বিশ্বব্যাপী পিসি বিক্রি গত কয়েক বছর ধরে নিম্নমুখী। মহামারি-পরবর্তী সময়, অর্থনৈতিক চাপ ও স্মার্টফোনের ওপর নির্ভরতার ফলে নতুন কম্পিউটার কেনার প্রবণতা কমেছে। ঠিক এমন সময়েই এসেছে উইন্ডোজ ১২, মাইক্রোসফটের নতুন প্রজন্মের অপারেটিং সিস্টেম, যা এআই-কে কেন্দ্র করে তৈরি। প্রশ্ন হলো—এটি কি সত্যিই পিসি মার্কেটে নতুন গতি আনতে পারছে?
উইন্ডোজ ১২: এআই-কে কেন্দ্র করে নতুন যাত্রা
মাইক্রোসফট এখন পুরো ইকোসিস্টেমকে “AI-first OS” হিসেবে গড়ে তুলছে।
উইন্ডোজ ১২-এর তিনটি বৈশিষ্ট্য সবচেয়ে আলোচনায়—
১) বিল্ট-ইন এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট (Copilot++)
নোট নেওয়া, ডকুমেন্ট সারাংশ করা, কোড সাজেশন, ইমেজ এডিট, ভয়েস কমান্ড—সবকিছুই এখন সিস্টেম-লেভেলে যুক্ত।
এটি আগে আলাদা অ্যাপ বা ব্রাউজার নির্ভর ছিল; এখন সিস্টেমের ভেতরেই কাজ করছে।
২) ডাইনামিক ডেস্কটপ ইন্টারফেস
ডেস্কটপ আপনার কাজ, সময়, অভ্যাস অনুযায়ী নিজে থেকে বদলে যায়।
যেমন—ভিডিও এডিট করলে টুল সাজেশন, লেখালেখি করলে ফোকাস মোড, মিটিং থাকলে ক্যালেন্ডার হাইলাইট দেখায়।
৩) এআই-অপ্টিমাইজড হার্ডওয়্যার সাপোর্ট
নতুন NPU (Neural Processing Unit)– সমৃদ্ধ প্রসেসরগুলোর জন্য উইন্ডোজ ১২ আলাদা অপ্টিমাইজেশন দিয়েছে।
এগুলোর কারণে—
ব্যাটারি লাইফ বাড়ছে
গ্রাফিক্স পারফরম্যান্স উন্নত
রিয়েল-টাইম কথোপকথন অনুবাদ
ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ বাতিল
এসব কাজ আরও মসৃণ হচ্ছে।
পিসি মার্কেটে এর প্রভাব—বিক্রি কি বাড়ছে?
বিশ্বজুড়ে পিসি বিক্রির দুটি বড় প্রবণতা দেখা যাচ্ছে-
১) এআই-পিসি (AI PC) ক্যাটাগরি জনপ্রিয় হচ্ছে
নতুন ল্যাপটপগুলো এখন শুধু র্যাম–স্টোরেজ নয়, NPU পারফরম্যান্স দিয়ে পরিমাপ করা হচ্ছে।
এতে পিসি নির্মাতারা,
নতুন ডিজাইন
দ্রুত প্রসেসর
উন্নত ব্যাটারি
বেশি এআই ফিচার
এর দিকে ঝুঁকছে।
ফলে বাজারে আবার নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
২) প্রতিষ্ঠানগুলো আপগ্রেডে আগ্রহী
কর্পোরেট সেক্টর এআই-সক্ষম পিসির দিকে ঝুঁকছে, কারণ রিমোট ও হাইব্রিড অফিস ব্যবস্থায় এগুলোর কার্যকারিতা বেশি।
ব্যবসায়িকভাবে—ডাটা অ্যানালিটিক্স, কন্টেন্ট জেনারেশন, মেইল ম্যানেজমেন্ট, সাইবার সিকিউরিটি—এমন সব প্রক্রিয়া এখন আরও দ্রুত হচ্ছে।
ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতায় আসল পরিবর্তন কী?
সিস্টেম এখন “আপনার স্টাইলে” কাজ শিখে নেয়
ব্যাকগ্রাউন্ড টাস্ক নিজে থেকে অপ্টিমাইজ করে
গেমিং পারফরম্যান্স স্থিতিশীল
ভিডিও কনফারেন্সিং অনেক বেশি স্মার্ট
ডাটার নিরাপত্তায় এআই-চালিত রিয়েল-টাইম মনিটরিং
এগুলো মাইক্রোসফটকে শুধু আরেকটি আপডেট নয়, বরং “নতুন কম্পিউটিং যুগের” সূচনা হিসেবে তুলে ধরছে।
বাংলাদেশের পিসি বাজারে এর প্রভাব
বাংলাদেশে পিসি বিক্রি সাধারণত-
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
ফ্রিল্যান্সার
কর্পোরেট কর্মী
গেমার
এই চার গোষ্ঠীর ওপর নির্ভরশীল
উইন্ডোজ ১২ আসার পর-
✔ বাজেট ল্যাপটপের চেয়ে এআই-ফোকাসড মিড-রেঞ্জ মডেলগুলো বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে
✔ ফ্রিল্যান্সাররা প্রোডাক্টিভিটি টুলে সুবিধা পাচ্ছেন
✔ গেমাররা নতুন GPU–CPU কম্বিনেশনে স্যুইচ করছেন
✔ অফিস পরিবেশে নতুন হার্ডওয়্যারের চাহিদা বাড়ছে
তবে দাম বৃদ্ধি এখনও বড় বাধা-NPU-যুক্ত চিপ ও নতুন হার্ডওয়্যারের কারণে এআই-পিসির দাম তুলনামূলক বেশি।
সমালোচনা ও বিতর্ক
১) এআই ফিচারের জন্য শক্তিশালী হার্ডওয়্যার প্রয়োজন
পুরনো পিসিতে সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা পাওয়া যাচ্ছে না।
ফলে নতুন হার্ডওয়্যার কেনা প্রায় বাধ্যতামূলক।
২) প্রাইভেসি নিয়ে উদ্বেগ
এআই-ভিত্তিক ট্র্যাকিং ও ব্যবহারের প্যাটার্ন বিশ্লেষণ অনেকেই স্বস্তিতে নিতে পারছেন না।
৩) বাগ ও সামঞ্জস্য সমস্যা
যেকোনো নতুন OS-এর মতো কিছু ত্রুটি ও কম্প্যাটিবিলিটি সমস্যা এখনও আছে।
উপসংহার:
উইন্ডোজ ১২ কি পিসি বাজারকে বদলে দিচ্ছে?
সংক্ষেপে বলা যায়,
হ্যাঁ, কিন্তু ধীরে।
উইন্ডোজ ১২ বাজারে “নতুন আকর্ষণ” তৈরি করেছে, বিশেষ করে এআই-পিসি ট্রেন্ডের কারণে।
তবে এটি এখনো পুরো পিসি বাজারকে উল্টে দেওয়ার মতো পরিবর্তন আনেনি- বরং একটি দীর্ঘমেয়াদী রূপান্তরের সূচনা করেছে।
আগামী ২/৩ বছরেই বোঝা যাবে, এআই চালিত অপারেটিং সিস্টেম কি সত্যিই মানুষের কম্পিউটার ব্যবহারের অভ্যাস বদলে দিতে পারে কি না।