হলের ভেতরের জীবন: জাতীয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবাসের অদেখা বাস্তবতা

হল জীবন যেখানে নিরাপত্তা, খাদ্য ও মানসিক চাপ একসঙ্গে ছাত্রজীবনকে প্রভাবিত করে
হলের ভেতরের জীবন: জাতীয় ও
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবাসের অদেখা বাস্তবতা
প্রকাশিত

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মানেই শুধু নতুন ক্যাম্পাস বা উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নয়, অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্য এর সঙ্গে যুক্ত হয় হলজীবন। সীমিত আয়ের পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীদের কাছে হল হলো নিরাপদ আশ্রয়, ভাড়ার চাপ নেই, ক্যাম্পাস কাছেই, পড়াশোনার সুযোগ বেশি। কিন্তু এই আশ্রয়ের ভেতরেই ধীরে ধীরে তৈরি হয় এক ভিন্ন বাস্তবতা, যেখানে নিরাপত্তা, খাদ্য ও মানসিক চাপ একসঙ্গে ছাত্রজীবনকে প্রভাবিত করে।

ধারণক্ষমতার সংকট ও গাদাগাদি বাস্তবতা

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে হলের সংখ্যা বা আসন বাড়েনি। ফলে অনেক হলে নির্ধারিত ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী থাকতে বাধ্য হয়। এক কক্ষে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী থাকার কারণে ব্যক্তিগত পরিসর কমে যায়, পড়াশোনার জন্য নিরিবিলি পরিবেশ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন এমন পরিবেশে থাকলে শারীরিক ক্লান্তির পাশাপাশি মানসিক চাপও বাড়ে।


নিরাপত্তা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা

হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নীতিমালা থাকলেও বাস্তবে তার কার্যকর প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রে দুর্বল। রাতে পর্যাপ্ত তদারকি না থাকা, বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতির অভাব শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করে। অগ্নি নিরাপত্তা, বৈদ্যুতিক ঝুঁকি কিংবা স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থায় দ্রুত সহায়তার ব্যবস্থা অনেক হলে এখনও পর্যাপ্ত নয়।


হলের খাবার: পুষ্টির প্রশ্নবিদ্ধ চিত্র

হলজীবনের সবচেয়ে আলোচিত এবং দীর্ঘদিনের সমস্যা হলো খাবারের মান। সীমিত বাজেট, স্বচ্ছ তদারকির অভাব এবং ব্যবস্থাপনায় গাফিলতির কারণে অনেক হলে খাবারের পুষ্টিমান সন্তোষজনক নয়। দীর্ঘ সময় ধরে নিম্নমানের খাবার গ্রহণ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে—অসুস্থতা বাড়ে, মনোযোগ কমে এবং পড়াশোনার গতি ব্যাহত হয়।

মানসিক চাপ ও অদৃশ্য সংকট

হলজীবনে পড়াশোনার চাপের সঙ্গে যুক্ত হয় সামাজিক ও মানসিক চাপ। অতিরিক্ত শব্দ, গোপনীয়তার অভাব, সামাজিক প্রতিযোগিতা এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে সেশনজট, পরীক্ষার চাপ এবং কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা মিলিয়ে অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপে ভোগে। অথচ অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং বা মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা নেই।


প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতা ও যোগাযোগ ঘাটতি

হল প্রশাসন সাধারণত সীমিত জনবল দিয়ে পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অভিযোগ দ্রুত সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় নিয়ম প্রয়োগে অসামঞ্জস্য দেখা যায়, যা শিক্ষার্থী–প্রশাসনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে। এর ফলে ছোট সমস্যা বড় আকার ধারণ করে এবং আস্থার সংকট তৈরি হয়।

Moheen Reeyad

মোকাবেলার বাস্তব পথ

এই সংকট থেকে উত্তরণে প্রথম প্রয়োজন হল সম্প্রসারণ ও সংস্কার। নতুন হল নির্মাণের পাশাপাশি বিদ্যমান হলগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, নিয়মিত অডিট এবং জরুরি সেবার প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে হবে।

খাবারের ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণ, স্বচ্ছ তদারকি এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়ালে গুণগত পরিবর্তন সম্ভব। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার জন্য কাউন্সেলিং সেন্টার কার্যকর করা এবং সচেতনতা বাড়ানো সময়ের দাবি।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের মধ্যে পারস্পরিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা, যেখানে সমস্যাগুলোকে প্রতিপক্ষতা নয়, সমাধানের দৃষ্টিতে দেখা হবে।


এ বিষয়ে, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শহীদ তিতুমীর হলের বাসিন্দা, তুহিন বলেন- 

পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর অব্যবস্থাপনার ভুগান্তি দীর্ঘদিনের। 

হলগুলোর সুবিধা অসুবিধার কথা বলতে গেলে, একরুমে ৫জন করে গাদাগাদি করে থাকতে হয়, অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্দ পরিবেশ, প্রশাসন কতৃক ভর্তুকি না দেওয়া, ডায়নিং এর অস্বাস্থ্যকর খাবার চড়া মূল্যে ক্রয় করা, সকল নাগরিক সুবিধা অনুপস্থিতির বিষয় গুলাই সবার আগে বলতে হবে। 


গণরুম গুলার কথা বলতে গেলে সেগুলাকে গণকবর বলাই শ্রেয়! 

এই বিষয়গুলোর উপর সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়া উচিৎ। কারণ, এই হলগুলোতেই আগামী দিনের রাষ্ট্র পরিচালকরা বাস করছে!

উপসংহার

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কেবল থাকার জায়গা নয়; এটি শিক্ষার্থীর জীবনবোধ, সহনশীলতা ও ভবিষ্যৎ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ পরিসর। কিন্তু অব্যবস্থাপনা ও অবহেলা হলে সেই পরিসরই হয়ে ওঠে চাপ ও হতাশার উৎস। পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং টেকসই উদ্যোগের মাধ্যমে হলজীবনকে সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার্থীবান্ধব করা সম্ভব- যেখানে ছাত্রবাস হবে নিরাপদ, সুস্থ ও মর্যাদাপূর্ণ।
পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর অব্যবস্থাপনার ভুগান্তি দীর্ঘদিনের। 

হলগুলোর সুবিধা অসুবিধার কথা বলতে গেলে, একরুমে ৫জন করে গাদাগাদি করে থাকতে হয়, অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্দ পরিবেশ, প্রশাসন কতৃক ভর্তুকি না দেওয়া, ডায়নিং এর অস্বাস্থ্যকর খাবার চড়া মূল্যে ক্রয় করা, সকল নাগরিক সুবিধা অনুপস্থিতির বিষয় গুলাই সবার আগে বলতে হবে। 

গণরুম গুলার কথা বলতে গেলে সেগুলাকে গণকবর বলাই শ্রেয়! 

এই বিষয়গুলোর উপর সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়া উচিৎ। কারণ, এই হলগুলোতেই আগামী দিনের রাষ্ট্র পরিচালকরা বাস করছে!

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com