ভালোবাসি রমনা: প্রাণ ও প্রকৃতির গল্প- সমাপনীতে থাকছেন খ্যাতিমান আন্তর্জাতিক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম

তাসলিমা আখতারের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিন সম্পন্ন
ভালোবাসি রমনা: প্রাণ ও প্রকৃতির গল্প- সমাপনীতে থাকছেন খ্যাতিমান আন্তর্জাতিক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম
প্রকাশিত

রমনা পার্কের শকুন্তলা চত্বরের সামনে আলোকচিত্রী ও রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত শ্রমিক–নারী আন্দোলনের সংগঠক তাসলিমা আখতারের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘ভালোবাসি রমনা: প্রাণ ও প্রকৃতির গল্প’ এর আজ দ্বিতীয় দিন সম্পন্ন হয়েছে।

আজ ২য় দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন, তাসলিমা আখতার, আলোকচিত্রী সফিকুল ইসলাম কিরন, আন্তর্জাতিক দৌড়বিদ খবির উদ্দীন, রমনা মহিলাঙ্গনের সংগঠক শিরিন আক্তার ও অন্যান্যরা। আগামীকাল শুক্রবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ এই প্রদর্শনী সমাপ্ত হবে। সমাপনী দিনে সকাল ৯টায় রমনা পার্কে শকুন্তলা চত্বরের সামনে এই প্রদর্শনীতে উপস্থিত থাকবেন প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও অধিকারকর্মী, দৃকের প্রতিষ্ঠাতা শহীদুল আলম।

গতকাল ১০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী নিয়ে আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার বলেন, গত ১০ বছরে ঢাকার বদলের সাথে সাথে পার্কের বদল ও স্মৃতির গল্পও রয়েছে এই প্রদর্শনীতে। পার্কে প্রতিদিন হাঁটা বা শরীরচর্চার পাশাপাশি কিভাবে মানুষের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক তৈরি হয়—ছবি সেই গল্পও বলে। মোট ৫৫টি ছবি নিয়ে প্রদর্শনীটি সাজানো হয়েছে। এটি রমনা পার্ক ও এর মানুষের কথা বলে এবং একইসাথে সবুজ ঢাকা শহরের আকাঙ্ক্ষা জানান দেয়।

প্রদর্শনীর সমাপনী দিনের আয়োজনে আপনার প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিনিধি/রিপোর্টার ও একজন আলোকচিত্রী/ক্যামেরাপার্সন পাঠিয়ে এই আয়োজনের প্রচারে সহযোগিতা করার অনুরোধ রইল।

নীচে প্রদশ‍নীর বক্তব্য ও আলোকিচত্রীর পরিচিতি দেয়া হলো:

তাসলিমা আখতারের আলোকচিত্র প্রদর্শনী: ১০, ১১ ও ১২ ডিসেম্বর ২০২৫। শকুন্তলা চত্বরের সামনে, রমনা পার্ক। সকাল ৮ টা থেকে ১০ টা

ভালোবাসি রমনা: প্রাণ ও প্রকৃতির গল্প

প্রতিদিনের হাঁসফাঁস, দম-বন্ধ; আটসাঁট; জড়সড়; একঘেয়ে নাগরিক জীবন পথ খোঁজে দম ফেলার। শহরজুড়ে উঁচু উঁচু চকচকে কাঁচের দালান, অনেক অনেক এয়ারকন্ডিশন। বড় বড় হাইরাইজে ঢাকা আকাশ, পূর্ণিমার চাঁদ। ব্যস্ত জীবন, ভীষণ একাকীত্ব। পথে পথে ধোঁয়া ধুলো। ধূসর সবুজ পাতা। ধূসর মেগা সিটি। এসবের মাঝে এক চিলতে সবুজ, এক ফালি আকাশ, নিঃশ্বাস নেবার একটু জায়গা পেলেই আঁচ করি কতটা কাঙাল হতে পারে নগর জীবন। নগর জীবনে একটি পার্ক, সবুজের সংস্পর্শ, পার্কের মানুষ, তাদের একাকীত্ব-সম্পর্ক, নারীর উপস্থিতি—এসবকেই জানা বোঝা আমার আগ্রহ। এসবই আমার ছবি গল্পের খুঁটিনাটি। গত ১০ বছরের পার্কে ভোরবেলার হাঁটতে এসে পাওয়া নানা অভিজ্ঞতা।

আজকের রমনা পার্ক শুধু একটি সবুজ অঞ্চল নয়—এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও নাগরিক জীবনের প্রতীক। রমনা বটমূল বাংলা নববর্ষের চর্চায় যেমন প্রাণ জোগায়, তেমনি পার্কের প্রতিটি পথ ও বৃক্ষ বহন করে বহু সময়ের স্মৃতি।

প্রতিদিন সূর্য ওঠার সাথে সাথে এই উদ্যানে গাছ-গাছালি, ফুল-পাতা যেন জেগে ওঠে মানুষের পায়ের আওয়াজের তালে তালে। স্বাস্থ্য সচেতনতায় কিংবা কেউবা রোগ-বালাই থেকে মুক্তির ভাবনায় প্রতিদিন পাখির মতো ভিড় করে এ আঙিনায়। জড়িয়ে পড়ে নানান সম্পর্কে। বছরের পর বছর পাশাপাশি হাঁটে চলা নাম-না-জানা অচেনা মানুষটি চেনা হয়ে উঠে, আপন হয়ে ওঠে একে অপরের। আপন হয়ে উঠে গাছ-ফুল-ফুলের গন্ধ, পাতা পড়া আর বাতাসে শব্দ, আঁকাবাঁকা পথ। ঋতু বদলায়, গাছ-ফুল-পাতার রং-বয়স-গন্ধ বদলায় যেমন বদলায় মানুষ।

এভাবে প্রতিদিন ভোরে জমা হয় অনেক জীবনের গল্প, সারাদিনের প্রাণের খোরাক। এভাবেই নাগরিক জীবনে প্রাণের সঙ্গী হয়ে উঠে একটি পার্ক। এমনই একটি পার্ক ঢাকা শহরের রমনা পার্ক। নারী-পুরুষের কলরব, হাঁটাহাটি, শরীরচর্চা, সময় কাটানো, একাকীত্বের মাঝে এভাবেই একটি পার্কের কাছে ঋণী হয়ে পড়ে নাগরিক জীবন। আকুতি বাড়ে আরো আরো সবুজের, আকুতি বাড়ে একাকীত্ব দূর করার, আকুতি বাড়ে ঐ সাহসী নারী হবার। যে মধ্যবিত্ত নারী শত পুরুষের মাঝে জড়তা দূরে ঠেলে দৌড়ে সবুজের মধ্যে মিশে। যে নারী ইউরোপীয়ান নয় যে নারী এশিয়ার এ দেশের কাদামাটির।

ভালোবাসি রমনা সিরিজটি গত প্রায় ১০ বছর জুড়ে ঢাকার রমনা পার্কে আমার যাত্রার একটি চিত্র। মোট ৭৫ টি ছবি নিয়ে পার্কে হাঁটা শুরু করার প্রায় ছ’মাস পর থেকে প্রথম ছবি তোলা শুরু। যখন থেকে পার্ক আর পার্কের মানুষের কিছুটা কাছাকাছি হতে পেরেছি বলে মনে হয়েছে তখন থেকেই কাজটি শুরু। এই কাজটি প্রথম পার্কের মাঝে প্রদর্শনী করার ইচ্ছা থেকে আজকের প্রদর্শনী। কারণ এই পার্কের মাঝেই এই ছবিগুলোর প্রাণ।

তাসলিমা আখ্তার: আলোকচিত্রী, শ্রমিক-নারী আন্দোলন সংগঠক। শিক্ষক পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইন্সটিটিউট। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (বাজাফে:১২)। সভাপ্রধান, বাংলাদেশ গামে‍র্ন্ট শ্রমিক সংহতি। সদস্য, শ্রম সংস্কার কমিশন ২০২৪। রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত ২০২৪। সদস্য জাতীয় ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (এনটিসিসি) সদস্য, রাজনৈতিক পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন।

তাসলিমা আখ্তার ১৯৭৪ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে মাস্টার্স (১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষ) এবং এমফিল (২০০৭) সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ফটো-সাংবাদিকতা বিষয়ে গ্র্যাজুয়শনে করেন (২০১০) পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টটিউট থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবনে তিনি ছাত্র-রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং এক পর্যায়ে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারশনের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। বর্তমানে পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টটিউটে তিনি শিক্ষকতা করছেন। সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটিতেও তিনি খন্ডকালীন শিক্ষকতা করেন।

তাসলিমা আখতারের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালি জেলায়। তার বাবা সামসুল হুদার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় ও কলেজ অশ্বদিয়া গার্লস স্কুল ও কলেজে তাসলিমা একজন দাতা সদস্য। তিনি বঞ্চিত শিশুদের স্কুল ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত আমাদের পাঠশালারও একজন ট্রাস্টি সদস্য। ছাত্র জীবন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সংগঠক হিসাবে তাঁর পদযাত্রা প্রায় ৩০ বছরের। বিগত ১৭ বছর ধরে তিনি সাংগঠনিক তৎপরতার সাথে আলোকচিত্রেও তাঁর মত প্রকাশ করে চলেছেন।

শ্রমিক-নারী-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পাশাপাশি তাসলিমা আখতার একজন আন্তজার্তিক খ্যাতিসম্পন্ন শ্রমিক অধিকার সংগঠক এবং আলোকচিত্রী। ডক্যুমেন্টারি ফটোগ্রাফি-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ম্যাগনাম ফাউন্ডেশনে ২০১১তে তিনি সাউথ এশিয়া থেকে নির্বাচিত হন ও স্কলারশিপ পান। যার অংশ হিসাবে তিনি ম্যাগনাম ফাউন্ডেশন এবং নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে হিউম্যান রাইটস এন্ড ফটোগ্রাফী বিষয়ে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাজ্যে ম্যগনাম ফটোসে ইন্টার্ন হিসাবে কাজ করেন।

২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা ধ্বসে ১,১৭৫ জন শ্রমিক প্রাণহানি হলে ঘটনাস্থলে তিনি যে ছবিগুলো তুলেন তার একটিই ‘শেষ আলিঙ্গন’ জাতীয়-আন্তর্জাতিক মহলে প্রধানতম প্রতীকি ছবি হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাগাজিন টাইম-এর ২০১৩ সালের দ্য ইয়ার ইন পিকচার্স হিসাবে ১০টি ছবির মধ্যে প্রথম স্থান পায়। এ ছবির জন্য তিনি ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ২০১৪ পুরস্কার পান। এছাড়া একই বছর জার্মানিতে তিনি লিড এ্যাওয়ার্ডসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা স্বীকৃতি পান। শ্রমিক সংগঠনের কাজের পাশাপাশি তার ফটোগ্রাফিকেও তিনি মানুষের সাথে যুক্ততার এবং নিজের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করেন। বিশেষভাবে ডক্যুমেন্টারি, শ্রমিক-নারী-পরিবেশ-সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট ইস্যু তাঁর আগ্রহের জায়গা। তার তোলা ছবি দেশে পরিচিত গ্যালারীর পাশাপাশি বিশেষ গুরুত্বসহ জনপরিসরে শাহবাগ, শহীদ মিনার, চারুকলা, সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন শ্রমিক এলাকা প্রদর্শিত হয়। একইসাথে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেপাল, চীন, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নরওয়ে, লুক্সেমবার্গসহ বহু দেশে প্রদর্শিত হয়েছে।

“২৪ এপ্রিল হাজার প্রাণের চিৎকার’ সংকলন”টি, ওয়েবসাইট www.athousandcries.org- ;২০১৮ শ্রমিকদের স্মরণে ‘স্মৃতি কাঁথা ও কথা’ শীর্ষক উদ্যোগে সমন্বয়ক এবং তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডে শতিাধিক প্রাণ হারনোর যুগ পূর্তিতে সম্পাদনা করেন ‘‘বিচারহীনতার ১২ বছর: তাজরীনে শ্রমিক হত্যা আগুন ও প্রাণের লড়াই’’ এবং ২০২৪ সালে চির বন্ধু নামে স্মরণিকা। এছাড়াও নারী ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন এবং অনুবাদ করেছেন আলেক্সান্দ্রা কোলনতাই-এর লেখা। নারী সংহতির ম্যগাজিন ‘মুক্তস্বর’-এর সম্পাদনা পরিষদের প্রধান হিসেবেও কাজ করেন তিনি। মুক্তস্বরে লেখেন রোকেয়া এবং আমাদের সময়: আমরা কি জেগেছি?’’ শীর্ষক প্রবন্ধ। ২০২৪ গণঅভ্যুত্থানে তিনি পোশাক শ্রমিকদের সংগঠিত করার পাশাপাশি দৃশ্য মাধ্যম শিল্পী সমাজ, আলোকচিত্র সমাজ এবং ক্ষুব্ধ নারী সমাজের ব্যানারে এই আন্দোলনে সর্ব্বোচ্চ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। একইসাথে নির্বাচনে নারীর জন্য আসন তৈরি ও সরাসরি নির্বাচন ব্যবস্থা তৈরির আন্দোলনেও তিনি সরব আছেন

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com