ফ্লেক্সিবল OLED ডিসপ্লে
স্মার্টফোন বাজারে একের পর এক চমকে দেওয়া প্রযুক্তি এসেছে- নচ, পপ-আপ ক্যামেরা, ফুল ডিসপ্লে, ফোল্ডেবল স্ক্রিন। তবে এসবকে ছাড়িয়ে এখন আলোচনায় রোলেবল ফোন, যেখানে স্ক্রিন চাইলে বড় হয় আবার চাইলে হাতের তালুর মতো ছোট হয়ে যায়। প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৫-২৬ সালেই এই ক্যাটাগরি মূলধারার চাহিদা তৈরি করে দিতে পারে।
কী এই রোলেবল ফোন?
রোলেবল ফোনে ডিসপ্লে লুকানো থাকে রোল করা অবস্থায়। ব্যবহারকারী স্ক্রিন টানলেই বা সাইড ফ্রেম স্লাইড করলেই ডিসপ্লে প্রসারিত হয়—যেমন ৬.৫ ইঞ্চি থেকে ৮ ইঞ্চিতে। ভাঁজযোগ্য ফোনের মতো মোটা ভাঁজ লাইন থাকে না; বরং এটি একটানা মসৃণ স্ক্রিন অভিজ্ঞতা দেয়।
এই প্রযুক্তির মূল কেন্দ্রে রয়েছে অল্ট্রা-ফ্লেক্সিবল OLED, যা ভাঁজ নয়, বরং রোলিং মেকানিজমে কাজ করে।
কেন এটি পরবর্তী বড় ট্রেন্ড?
১) পাতলা–হালকা ডিভাইস: ফোল্ডেবল ফোনের তুলনায় এর বডি অনেকই পাতলা থাকে।
২) বড় স্ক্রিনের চাহিদা: ভিডিও, মাল্টিটাস্কিং, গেমিং—সবকিছুতে বড় ডিসপ্লে লাভজনক, কিন্তু বড় ফোন বহন করা ঝামেলা। রোলেবল ফোন দুই সুবিধাই দেয়।
৩) ফোল্ড লাইনের ঝামেলা নেই: ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ—ফোল্ডেবল স্ক্রিনে ক্রীজ বা ভাঁজ দাগ। রোলেবল প্রযুক্তিতে তা থাকে না।
৪) ব্যাটারি ও পারফরম্যান্স অপ্টিমাইজড: স্ক্রিন বাড়ার সাথে সাথে পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট অটোমেটিকভাবে সামঞ্জস্য করা হয়।
ফোল্ডেবল স্ক্রিনে ক্রীজ বা ভাঁজ দাগ, রোলেবল প্রযুক্তিতে তা থাকে না
কারা এগিয়ে রোলেবল ফোন প্রযুক্তিতে?
বিভিন্ন ব্র্যান্ড ইতিমধ্যেই প্রোটোটাইপ দেখিয়েছে। কিছু ব্র্যান্ড ২০২৫ সালে বাণিজ্যিক লঞ্চের ঘোষণা দিয়েছে।
টেক দুনিয়ার ধারণা—আগামী বছরের মধ্যেই ২ থেকে ৩টি বড় কোম্পানি প্রথম লাইনে থাকবে, বিশেষত যারা ফোল্ডেবল বাজারে আগেই অভিজ্ঞ (ডিসপ্লে প্রযুক্তি, হিঞ্জ, ফ্লেক্সিবল OLED সরবরাহ শৃঙ্খল ইত্যাদি)।
গ্রাহকদের সম্ভাব্য সুবিধা-
ট্যাবলেট অভিজ্ঞতা, কিন্তু ফোন সাইজে
মাল্টিটাস্কিং—দুই/তিন অ্যাপ পাশাপাশি ব্যবহার
স্ক্রিন-টু-বডি অনুপাত বাড়ায় কনটেন্ট উপভোগ আরও আরামদায়ক
ফিল্ম দেখা, ক্রিয়েটিভ কাজ, ই-রিডিং—সবই সহজ
কোথায় চ্যালেঞ্জ?
যে প্রযুক্তির সম্ভাবনা যত, সীমাবদ্ধতাও ততই বাস্তব-
রোলিং মেকানিজমের টেকসই হওয়া
পানি–ধুলো প্রতিরোধ
রোলিং মোটরের আয়ু
খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা
স্ক্রিন রিপেয়ার করলে খরচ খুবই ব্যয়বহুল হতে পারে
প্রথম দিকে দাম অবশ্যই প্রিমিয়াম সেগমেন্টে থাকবে।
বাংলাদেশের বাজারে প্রভাব
বাংলাদেশে বর্তমানে ফোল্ডেবল ফোনের চাহিদা বাড়ছে। ই-কমার্স থেকে শোরুম—সবখানে এই মডেলগুলো জনপ্রিয়। রোলেবল ফোন আসলে এসব ব্যবহারকারীদের কাছেই আকর্ষণীয় হবে।
মোবাইল ব্যবসায়ীদের মতে, বাজার প্রস্তুত—কিন্তু দাম এবং সার্ভিসিং সাপোর্টই হবে মূল বাধা।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোলেবল ফোন মূলধারায় পৌঁছালে স্মার্টফোনের ডিজাইনে নতুন যুগ শুরু হবে। বড় ব্যাটারি, উন্নত স্ক্রিন প্রোটেকশন, লাইটওয়েট মেটেরিয়াল- সব মিলিয়ে পরবর্তী ৫ বছর স্মার্টফোন বাজারে টেকনোলজিক্যাল রেভল্যুশনের সময়।