ঢাকার বারিধারা ডিপ্লোমাটিক জোনে আজ শনিবার মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশ আর্ট গ্যালারীর পুনরুদ্বোধন অনুষ্ঠান। দেশের শিল্প-সংস্কৃতি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এ গ্যালারীর নতুন যাত্রা শিল্পানুরাগীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
উদ্বোধনী আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট বাংলাদেশী শিল্পী ও কার্টুনিস্ট প্রফেসর এমেরিটাস ড. রফিকুন নবী, প্রফেসর মইনুদ্দিন খালেদ (শিল্পী ও শিল্প সমালোচক), শিল্পী রঞ্জিত দাস, যুক্তরাষ্ট্রের ওবারলিন কলেজ অ্যান্ড কনজারভেটরির ডেভিড ওর প্রফেসর অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ মো. রুমি শামমিন, বিদেশী কূটনীতিক, বিভিন্ন দূতাবাসের শিল্পপ্রেমী, ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলম, গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমানসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত তরুণ শিল্পানুরাগীরা।
১৯৬৯ সালে শিল্পপ্রেমী ইউসুফ সাঈদের উদ্যোগে বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতির বিপ্লবের সময়ে দেশ আর্ট গ্যালারী প্রতিষ্ঠিত হয়। গ্যালারীর নাম “দেশ” স্বদেশপ্রেমের প্রতীক। এটি মাস্টার শিল্পীদের কাজের পাশাপাশি উদীয়মান শিল্পীদের কাজ প্রদর্শন ও বিক্রির মাধ্যমে জনগণের শিল্পরুচি প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। দেশ গ্যালারীর ইতিহাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহার ঐতিহাসিক আত্মদানের সঙ্গে জড়িত, যিনি ১৯৬৯ সালের ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হন। তাঁর কন্যা সাবিনা জোহা খান পিতার উত্তরাধিকার ও প্রতিষ্ঠাতা ইউসুফ সাঈদের দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান জানিয়ে এই গ্যালারীর পুনর্জন্মের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বাড়ি নং ১৩/১, সড়ক ১২, বারিধারা ডিপ্লোমাটিক জোন, ঢাকা, বাংলাদেশ এ আয়োজিত, সুপরিকল্পিত এই উদ্বোধনী প্রদর্শনী দুটি ভাগে বিভক্ত, যেখানে জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, এস এম সুলতানের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের বিরল কাজের পাশাপাশি ১৯৫০-এর দশকের বিশিষ্ট শিল্পীদের সৃষ্ট শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। ৪০ জন প্রখ্যাত ও উদীয়মান শিল্পীর ৫০টিরও বেশি চিত্রকর্ম এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে, যা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ শিল্প ঐতিহ্যকে বহন করছে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রফেসর এমেরিটাস ড. রফিকুন নবী দেশ আর্ট গ্যালারীর ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরেন, তিনি বলেন, “দেশ আর্ট গ্যালারী ১৯৬০-এর দশকে বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতি বিপ্লবের সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি তরুণ শিল্পীদের জন্য প্রেরণার স্থান এবং বাংলাদেশী শিল্পকে বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করার একটি মাধ্যম।” তিনি তরুণ শিল্পীদের তাদের কাজ বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরে বাংলাদেশের শিল্পী পরিচয় বজায় রাখতে উৎসাহিত করেন।
মো. রুমি শামমিন শিল্পের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা বলেন: “প্রতিটি তুলির টান শিল্পীর আবেগ, আনন্দ ও দুঃখকে ধারণ করে। দেশ আর্ট গ্যালারীর এই উদ্যোগ তরুণ শিল্পপ্রেমীদের জন্য শিল্পকে খাঁটি ও ব্যক্তিগতভাবে উপভোগ করার একটি প্রশংসনীয় মাধ্যম হতে যাচ্ছে।”
প্রফেসর মইনুদ্দিন খালেদ গ্যালারীর ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে বলেন: “বাংলাদেশী শিল্প তার অনন্য রচনাশৈলীর জন্য বিশ্বে স্বতন্ত্র। দেশ আর্ট গ্যালারী মুক্তিযুদ্ধের আগে আমাদের শিল্প বিপ্লবের ঐতিহাসিক অংশের প্রতিনিধিত্ব করে।” তিনি এর পুনর্জন্মের প্রশংসা করেন।
শিল্পী রঞ্জিত দাস আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা দেশ আর্ট গ্যালারীর আগামী যাত্রার ব্যাপারে আশাবাদী এবং সব ধরনের সহযোগিতায় এর পাশে থাকব।”
গ্যালারীর প্রতিষ্ঠাতা সাবিনা জোহা খান, তার আবেগপূর্ণ বক্তব্যে বলেন, “শিল্পী ও অতিথিদের স্মৃতিচারণ এই মুহূর্তকে অমূল্য ও মহাত্মপূর্ণ করে তুলেছে। আমার পিতার মৃত্যুর পর মুক্তিযুদ্ধের সময় এই গ্যালারী আমার জন্য একটি আশ্রয়স্থল ছিল। বর্তমানে আমরা একটি নতুন দল নিয়ে শুরু করেছি, যারা বাংলাদেশী শিল্প ও সংস্কৃতিকে মর্যাদা ও সততার সাথে দেশে ও বিশ্বে প্রচার করতে চায় এবং একই সঙ্গে এই উদ্যোগকে সুদূরপ্রসারী করতে চায়। দেশ আর্ট গ্যালারী তরুণ শিল্পীদের জন্য তাদের কল্পনাকে নতুনভাবে উপলব্ধি করার এবং আমাদের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক উদ্যোগ দেশ আর্ট অ্যালায়েন্স ইনকর্পোরেটেডের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তাদের প্রতিভা প্রচারের একটি প্ল্যাটফর্ম।”
দেশ আর্ট গ্যালারীর পুনর্জন্ম, এর স্থায়ী ঐতিহ্য ও সৃজনশীলতা বিকাশে প্রতিশ্রুতির প্রমাণ। একটি নতুন দল ও বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশ আর্ট গ্যালারী নতুন প্রজন্মের শিল্পী ও শিল্পপ্রেমীদের প্রেরণা দেবে এবং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।