এক সময় গেম খেলাকে বলা হতো ‘সময় নষ্ট’। আজ সেই গেমই অনেক তরুণের কাছে স্বপ্নের পেশা। মাঠ, বল বা স্টেডিয়াম ছাড়াই প্রতিযোগিতা, এই নতুন ক্রীড়ার নাম ই-স্পোর্টস। বিশ্বজুড়ে এটি এখন বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি, আর ধীরে ধীরে বাংলাদেশেও ই-স্পোর্টস জায়গা করে নিচ্ছে তরুণদের ক্যারিয়ার ভাবনায়।
বাংলাদেশে ই-স্পোর্টসের উত্থান:
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের বিস্তার ই-স্পোর্টসের পথ সহজ করেছে। পাবজি, ফ্রি ফায়ার, ভ্যালোরেন্ট, ফিফা কিংবা ডোটা, এই গেমগুলো এখন শুধু বিনোদন নয়, প্রতিযোগিতার প্ল্যাটফর্ম। অনলাইন টুর্নামেন্ট, স্থানীয় গেমিং কমিউনিটি এবং ফেসবুক-ইউটিউব লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে অনেক তরুণ নিজেদের দক্ষতা তুলে ধরছে।
বিশেষ করে শহরকেন্দ্রিক তরুণদের পাশাপাশি মফস্বল এলাকাতেও ই-স্পোর্টসের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। কম খরচে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকায় এটি অনেকের কাছে সহজলভ্য একটি ক্রীড়া মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
ভার্চুয়াল খেলা, বাস্তব আয়:
ই-স্পোর্টস এখন শুধু খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যারা নিয়মিত ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারে, তারা টুর্নামেন্ট পুরস্কার, স্পন্সরশিপ ও অনলাইন স্ট্রিমিং থেকে আয় করছে। কেউ কেউ গেমার হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে, আবার কেউ কনটেন্ট ক্রিয়েটর, বিশ্লেষক বা স্ট্রিমার হিসেবে নিজস্ব দর্শক তৈরি করছে।
এই খাতে শুধু খেলোয়াড় নয়, কোচ, টিম ম্যানেজার, ভিডিও এডিটর ও ইভেন্ট অর্গানাইজারদেরও জায়গা তৈরি হচ্ছে। ফলে ই-স্পোর্টস ধীরে ধীরে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্রীড়া-অর্থনীতির রূপ নিচ্ছে।
চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা:
তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জও কম নয়। এখনো ই-স্পোর্টসকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্রীড়া হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। নিয়মিত জাতীয় লিগ, নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও স্পষ্ট নীতিমালার অভাব রয়েছে। অনেক পরিবার এখনও গেমিংকে পড়াশোনার প্রতিবন্ধক হিসেবেই দেখে।
এ ছাড়া উচ্চগতির ইন্টারনেট, উন্নত ডিভাইস এবং মানসম্মত প্রশিক্ষণের অভাব অনেক প্রতিভাবান তরুণের পথ আটকে দিচ্ছে।
সম্ভাবনার জায়গা কোথায়:
যদি সরকার ও ক্রীড়া সংস্থাগুলো ই-স্পোর্টসকে গুরুত্ব দেয়, তবে এটি যুবসমাজের জন্য বড় সুযোগ হয়ে উঠতে পারে। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে প্রতিযোগিতা, জাতীয় পর্যায়ে লিগ এবং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা গেলে বাংলাদেশের তরুণরা বৈশ্বিক ই-স্পোর্টস মঞ্চে জায়গা করে নিতে পারে।
বিশ্ব যখন ই-স্পোর্টসকে অলিম্পিক আলোচনার টেবিলে আনছে, তখন বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকলে সুযোগ হারানোর আশঙ্কা থেকেই যায়।
সমাপ্তি:
ই-স্পোর্টস প্রমাণ করেছে, খেলাধুলার সংজ্ঞা বদলে গেছে। মাঠের ঘাসে না দৌড়েও দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা যায়। সঠিক দিকনির্দেশনা ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পেলে ই-স্পোর্টস বাংলাদেশের তরুণদের জন্য শুধু খেলা নয়, বরং একটি টেকসই ক্যারিয়ারের পথ হয়ে উঠতে পারে। খেলাধুলা পাতায় ই-স্পোর্টস এখন আর ভবিষ্যতের গল্প নয়, এটি বর্তমানের বাস্তবতা।