জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে অবস্থানকালে সম্প্রতি ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম জিটিও-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়নি, তবে তাদের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এ অবস্থায় দলটি আপাতত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
এই বক্তব্য নিয়ে দেশে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
বুধবার (১ অক্টোবর) চ্যানেল 24-এর নিয়মিত আয়োজন ‘মুক্তবাক’ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমিতো মনে করি, বক্তব্যটি পুরোটা পড়লে আপনি স্পষ্ট হয়ে যাবেন। আমরা যখন কোনো বক্তব্যকে আংশিকভাবে বিশ্লেষণ করি, তখন কোন সুনির্দিষ্ট বার্তা পাই না। একটি ভাষণ, কোনো নথি বা ব্যক্তির উদ্ধৃতিকে তার পুরো প্রেক্ষাপটে পড়তে হয়। পুরোটা মিলিয়ে পড়লে দেখতে পাবেন, উনি (প্রধান উপদেষ্টা) এবারের নির্বাচনের ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন।’
শিশির মনির বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে এইভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে রাখা, এটি কিভাবে হবে? কোন প্রক্রিয়ায়, কতদিন লাগবে? আমরা দেখতে পাচ্ছি, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে একটি মামলার বিচার প্রায় শেষের দিকে এবং আমার প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী অক্টোবর মাসেই হয়তো একটি মামলা শেষ হবে। এরপর প্রশ্ন হচ্ছে, দল হিসেবে তাদের বিচার প্রক্রিয়াটি কী হবে। নতুন আইন অনুযায়ী দল হিসেবে বিচার করার বিকল্প রাখা হয়েছে। প্রসিকিউশন টিমের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, দল হিসেবে যদি আওয়ামী লীগকে বিচার করতে হয়, তাহলে যে ধরনের তদন্ত প্রক্রিয়া প্রয়োজন তা সম্পন্ন করে নির্ধারিত মামলা নম্বর দিয়ে তদন্ত শেষ করে ট্রাইবুনালের সামনে ফরমাল চার্জ দাখিল করতে হবে। তবেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এখনো দল হিসেবে কোনও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি; যা হয়েছে তা হলো বিভিন্ন ব্যক্তি পর্যায়ের মামলা।’
অনুষ্ঠানে উপস্থাপক মুকসিমুল আহসান আরও প্রশ্ন করেন শিশির মনিরকে। তিনি জানতে চান, দল হিসেবে বিচার প্রক্রিয়া কেমন হতে পারে, বিশেষ করে শেখ হাসিনার মামলায় ২৫ দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সেই মামলার রায়ের পর কি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেওয়া হবে? প্রক্রিয়াটি কী?
জবাবে শিশির মনির বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রক্রিয়া হলো, প্রথমে একটি অভিযোগ দায়ের হবে। অভিযোগের পর মিসকেস হবে। মিসকেসের পর তদন্ত হবে। তদন্ত শেষে ফরমাল চার্জ প্রসিকিউশনের কাছে জমা হবে। প্রসিকিউশন এটি কোর্টের সামনে ফরমাল চার্জ আকারে দাখিল করবে। কোর্ট প্রাথমিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে আমলে নিলে একটি আইসিটিবিডি মামলা নম্বর পড়বে। তখন থেকে মামলাটি শুরু হবে। এর আগে শুধুমাত্র তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তদন্ত শেষ করে আদালতের সামনে দাখিল করতে হবে; তবেই দল হিসেবে মামলা শুরু হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন কোনো প্রক্রিয়া এখনো করা হয়নি আমাদের জানা অনুযায়ী। বর্তমানে সাধারণ মামলা চলছে। একটি মামলা পর্যায়ক্রমে চলছে, যেখানে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী, অক্টোবর মাসের মধ্যে হয়তো একটি মামলার পরিপূর্ণ ফলাফল আসতে পারে। রায় কী হবে তা জানা যায়নি, তবে বিচার প্রক্রিয়ার সমাপ্তি আসবে।’
শিশির মনির বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, পুরো প্রেক্ষাপট একত্রে দেখলে বোঝা যায় এবারের নির্বাচনের বিষয়টি এখানে আলোচিত হয়নি। তবে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন নৌকা প্রতীক এবং আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াকে স্থগিত রেখেছেন। যদি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া স্থগিত থাকে এবং নৌকা প্রতীক স্থগিত থাকে, দল নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না। যদি সরকার এক্সিকিউটিভ অর্ডারের মাধ্যমে আগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে, তবে রিভিউ প্যানেলের কাছে আবেদন করতে হয়। রিভিউ প্যানেল যদি মনে করে পূর্বের সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত, তবে তারা তা করতে পারে। এটি আইন অনুযায়ী স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।’