এক সময় বাংলাদেশে স্টার্টআপ মানেই ছিল সম্ভাবনার গল্প- নতুন আইডিয়া, তরুণ উদ্যোক্তা, দ্রুত বেড়ে ওঠা ডিজিটাল বাজার। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে সেই চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু একটি অস্থায়ী ধাক্কা নয়- বরং বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম এখন এক গভীর রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
সংকটের মূল কারণ কোথায়?
১) বৈশ্বিক বিনিয়োগ সংকটের প্রভাব
বিশ্বজুড়ে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগ কমে যাওয়ার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের স্টার্টআপে।
যেসব আন্তর্জাতিক ফান্ড আগে ঝুঁকি নিতে আগ্রহী ছিল, তারা এখন লাভজনকতা (profitability) ও টেকসই মডেল ছাড়া বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
ফলে,
নতুন ফান্ডিং রাউন্ড থেমে যাচ্ছে
ভ্যালুয়েশন কমছে
এক্সপ্যানশন প্ল্যান বাতিল হচ্ছে
২) ‘গ্রোথ আগে, লাভ পরে’ মডেলের পতন
একসময় বাজার দখলই ছিল প্রধান লক্ষ্য।
কিন্তু এখন বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন একটাই-
“এই স্টার্টআপ লাভ কবে করবে?”
এই পরিবর্তিত মানসিকতায় অনেক স্টার্টআপের ব্যবসায়িক মডেল টিকছে না।
কোন খাত সবচেয়ে বেশি চাপে?
১) ফিনটেক
ডিজিটাল পেমেন্ট ও লোন প্ল্যাটফর্মগুলো এখন কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা চাপে আছে।
গ্রাহক বাড়লেও আয় বাড়ছে না, এটাই বড় সমস্যা।
২) ই-কমার্স ও কুইক কমার্স
ডিসকাউন্ট নির্ভর ব্যবসা এখন টেকসই নয়।
লজিস্টিক খরচ, রিটার্ন রেট, কাস্টমার একুইজিশন কস্ট- সব মিলিয়ে মার্জিন সংকুচিত।
৩) রিটেইল টেক ও ফুড ডেলিভারি
মার্কেট স্যাচুরেশন এবং তীব্র প্রতিযোগিতা অনেক স্টার্টআপকে কোণঠাসা করে ফেলেছে।
স্টার্টআপগুলো কীভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছে?
১) খরচ কমানো ও রিস্ট্রাকচারিং
কর্মী ছাঁটাই
অফিস খরচ কমানো
মার্কেটিং বাজেট কাটা
এখন প্রায় নিয়মিত কৌশল।
২) B2C থেকে B2B-তে ঝোঁক
সরাসরি গ্রাহকের বদলে কর্পোরেট ক্লায়েন্টে ফোকাস-
যেখানে আয় তুলনামূলক স্থিতিশীল।
৩) এআই ও অটোমেশন ব্যবহার
কাস্টমার সাপোর্ট, ডেটা অ্যানালিটিক্স, অপারেশন- সবখানে এআই ব্যবহার করে খরচ কমানোর চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশের ইকোসিস্টেমের দুর্বল জায়গা
পর্যাপ্ত লোকাল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল নেই
স্টার্টআপ–ফ্রেন্ডলি নীতিগত স্থিতিশীলতা দুর্বল
দক্ষ টেক ট্যালেন্ট ধরে রাখা কঠিন
এক্সিট (IPO/Acquisition) সুযোগ সীমিত
এসব কারণে অনেক সম্ভাবনাময় উদ্যোগ মাঝপথেই থেমে যাচ্ছে।
তবুও কি আশার আলো আছে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন- সংকটই আসলে ছাঁকনি।
যেসব স্টার্টআপ-
বাস্তব সমস্যা সমাধান করছে
আয়ভিত্তিক মডেল গড়ছে
প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করছে
তাদের জন্য এই সময়টা দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক হতে পারে।
বিশেষ করে-
এগ্রিটেক
হেলথটেক
ক্লাইমেট টেক
গভর্নমেন্ট–টেক (GovTech)
খাতে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এখনো শক্ত।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ
বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম এখন ‘বুদবুদ ভাঙার’ পরের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে।
এখন আর গল্প নয়—চাই কার্যকর সমাধান, টেকসই আয় এবং বাস্তব প্রভাব।
এই সংকট পার হয়ে যারা টিকে থাকবে, তারাই আগামী দিনের প্রকৃত সফল স্টার্টআপ হয়ে উঠবে—এটাই ২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় শিক্ষা।