খেলার খবর

বন্ধুত্বের টুর্নামেন্টে বিবাদের ছায়া: আইনি নোটিশ, বয়কট

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘৯৮-২০০০ ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট’ ঘিরে প্রহসনের অভিযোগ, বয়কট নারায়ণগঞ্জ গ্ল্যাডিয়েটর্সের

বন্ধুত্ব আর স্মৃতিচারণার আবহে শুরু হওয়া ক্রিকেট আসরেই নেমে এসেছে বিতর্কের কালো মেঘ। ‘৯৮-২০০০ ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট’ আয়োজন ঘিরে একের পর এক অনিয়ম ও প্রহসনের অভিযোগ সামনে আসছে। বিষয়টি এখন কেবল মাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; গড়িয়েছে আইনি লড়াই পর্যন্ত। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে টুর্নামেন্ট বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজি দল ‘নারায়ণগঞ্জ গ্ল্যাডিয়েটর্স’।

এসএসসি ১৯৯৮, ব্যাচের উদ্যোগে দেশব্যাপী বিভিন্ন ক্রীড়া আয়োজনের ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ঢাকায় শুরু হয় এই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। কিন্তু উদ্বোধনী দিনেই ঘটে অপ্রত্যাশিত ঘটনা। মাঠে গড়ানোর আগেই একটি ম্যাচ ঘিরে শুরু হয় তীব্র হট্টগোল, যা শেষ পর্যন্ত বয়কটে রূপ নেয়।

এদিকে টুর্নামেন্ট আয়োজকদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা ও বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন তৌকির আহমেদ ভূঁইয়া। এ অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি টুর্নামেন্টের অন্যতম আয়োজক এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মুশফিকুল ইসলামের কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। নোটিশে বলা হয়, বৈধ সদস্যপদ থাকা সত্ত্বেও তাকে খেলায় অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ক্রিকেটের আগেও আয়োজকদের বিরুদ্ধে ফুটবল টুর্নামেন্টে একই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল।

শুক্রবার গ্রুপ পর্বে ‘নারায়ণগঞ্জ গ্ল্যাডিয়েটর্সে’র বিপক্ষে মাঠে নামার কথা ছিল ‘জিনিয়াস ৯৮’-এর। তবে ম্যাচ শুরুর আগেই জটিলতা তৈরি হয় গ্ল্যাডিয়েটর্সের খেলোয়াড় মো. গোলাম শাহরিয়াকে ঘিরে। ‘গ্লোরিয়াস ৯৮’ দাবি করে, ওই ক্রিকেটার তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। যদিও সেই দাবির পক্ষে কোনো শক্ত প্রমাণ দেখাতে পারেনি দলটি। প্রমাণ হিসেবে কেবল মোবাইল ব্যাংকিংয়ের একটি লেনদেনের স্ক্রিনশট দেখানো হয়।

অভিযোগ অস্বীকার করে মো. গোলাম শাহরিয়া জানান, তার অজান্তেই ওই লেনদেন করা হয়েছিল। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ গ্ল্যাডিয়েটর্সের দাবি, নির্ধারিত নিয়ম ও কাঠামো অনুসরণ করেই খেলোয়াড় নিবন্ধন করা হয়েছিল। এরপরও আয়োজকদের পক্ষ থেকে মনগড়া সিদ্ধান্তে ওই ক্রিকেটারকে খেলতে না দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এই ‘প্রহসনের’ প্রতিবাদেই তারা টুর্নামেন্ট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়।

টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিনে মাঠে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি নোয়াখালী এক্সপ্রেসের প্রধান কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। খেলোয়াড় জটিলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী কোনো ক্রিকেটার যদি একটি দলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন, তাহলে তিনি সেই দলেরই খেলোয়াড়। অন্য দলে খেলতে হলে অবশ্যই অনাপত্তিপত্র বা এনওসি প্রয়োজন।’

খালেদ মাহমুদ সুজন আরও বলেন, এই নিয়ম শুধু ক্রিকেট নয়- ফুটবল, হকি কিংবা অন্যান্য খেলাতেও একইভাবে প্রযোজ্য। দলবদলের সময় অনেক খেলোয়াড় একাধিক ক্লাব থেকে অর্থ গ্রহণ করে জটিলতা তৈরি করেন। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটি বিষয়টি যাচাই করে দেখে। আগে যে দলের সঙ্গে বৈধ চুক্তি, সেই দলেই খেলতে দেওয়া হয়। প্রয়োজনে অর্থ ফেরত বা জরিমানার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।

তবে কোনো অবস্থাতেই একজন খেলোয়াড়কে খেলা থেকে পুরোপুরি বিরত রাখা যায় না, যদি না তিনি গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকেন। কারণ ফেডারেশন বা আয়োজক সংস্থার মূল দায়িত্ব খেলার আয়োজন নিশ্চিত করা, খেলোয়াড়দের মাঠের বাইরে রাখা নয়।

এই জায়গাতেই ‘৯৮-২০০০ ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট’, এর আয়োজকদের ভূমিকা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। নিয়মের বদলে খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত এবং স্বচ্ছতার অভাব পুরো আয়োজনকেই এনে দিয়েছে বিতর্কের কেন্দ্রে।