আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আমরা সক্রিয় হচ্ছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আমাদের সচেতনতা ও সরব দৃষ্টিভঙ্গির চরম ঘাটতি রয়েছে। যার ফলে, ফেইসবুক, টিকটক, ইন্সটাগ্রামসহ ইউটিউবের মতো প্লাটফর্মেও মৌলিক নিরাপত্তা ঘাটতি চরমে উঠেছে।
যার ফলে বিনোদন উপভোগকে ছাপিয়ে ব্যহত হচ্ছে সুস্থ-সুন্দর জীবন-যাপন ও সামাজিক মর্যাদা। এমনকি আত্মহত্যার কারণ হিসেবে সবচেয়ে বেশি দায়ী হয়ে দাঁড়িয়েছে এই প্রযুক্তির অজানা অন্ধকার দিকসমূহ।
সুতরাং, তথ্য-প্রযুক্তির এই সামুদ্রিক যুগে প্রতি পদক্ষেপে আমাদের সচেষ্ট থাকা উচিৎ কিছু উদ্বেগ এবং সুরক্ষা পদক্ষেপ সম্পর্কে।
চলুন দেখে নিই-
মূল উদ্বেগসমূহ-
ভুয়া সংবাদ ও গুজব:
ইউনিসেফের এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়া তরুণ ব্যবহারকারী ভুয়া সংবাদ ও গুজবকে সামাজিক মাধ্যমে মানসিক চাপের সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
সাইবার বুলিং ও হয়রানি:
অনলাইন হয়রানি একটি গুরুতর সমস্যা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের তদন্তে দেখা গেছে, অনলাইন হয়রানি ও বুলিংয়ের শিকার ৮০% ভুক্তভোগীই ১৪ থেকে ২২ বছর বয়সী নারী।
ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার (ডেটা প্রাইভেসি):
অনেক ব্যবহারকারীই ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ঝুঁকির ব্যাপারে সচেতন নন। হ্যাকাররা ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য ব্যবহার করে ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে এবং ব্ল্যাকমেইলিং করে থাকে।
মানসিক স্বাস্থ্য ও আসক্তি:
অতিরিক্ত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, ঘুমের সমস্যা এবং একাকীত্বের অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়।
বাস্তব জীবনের ঝুঁকি:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া অপরাধের ঘটনাও ঘটেছে, যেমন ধর্ষণের পর হত্যা।
সুরক্ষা পদক্ষেপ-
ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা । কিছু মৌলিক নিরাপত্তা টিপস মেনে চললে এই ঝুঁকিগুলো কমানো সম্ভব-
গোপনীয়তা সেটিংস (Privacy Settings) ব্যবহার করুন:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিটি অ্যাকাউন্টের প্রাইভেসি সেটিংস শক্তিশালী করুন। আপনার পোস্ট, ছবি বা ব্যক্তিগত তথ্য কে দেখতে পারবে, তা সীমাবদ্ধ করুন।
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ও টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA):
শক্তিশালী ও অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং বাড়তি নিরাপত্তার জন্য টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করুন।
অপরিচিতের বন্ধুত্ব গ্রহণ না করা:
অপরিচিত বা সন্দেহজনক প্রোফাইল থেকে আসা বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
সচেতন থাকুন:
অনলাইনে দেওয়া আপনার তথ্যের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। আপনার অবস্থান, আর্থিক তথ্য বা অন্যান্য সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করা এড়িয়ে চলুন।
অপ্রত্যাশিত লোভনীয় অফার:
হঠাৎ টাকা পাওয়া বা অফার পাওয়ার মেসেজে দেওয়া লিংক থেকে সবসময়ই সচেষ্ট থাকতে হবে। এমন লিংকে ক্লিক করা মাত্রই আপনার ডিভাইসের সকল এক্সেস পেয়ে যাবে হ্যাকার
আইনি সহায়তা নিন:
যদি কোনো হয়রানি বা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হন, তাহলে দেরি না করে বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার ক্রাইম হেল্প ডেস্কে অভিযোগ করুন বা আইনি সহায়তা নিন।
এধরনের মেসেজ থেকে দূরে থাকুন
সর্বোপরিঃ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিরাপদ রাখতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি।
ডিজিটাল সাক্ষরতা (Digital Literacy) বাড়ানোর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবার থেকে উদ্যোগী হতে হবে, যাতে নতুন প্রজন্ম ও সব ব্যবহারকারী একটি নিরাপদ ডিজিটাল জীবন উপভোগ করতে পারেন।