অস্থির দেশের ডিমের বাজার। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়
বাজারে ডিমের অস্বাভাবিক দামের লাগাম টানতে গত বছর আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পাশাপাশি বেঁধে দেয়া হয়েছিল প্রতি পিস ডিমের দাম। এতে নিয়ন্ত্রণে আসে বাজার।
তবে চলতি বছরের মে মাসে এ বাজারে আবারও দেখা দেয় অস্থিরতা। এরপর থেকেই চড়া রাজধানীর ডিমের বাজার। লাগাম টানতে গত সেপ্টেম্বরে আরেফ দফা আমদানির অনুমতি এবং উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম বেঁধে দেয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
এতে যেন আরও চড়েছে ডিমের বাজার। কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর এবং রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট ও হাতিরপুল কাঁচাবাজারসহ বেশকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকায়, আর সাদা ডিম ১৬০-১৬৫ টাকায়। তবে এলাকার দোকানগুলোতে এ দাম পৌঁছেছে যথাক্রমে ১৮০ টাকা ও ১৭০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ছে ১৫ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে, সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সবশেষ তথ্য বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা প্রতি হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকায়; এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৩-৫৫ টাকা। আর একমাস আগে দাম ছিল ৫০-৫৩ টাকা হালি।
অথচ সরকার-নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, খুচরায় ডিম বিক্রি হওয়ার কথা প্রতি পিস ১১ টাকা ৮৭ পয়সা এবং হালি ৪৭-৪৮ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে ডিমের দাম বাড়ায় খুচরাতেও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে।
ডিমের দামের এ উত্তাপে দিশেহারা নিম্ন, মধ্যবিত্ত ও শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, ডিমের বাজারে বড় একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। দ্রুত এ সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে, তা নাহলে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার অনেক বাইরে চলে যাবে ডিম।
হাফিজুর নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা যারা নিয়মিত মাছ-মাংস খেতে পারি না, তাদের জন্য ডিমই ছিল ভরসা। তবে এখন এটিও নাগালের বাইরে চলে গেছে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে।’
বেসরকারি চাকরিজীবী মান্নান বলেন, ‘সরকার ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে অনুযায়ী দাম হওয়ার কথা প্রতি পিস ১১-১২ টাকা, সেখানে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা করে। এ যেন মগের মুল্লুক। এখন সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরতে হবে।’
ডিমের এই বাড়তি দাম নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। কেউ কেউ বলছেন, ডিম খাওয়াই বাদ দিয়ে দিবেন। আবার কেউবা করছেন রসিকতা। বলছেন, এক পিস ডিম আর এক বোতল পানির দাম এখন সমান।
সুফম ভিউ নামে একটি ফেসবুক পেজ লিখেছে, 'ডিম এখন পানির দামে বিক্রি হচ্ছে। এক বোতল পানি ১৫ টাকা, এক পিস ডিম ১৫ টাকা।'
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, ডিমের ডজন ১৭০ টাকা। পিস ১৫, হালি ৬০। এই পোস্টেই তানজিয়া তুল দিশী নামে একজন কমেন্ট করেছেন, 'পানির দামে ডিম'।
ডিমের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ডিম বিক্রেতা হাসনাত বলেন, ‘আমাদের কিছুই করার নেই। পাইকারিতে বেড়েছে ডিমের দাম। এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও। পাইকারিতে ডিম কিনতে খরচ হচ্ছে ১২-১৩ টাকা পর্যন্ত।’
তবে ডিমের বাজার অস্থির হওয়ার জন্য দেশের বড় খামারি ও রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পাইকারি ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন ক্ষুদ্র খামারিরা। তারা বলছেন, মুরগির খাবার ও বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ডিমের দামও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সম্প্রতি সরকার ডিমের দাম নির্ধারণ করার সময় ক্ষুদ্র খামারিদের দূরে রাখা হয়েছিল। এ সুযোগে দাম বাড়াচ্ছে করপোরেট গ্রুপগুলো।
তেজগাঁও পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি আমানত উল্লাহ সময় সংবাদকে বলেন, সম্প্রতি বন্যায় খামার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। এতে বাজারে চাহিদার তুলনায় ডিমের সরবরাহ কম। তার ওপর বাজারে সবজি ও মাছ-মাংসের দাম চড়া হওয়ায় বাড়ছে ডিমের দাম। এতে বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম ১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নভেম্বরের শুরুর দিকে ডিমের দাম কমতে শুরু করবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শীতের সবজি বাজারে উঠতে শুরু করলে দাম কমবে। তখন মানুষ সেদিকে ঝুঁকবে কিছুটা। ফলে ডিমের ওপর চাপ কমবে। তখন দাম নাগালে চলে আসবে।