প্রবাসে ভোটের উচ্ছ্বাস
The Metro TV
প্রবাসে ভোটের উচ্ছ্বাস; “এটাই কি শেষ ভাবনা"?
এই প্রথম প্রবাসীদের নিয়ে ভাবনায় সরকার। রেমিট্যান্স যোদ্ধা খ্যাত প্রবাসীরা সবসময়ই থেকেছেন হিসাবের বাইরে।
এবারই প্রথম তাদের জন্য 'পোস্টাল ভোটিং' সিস্টেম চালু করলো সরকার। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এর আজ বুধবার, বিকাল ৫ টার আপডেট অনুযায়ী- 'পোস্টাল ভোট' এ নিবন্ধন করেছেন ১ লক্ষ, সাতান্ন হাজার, পাঁচশত, পঁচিশ জন ভোটার। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ, উনচল্লিশ হাজার, নয়শত সাত জন এবং নারী ভোটার সতেরো হাজার, ছয়শত, আঠারো জন।
এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলেই আশাবাদী সবাই। তবে, এবিষয়ে প্রবাসীদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা ইস্যু। দীর্ঘদিন প্রবাসে জীবন কাটানো বেশ কিছু রেমিট্যান্স যোদ্ধার সাথে কথা বলেছে 'মেট্রো টিভি'।তাদের অভিমত থেকে জানা যায়, যা কেউ কখোনো ভাবেনি তা নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ায় খুশি তারা। পোস্টাল ভোটিং এর রেজিস্ট্রেশন নিয়ে একধরণের আমেজ বিরাজ করছে তাদের ভিতর৷
তবে, শুধু ভোটাধিকার নয়। তারা চায় তাদের নিয়ে সরকারের ভাবনাটা আরেকটু গভীর হোক।
'পোস্টাল ভোটিং' সিস্টেম চালু করলো সরকার
Probashi Concern
দীর্ঘদিন আরব-আমিরাতে থাকা শাহরিয়ার আজিজ জানান, ভোট দিতে পারবো, এমন উদ্যোগে আমরা সন্তুষ্ট। তবে, এই ভোটই যেনো সব না হয় ৷ আমরা চাই আমাদের সাথে হওয়া বঞ্ছনাগুলো নিয়ে সরকার পদক্ষেপ নিক। তা না হলে প্রবাস জীবন থেকে মুখ ফেরাতে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশীরা। এতে করে হালকা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় রেমিট্যান্স এর ঝুলি। আমরা প্রতিদিন ১৪-১৭ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম করে যা উপার্জন করি তার সিংহভাগই দেশে পাঠাই। এই রক্ত ঘাম করা টাকায় কেনা উপহার/সরঞ্জামগুলো এয়ারপোর্ট থেকে চুরি হয়, ড্যামেজ হয়। এর থেকে লজ্জাস্কর বিষয় আর হতেই পারে না একটি রাষ্ট্রের জন্য। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি প্রতিনিয়ত ঘটছে এবং তা একটি উন্মুক্ত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন প্রবাসী দেশে গেলে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে থাকে এয়ারপোর্টে তার মালামাল চুরি বা নষ্ট হওয়া নিয়ে। এটা প্রতিকার করতে একটি রাষ্ট্রীয় সরকারের ১ দিনের বেশি লাগার কথা নয়, অথচ তা চলছে ১ শতক ধরে।
'পোস্টাল ভোটিং' সিস্টেম চালু করলো সরকার
Probashi Concern
এছাড়াও, প্রবাসে ধুঁকে মরছে লক্ষ লক্ষ অবৈধ বাংলাদেশী ৷ আমরা সবাই বিষয়টা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা না রাখায়, মনে করি এরা সবাই হয়তো চুরি করে বিদেশে এসেছে। কিন্তু, প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এদের সিংহভাগই অবৈধ হচ্ছে সরকারের ছোট্ট একটি সমন্বয়ের অভাবে। আমরা যারা নানা রকম 'ওয়ার্ক পারমিট' নিয়ে প্রবাসে কর্মরত, আমাদের প্রথম ভিসার মেয়াদ থাকে সাধারণত ২ বছর। এক্ষেত্রে দেখা যায়, মধ্যস্থতাকারীর অসদুপায় বা সত্ত্বাধিকারির অজ্ঞতাই বেশি দায়ী। যখন কেউ একটি নির্দিষ্ট কাজের ভিসা নিয়ে প্রবাসে আসে, পরবর্তীতে উক্ত কাজ বা কোম্পানি সঠিক না হলে বা কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে এই প্রবাসী তখন একই ধরনের কাজ আর পান না। নির্দিষ্ট কর্মভিসা হওয়ায় অন্য কোনো কাজের সুযোগও থাকে না, ফলে মেয়াদ থাকাকালীন বা মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তিনি হয়ে পড়েন অবৈধ।
অথচ, দেখা যাচ্ছে তিনি নতুন ভিসা করতে প্রস্তুত আছেন। শুধুমাত্র অফিসিয়াল বা রাষ্ট্র ভিত্তিক জটিলতায় তিনি চোর হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন বা কখোনো জেল খাটছেন।
এমন পরিস্থিতি উৎরাতে সরকারের খুব বেশি কষ্ট হওয়ার কথা নয়, শুধুমাত্র কুটনৈতিক সচলতা জোরদার হলেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
সুতরাং, আমরা শুধু আই ওয়াশড ভোটাধিকার নয়, আমরা একটু মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই। যাতে আমাদের রক্ত ঘাম করা উপার্জন অবৈধ না হয়।
এবিষয়ে সরকারের কিছু করণীয় আছে কিনা মর্মে জানতে চাইলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ড. সাইমা আহমেদ বলেন, অতি অবশ্যই সরকারের করণীয় আছে। ভিসা জটিলতা নিয়ে কুটনৈতিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া অতিব জরুরি। ভিসা নিয়ে এমন জটিলতা আর কোনো দেশে আছে বলে আমার জানা নাই, এমনকি আমাদের থেকে অনুন্নত দেশেগুলোরও এমন উদ্ভট পরিস্থিতি নাই। ভিসা নবায়ন করতে প্রবাসীদের ধর্ণা দিতে হবে কেনো? রাষ্ট্র কেনো তার নাগরিককে সম্মানজনক ব্যবস্থা দিতে পারবে না? ভিসা জটিলতা ছাড়াও প্রবাসীদের অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে ভাবনা অনিবার্য।
আর বিমানবন্দরে সৃষ্ট নিম্নস্তরের ঘটনাগুলো ঠিক করতে তো সময়ই লাগার কথা নয়, কতোটা অব্যবস্থাপনা হলে একজনের টোকেন বসানো লাগেজ অন্যজন নিয়ে চলে যেতে পারে। সাধারণ নজরদারি থাকলেও তো এমন কাণ্ড হওয়ার কথা নয়। আমার নিজেরই আমেরিকার থেকে ফেরার সময় বিমানবন্দর থেকে লাগেজ হারিয়ে যায়। যা অন্যজন নিয়ে চলে যায় এবং সে বিষয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে খুঁজে বের করেছি এবং আমার মালামাল বুঝে নিয়েছি। এমন নিন্দনীয় ঘটনাগুলো এড়াতে সরকারের উচিৎ অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো থেকে ভালো উদ্যোগগুলো শেখা।

