বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বন্যার পানি নামার পর দূষিত পানির প্রভাব ও নলকূপের পানি দূষণের ফলে ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীও। শয্যা ও জনবল সংকট এবং নানা অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতালটিতে এখন ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
লক্ষ্মীপুরে ১৮ লাখ মানুষের চিকিৎসার সেবার একমাত্র ভরসাস্থল জেলা সদর হাসপাতাল। এটি ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও বর্তমানে হাসপাতালটিতে ভর্তি রয়েছে তিন শতাধিক রোগী। এতে শয্যা সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যা পরবর্তিতে পানি বাহিত রোগের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ। বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীও। গত ১০ দিনে ডায়রিয়া রোগের আক্রান্ত হয়ে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন ৬ শতাধিক রোগী। অথচ হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে মাত্র ১০টি। প্রতিদিনই ডায়েরিয়া ওয়ার্ডে গড়ে ভর্তি থাকে ৯০ থেকে ১০০ রোগী।
সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জহিরুল ইসলাম রনি বলেন, ভয়াবহ বন্যা পরবর্তীতে দূষিত পানির প্রভাব ও নলকূপের পানি দূষণের ফলে ডায়রিয়া রোগের রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আইডি ওয়ার্ড ১০ শয্যার হলেও বর্তমানে এই ওয়ার্ডে ১০০ রোগীর ওপরে ভর্তি আছে। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে শিশু। তাছাড়া মশার উপদ্রব বাড়তে শুরু করায় বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীরাও। যে পরিমাণে লক্ষ্মীপুরে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে, তাতে চিকিৎসা সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ওয়ার্ডে হাঁটার জায়গায় পর্য়ন্ত নেই। ডায়রিয়া ও পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগী মোকাবিলা করাটা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স লিলু রানী দাস বলেন, ‘যেভাবে রোগী চাপ বাড়ছে, তাতে রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দেয়াটা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনবল সংকট থাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে আমাদের। এরপরও রোগীর সেবা দিতে সাধ্যমত চেষ্টা করছি আমরা।’
রোগীর স্বজনরা জানালেন, হাসপাতালটিতে শয্যা সংকট থাকায় একই বেডে ৩ থেকে ৪ জন করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। এরপরও সংকুলন না হওয়ায় মেঝেতেও বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাদের। এতে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। স্যালাইন ও ওষুধ না পাওয়ারও অভিযোগ করেন অনেকে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন সুমাইয়া আক্তার বলেন, শয্যা সংকট থাকায় এই বেডে ৪ থেকে ৫ জন করে রোগী রাখা হচ্ছে। সেবিকারাও ঠিকমত রোগীদের সেবা দিচ্ছে না। প্রয়োজনীয় ওষুধও কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। তাছাড়া হাসপাতালের পরিবেশ নোংরা থাকায়, এখন নিজেরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
এদিকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা বলছেন, ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এজন্য হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করলেন রোগীরা।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অরুপ পাল বলেন, সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হলেও বর্তমানে তিনশতাধিক রোগী ভর্তিআছে। জনবল ও শয্যা সংকট থাকায় রোগীদের কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা প্রদানে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের। এরপরও তারা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ কবীর জানালেন, ধারণ ক্ষমতার চেয়েও তিনগুন রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসাসেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
চিৎিসক জনবল সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেয়া যাচ্ছে না স্বীকার করে সিভিল সার্জন জানান, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার অবহিত করা হলেও এখনও কোনো সমাধান মেলেনি। ভয়াবহ বন্যা পরবর্তীতে দুষিত পানির প্রভাবে রোগবালাই বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের বহির্বিভাগেই প্রতিদিন প্রায় ১২শ’ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। তার ওপরে রয়েছে মেডিসিন সংকট। এজন্য রোগীর চাহিদা অনুযায়ী ওষুধও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। হাসপাতালে আরও ওষুধের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান, সিভিল সার্জন।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও অবকাঠামোগত সুবিধা ছাড়া গত ২১ বছরেও মেলেনি প্রস্তাবিত জনবল, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসক। ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই এখনও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এর চিকিৎসা কার্যক্রম।