
একসময় ধনীদের বিলাসবহুল শখ হিসেবে দেখা হত বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি)। কিন্তু এখন ঢাকার রাস্তায় খুব পরিচিত দৃশ্য হয়ে উঠছে।
বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা, মার্সিডিজ-বেন্জ, বিএমডাব্লিউ, অডি ও চীনের বিওয়াইডি বাংলাদেশে প্রিমিয়াম ও মিড-রেঞ্জ ইভি মডেল নিয়ে এসেছে। এতে দেশের গাড়ির বাজারে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব ক্রেতা আগে ব্যাটারিচালিত গাড়িকে ব্যয়বহুল ও অপ্রয়োজনীয় মনে করতেন, তারা এখন এগুলোর দিকে ঝুঁকছেন। কারণ এগুলো পেট্রল ও ডিজেলচালিত গাড়ির তুলনায় সস্তা, পরিবেশবান্ধব ও ঝামেলা কম।
তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশন না থাকাই এই গাড়ি শিল্পের জন্য বড় বাধা বলে মনে করছেন তারা।
বিআরটিএর প্রকৌশল পরিচালক তৌহিদ তুষার জানান, '২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বিআরটিএর নতুন নীতিমালার আওতায় বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন শুরু হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ৫০০টির বেশি ইভি নিবন্ধিত হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, পরিসংখ্যান এখনও হালনাগাদ করা হচ্ছে।
'গত বছর এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০। এ বছর সেটি ৩০০ ছাড়াবে, এমনকি ৪০০ এর বেশি হতে পারে।'
মার্সিডিজ-বেন্জ বাংলাদেশের বিপণন প্রধান চৌধুরী মো. নাবিল হাসান জানান, তাদের ইভি মডেলের বিক্রি ধীরে ধীরে বাড়ছে। গ্রাহকরা দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা বুঝতে শুরু করায় বাজারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
কোম্পানিটি বর্তমানে বাংলাদেশে চারটি বৈদ্যুতিক মডেল বিক্রি করছে, যার মধ্যে বিলাসবহুল সেলুন কার থেকে শুরু করে এসইউভিও রয়েছে। গড়ে মাসে প্রায় ১২টি গাড়ি বিক্রি হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল হলে বিক্রি আরও অনেক বাড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন।
চীনের বিওয়াইডি ২০২৪ সালের মার্চে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করে। এরপর থেকেই তাদের বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির চাহিদা বাড়তে থাকে।
বিওয়াইডি বাংলাদেশের ক্লায়েন্ট এক্সপেরিয়েন্স স্পেশালিস্ট মো. রেজওয়ান রহমান বলেন, 'শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সীমিত মডেল থাকার কারণে চ্যালেঞ্জ ছিল। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০টি গাড়ি বিক্রি হয়েছে এবং মাসিক সরবরাহ ৫০টি ছাড়িয়েছে।'
প্রথম দিকে তারা প্রিমিয়াম মডেলের গাড়ি বাজারে আনে, যার দাম ছিল ৯০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। তবে ২০২৪ সালের নভেম্বরে তারা সাশ্রয়ী মডেল চালু করলে বাজার আরও চাঙা হয়। ওই মডেলের দাম শুরু হয় ৬৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা থেকে। বর্তমানে বিওয়াইডির ১৪টি চার্জিং স্টেশন রয়েছে এবং প্রতিটি গাড়ির সঙ্গে বিনামূল্যে হোম চার্জার সরবরাহ করা হয়।
বিএমডাব্লিউ তুলনামূলকভাবে সতর্কভাবে এগোচ্ছে। স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটর এক্সিকিউটিভ মোটর্স লিমিটেডের মাধ্যমে তারা মাত্র একটি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক মডেল বিক্রি করছে।
এক্সিকিউটিভ মোটর্সের অপারেশনস ডিরেক্টর আশিক উন নবি বলেন, 'বিক্রি কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু এখনও টেকসই বাণিজ্যিক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। জার্মান প্রতিযোগীদের তুলনায় আমাদের অবস্থা খারাপ নয়, তবে বেশিও নয়।'
বাংলাদেশে বিএমডাব্লিউর বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে একাধিক নতুন মডেল থাকলেও বাংলাদেশে আনা সম্ভব হচ্ছে না দুই কারণে, সরকারি প্রণোদনার অভাব এবং চার্জিং অবকাঠামোর ঘাটতি।
তিনি আরও বলেন, 'সরকার শূন্য-কার্বন ভবিষ্যতের কথা বললেও কার্যকর নীতিমালা নেই। সহায়তা থাকলে আমরা আরও বেশি মডেল আনতে পারতাম।'
অন্যদিকে, ঢাকার রাস্তায় টেসলার গাড়িও দেখা যাচ্ছে, যদিও সংখ্যায় খুবই কম।
কার হাউস ইমপোর্টসের সেলস এক্সিকিউটিভ রাশেদ জামান জানান, 'আমাদের প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন আমদানিকারক মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০টি টেসলা বাংলাদেশে এসেছে। গত দুই-আড়াই বছরে আমরা ১২টি গ্রাহকের হাতে তুলে দিয়েছি।'
তবে টেসলার এখনও বাংলাদেশে কোনো অফিসিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর বা ডিলারশিপ নেই।