গত শতাব্দীর শেষ দশক থেকে চলতি শতাব্দীর প্রথম দশক ছিল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ। এ সময় একই দলে খেলেছেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা ও ইতিহাসের সেরা লেগ স্পিনার হিসেবে পরিচিত শেন ওয়ার্ন। স্বর্ণযুগের দলে আরও ছিলেন ব্রেট লি, জেসন গিলেস্পির মতো ফাস্ট বোলার। সেই দলের অন্যতম তারকা ব্রেট লি অবশ্য নিজের প্রজন্মের চেয়েও এগিয়ে রাখছেন বর্তমান বোলিং আক্রমণকে। এমনকি তার চোখে এই প্রজন্মের বোলিং লাইনআপই অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের সর্বকালের সেরা।
অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ব্রেট লির মতে, প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বাধীন বর্তমান বোলাররা এই শতকের শুরুর দশকে তার (ব্রেট লি) নিজের দলকেও ছাড়িয়ে গেছে।
চলতি অ্যাশেজের প্রথম দুই টেস্টে জোড়াতালি দিয়ে দল সাজানোর পর অ্যাডিলেডে প্রায় পূর্ণ শক্তির বোলিং আক্রমণ ফিরে পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। দলে ফিরছেন প্যাট কামিন্স ও নাথান লায়ন, তারা সঙ্গী হবেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা মিচেল স্টার্কের। তবে জশ হ্যাজলউড চোটের কারণে এবারের অ্যাশেজ থেকেই ছিটকে পড়েছেন। এদিকে, স্কট বোল্যান্ডও ২০২১ সালে টেস্ট অভিষেকের পর থেকে প্রমাণ করে চলেছেন–তিনি ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাক-আপ বোলার।
কামিন্স, স্টার্ক, লায়ন ও হ্যাজলউড—এই চারজন মিলে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৩৮৯টি টেস্ট ম্যাচ এবং সর্বমোট শিকার করেছেন ১৫৮৬টি উইকেট। চারজনের মধ্যে তিনজন এরইমধ্যে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন, আর হ্যাজলউডের উইকেট সংখ্যা ২৯৫টি, চোট কাটিয়ে ফিরলে সেই তালিকায় যোগ দেয়া তার জন্যও অল্প সময়ের ব্যাপার ।
এই চারজন একসঙ্গে খেলেছেন এমন ৩৫টি টেস্টে, অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ২২টি, হেরেছে ৯টি এবং ড্র হয়েছে ৪টি ম্যাচ। একই একাদশে থেকে নেওয়া তাদের ৫৬৭টি উইকেটও একটি রেকর্ড। এই পরিসংখ্যানে বোল্যান্ড নেই, তবে তার ৬৯টি উইকেট ও ১৮.১৭ গড় গত ৯০ বছরে যেকোনো বোলারের মধ্যে সেরা টেস্ট গড় হিসেবে বিবেচিত।
২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম পছন্দের বোলিং আক্রমণ গ্লেন ম্যাকগ্রা, শেন ওয়ার্ন, জেসন গিলেস্পি ও ব্রেট লি—সাধারণত গ্রেট বোলিং আক্রমণের মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়। তারা একসঙ্গে খেলেছেন ১৬টি টেস্ট, যার মধ্যে জিতেছিলেন ১০টি, এবং সর্বমোট ১৮৪২টি টেস্ট উইকেট নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্যের অন্যতম নায়ক ছিলেন।
তবে, ব্রেট লির বিশ্বাস, বর্তমান দলটি এখন তাদেরও ছাড়িয়ে গেছে। কায়ো স্পোর্টসের হয়ে ধারাভাষ্যে থাকা লি এএপিকে বলেন, 'আমার মনে হয় ওরাই সর্বকালের সেরা। যুগ ভিন্ন, তুলনা করাও কঠিন, কিন্তু আমি ওদের আমাদের ওপরে রাখব। পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায়—এতজন বোলার একসঙ্গে ২৫০-এর বেশি টেস্ট উইকেট নিয়েছে, এমনটা আগে কখনও হয়নি।'
লি যোগ করেন, 'স্কট বোল্যান্ডকে ধরলে, সে অনেকটা মাইকেল ক্যাসপ্রোভিচের মতো; খুব বেশি সুযোগ পায়নি, কিন্তু দারুণ বোলার। এই বোলাররা এতটাই ভালো যে, ওরা অবসর নেওয়ার পরই অস্ট্রেলিয়ান জনতা বুঝবে ওরা আসলে কতটা অসাধারণ ছিল।'
গ্রীষ্মকালীন সিরিজের আগে লি'র এই মন্তব্য প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্যাট কামিন্স দলের বৈচিত্র্যকেই শক্তির মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরেন। কামিন্স বলেন, 'ওনার কাছ থেকে এমন কথা শোনা দারুণ ব্যাপার। আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের ক্যারিয়ারগুলো একই সময়ে মিলেছে। অন্যদের পাশে না থাকলে আমার ক্যারিয়ার এমন হতো না।'
অস্ট্রেলিয়ার এই অধিনায়ক আরও বলেন, 'ওরাই আমাকে এগিয়ে যেতে বাধ্য করে, ওরাই আমার সেরা কোচ। নাথের (লায়ন) নিয়ন্ত্রণ, স্টার্কির বাঁ হাতি ভিন্নতা, জশের বাউন্স আর সুইং—সব মিলিয়ে আমি আরও সৃজনশীল হতে পারি। আমাদের শক্তিগুলো একে অপরের সঙ্গে দারুণভাবে মিশে যায়।'
মিচেল স্টার্ক অবশ্য মনে করিয়ে দেন, যুগের তুলনা করা কঠিন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ক্রিকেট বদলে যায়, আর গত পাঁচ বছরে অস্ট্রেলিয়ার পিচগুলো বোলিংয়ের জন্য তুলনামূলক সহজ হয়েছে। তবে, এর সঙ্গে এসেছে সূক্ষ্ম চ্যালেঞ্জও—অনেক সময় বর্তমান বোলারদেরই দলকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখতে বা কঠিন অবস্থা থেকে বের করে আনতে হয়।
স্টার্ক বলেন, 'পাঁচ-ছয় বছর আগে মেলবোর্ন ছিল বোলারদের জন্য কবরস্থান, এখন সেটা অনেক বেশি সহায়ক। আমরা এখন ওয়াকার বদলে অপটাস স্টেডিয়ামে খেলি, এসসিজিতে কী পাবেন সেটা নিশ্চিত নয়। তাই দল হিসেবে মানিয়ে নিতে হয়। তবু আমরা জানি, এই গ্রুপটা কতটা বিশেষ। একই রাজ্য থেকে চারজন বোলার এতদিন একসঙ্গে খেলে এত সাফল্য পেয়েছে—এটা খুবই বিরল।স্কটি (বোল্যান্ড) বহু বছর ধরেই এই দলের অংশ। আমরা সত্যিই খুব ভাগ্যবান।'