
গেলো দেড় দশকের অনিয়ম আর লুটপাটে, আর্থিক অবস্থার ভয়াবহ চিত্র স্পষ্ট হচ্ছে ব্যাংক খাতে। যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের অঙ্ক সাড়ে সাত লাখ কোটি টাকার ওপরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ বলছে, এত বিশাল অঙ্কের ঋণ ঝুঁকিতে পড়ায় অর্থনীতিতে তৈরি হতে পারে দীর্ঘ মেয়াদী সংকট। ঋণ জালিয়াতিতে অভিযুক্তদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।
সময় যতো গড়াচ্ছে, পাল্লা দিয়ে যেনো সামনে আসছে আর্থিকখাতে অনিয়ম-দুর্নীতির ভয়াবহ সব চিত্র। গেলো দেড় দশকে অনিয়ম লুটপাটের অঙ্কে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন হিসাবে। ফলে ২০২৪ শেষে খেলাপি, নবায়নকৃত ও বাদপড়া মিলিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ ছাড়িয়েছে সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের প্রায় সমান। আর এই অর্থ দিয়ে নির্মাণ করা সম্ভব অন্তত ২৩টি পদ্মা সেতু।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ষ্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে বলা হয়, নবায়নের সুযোগ দেয়ার পর আবার খেলাপি হয়ে পড়ে ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যা বাড়িয়ে দিচ্ছে ব্যাংক খাতের মুলধন ঘাটতিসহ সার্বিক ঝুঁকি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দীকি বলেন, ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট গুরুত্ব দিয়েছে যে, এনপিএলটা অবশ্যই আমাদের সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে। কারণ, এটা যদি না আনি তাহলে এনপিএলের ইফেক্টটা আমরা ব্যাংকের মূলধনে দেখেছি। অনেকগুলো ব্যাংকের মূলধন নেগেটিভ কারণ হচ্ছে হাই এনপিএল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৪ পর্যন্ত বিতরণ করা মোট ঋণ ১৬ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। যার প্রায় ৪৫ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ছোট্ট এই অর্থনীতিতে বিশাল অঙ্কের ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ হলে তা দীর্ঘমেয়াদে সংকটে ফেলব অর্থনীতিকে। এ সময় দোষিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথাও বলেন তারা।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত সরকার পতনের সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন এটি বেড়ে ৫ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এই বিশাল বোঝা বাংলাদেশকে বহু বছর বহন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম মোকাবিলায় জবাবদিহিতা ও আইনগত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা জরুরি। এদিকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি ঋণকে দেশের অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।