রাজনীতি

ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক নেই: গোলাম পরওয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বিএনপি ইসলামী ব্যাংকসহ যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নির্বাচনি দায়িত্বে না দেওয়ার কথা বলেছে সেগুলোর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বিএনপির পক্ষ থেকে ধরনের বক্তব্য আসার বিষয়টি ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। 

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন ও অন্য চার নির্বাচন কমিশনার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন গোলাম পরওয়ার। 

এ সময় আরও ছিলেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. এইচএম হামিদুর রহমান, মতিউর রহমান আকন (মিডিয়া সেক্রেটারি), প্রচার সেক্রেটারি, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির ইসলাম এবং উত্তরের আমির সেলিম।
 
বিএনপি ইসলামী ব্যাংকসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ার বিষয়ে ইসিকে জানিয়ে গেছে, এ ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান কী- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে পরিষ্কারভাবে স্টেটমেন্ট দিয়েছি—মিডিয়ায় হয়তো দেখেছেন। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। যেসব আর্থিক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হচ্ছে— জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো মালিকানা বা প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা নেই। দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা দায়িত্ব পালন করেন। তাহলে কি সেই সব ব্যাংকের তালিকাও প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন?

জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করে বিতর্কিত করার এই অরাজনৈতিক ধারা আমরা দুঃখজনকভাবে দেখছি। এটি পরিহার করা উচিত। চাইলে আমরাও অনেক বিএনপি নেতার মালিকানাধীন ব্যাংক, ব্যবসা, হাসপাতালের তালিকা তুলে ধরে পাল্টা বিবৃতি দিতে পারতাম। কিন্তু রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখতেই তা করিনি। বিষয়টি নিয়ে ভালো আলোচনা হয়েছে—এভাবে বিতর্ক সৃষ্টি ও অপপ্রচার কাঙ্ক্ষিত নয়।’

পাঁচ দিন আগে বিএনপি প্রতিনিধি দল ইসির সঙ্গে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের বিষয়ে বৈঠক করে ‘বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ’ কর্মকর্তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছে। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, কোনোভাবে যেন বিতর্কিতদের ভোটের দায়িত্ব দেওয়া না হয়।
 
বৈঠকে জানানো হয়- নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বা পোলিং পারসোনাল তথা প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বমহলের নিকট চিহ্নিত এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের নিয়োগ দেওয়া যাবে না। যেমন- ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা ইত্যাদি।
 
গত রোববার (২৬ অক্টোবর) বিবৃতিতে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘গত ২৩ অক্টোবর দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ও ইবনে সিনা হাসপাতালসহ বিভিন্ন সেবামূলক ও অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নির্বাচনি দায়িত্ব না দেওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছে- তাতে আমি উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা মনে করি, এই দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অযৌক্তিক ও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এর পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।’
 
এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন-তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই বলে দাবি করেন তিনি।

বিএনপির এই ‘বিভ্রান্তিকর, অমূলক, ঠুনকো ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি আমলে না নেওয়ার জন্য ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের জেনারেল সেক্রেটারির ভাষ্য, নির্বাচন কমিশন যদি এ ধরনের ঠুনকো, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর দাবি গ্রহণ করে, তবে ভবিষ্যতে আরও অনেক অনর্থক দাবি উঠবে, যা নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।