

ইউরোপে অভিবাসন চাপ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সাম্প্রতিক সময়ে আশ্রয় ও শরণার্থী নীতিতে একাধিক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এসব পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর। নতুন নীতিমালার কারণে বাংলাদেশি আবেদনকারীরা এখন আগের তুলনায় বেশি অনিশ্চয়তা, আইনি ঝুঁকি ও মানবিক সংকটের মুখে পড়ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিবাসন ব্যবস্থায় ‘ফাস্ট-ট্র্যাক প্রসিডিউর’ এবং ‘সেফ কান্ট্রি অব অরিজিন’ তালিকার সম্প্রসারণ বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশকে তুলনামূলক নিরাপদ দেশ হিসেবে বিবেচনা করায় অনেক আবেদন প্রাথমিক পর্যায়েই বাতিল হচ্ছে, যদিও বাস্তবে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, রাজনৈতিক হয়রানি বা সামাজিক সহিংসতার ঝুঁকি অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথভাবে বিবেচিত হচ্ছে না।
আইন ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, আশ্রয় যাচাই প্রক্রিয়ায় সময়সীমা কমে আসায় আবেদনকারীদের পূর্ণাঙ্গ কেস উপস্থাপনের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ছে। ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা, পর্যাপ্ত আইনি সহায়তার অভাব এবং দোভাষীর সংকটে অনেকেই নিজেদের বাস্তব ঝুঁকি সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারছেন না। এর ফলে প্রকৃত আশ্রয়প্রার্থী হয়েও অনেকে প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন।
আরেকটি বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, আবেদন বাতিল হওয়ার পর বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীরা দ্রুত অবৈধ অবস্থানে পরিণত হচ্ছেন। এতে আটক, ডিটেনশন সেন্টারে প্রেরণ এবং জোরপূর্বক প্রত্যাবাসনের ঝুঁকি বাড়ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই প্রক্রিয়ায় মানবিক বিবেচনার ঘাটতি স্পষ্ট।
প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতিনিধিরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, নতুন নীতির ফলে অনেকে বিকল্প পথে কাজ খুঁজতে বা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাদের নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে তরুণ আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা ও মানসিক চাপ বাড়ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিবাসন নীতির কড়াকড়ি একদিকে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা জোরদার করলেও অন্যদিকে মানবিক আশ্রয় ব্যবস্থার মূল দর্শনকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি মূল্যায়ন আরও ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও স্বচ্ছ না হলে সংকট আরও গভীর হতে পারে।
এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন—ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নির্ভরযোগ্য আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা, কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উত্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।