আগে ইহকালে কী হবে, সেই বিষয়ে তাদের কোনো কথা নেই। 

বিএনপি কেবল ধর্মের ট্যাবলেট বিক্রি করতে চায় না উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা জনগণের জন্য কী করতে চাই, সেই পরিকল্পনা তুলে ধরতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের এমনভাবে জ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিভিত্তিক চর্চা করতে হবে, যাতে করে অন্য কোনো সংগঠন আমাদের ধারেকাছে আসতে না পারে।

বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছেন, তা এতোটাই প্রবল যে, সেখানে বাংলাদেশের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই নেই। আর এই কারণেই  তারেক রহমান বলেন, ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। তাই আমাদেরও সবার আগে চিন্তা হবে আমরা যা লিখছি, যা বলছি, তার দ্বারা দেশের কোনো স্বার্থহানি হচ্ছে কি-না। 

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার মহান ঘোষক। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সবই তার সময়ে নিশ্চিত করা হয়। 

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও বিএনপির অবদান।’

তিনি বলেন, তারপর হাসিনা ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা চালু করে। গণতন্ত্রের মুখোশে বাকশাল চালু করে। ওই সময়ে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা চালু করা হয়।

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘১৯৯১ সালে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৬ সালে জনগণের দাবির মুখে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। সুতরাং দেশের যত কল্যাণ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, তার সবই হয়েছে বিএনপি’র হাত ধরে।’

বিএনপি’র নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই মূহুর্তে আমাদের প্রধান কাজ হলো— জনগণের দুয়ারে গিয়ে তাদের বোঝানো যে  বিএনপি ও গণতন্ত্র এক সূত্রে গাথা। বিএনপি বরাবরই জনগণের দল। জনগণের কল্যাণে কাজ করাই বিএনপি’র আদর্শ। 

তিনি আরও বলেন, আগামীতে দল ক্ষমতায় গেলে  ৩১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কীভাবে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করা হবে তা, জনগণের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরতে হবে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ৩১ দফা পড়তে অনেক সময় লাগবে, অনেকে হয়তো পড়বেন না। তাই বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ৮টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয় নিয়ে লিফলেট তৈরি করা হয়েছে। বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বলবো— আপনারা এগুলো নিয়ে মানুষের কাছে যাবেন। একজন কৃষককে বোঝাবেন, আপনার জন্য ফারমার্স কার্ড আছে। এই কার্ড থাকলে আপনি কৃষি ঋণ পাবেন, সার বীজ কীটনাশক সহায়তা পাবেন। একজন নারীকে বলবেন, আপনার জন্য ফ্যামিলি কার্ড রয়েছে।

বিএনপি’র এই নেতা বলেন, আমজনতার সঙ্গে সঙ্গে যদি ‘আম’ভাবে কথা না বলে ইংরেজিতে বলা হয়, তাহলে ‘কাম’ হবে না। ইহকালে দ্বীন-দুনিয়াতে আপনাদের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কী করবো, সেটাও বলতে হবে। গ্রামে গিয়ে বলতে হবে যে এ কৃষি কার্ড কৃষকের মুক্তির সনদ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায়  সোচ্চার হতে হবে উল্লেখ করে বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন চরিত্র হনন ও গালিগালাজ চলছে। তাই এখানে বেশি কাউন্টার দিতে হবে। বিদেশ থেকে কেউ কেউ এমনভাবে লিখছেন, যাতে মনে হয় যে শুধু তারাই জ্ঞানের জাহাজ, আর বাকিরা মুর্খ। তাদের কোনো কিছুর দায়-দায়িত্ব নেই, দেশপ্রেমের বালাই নেই।

এ সময় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, গণতন্ত্রের সর্বনাশ করেছে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার। তবে গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের দীর্ঘ সংগ্রামে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারিয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘এমন একটি নির্বাচন প্রয়োজন, যেখানে মানুষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেবে।’

অনুষ্ঠানে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জান্নাতের টিকিট বিক্রির কথা বলে ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে জামায়াত। ইউরোপের মধ্যযুগ ও অন্ধকার যুগকে ফিরিয়ে আনতে চায় দলটি।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড ও কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে— এই নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিএনপি। 

এই অনুষ্ঠান শুক্রবার বাদে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। 

এই অনুষ্ঠানে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ওলামা দলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলোও অংশ নেবে। 

এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।