অতিরিক্ত প্রোটিনে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি? চিকিৎসকরা যা বলছেন-
প্রোটিন—শুনলেই চোখে ভাসে শক্ত পেশি, দ্রুত ওজন কমানো কিংবা ‘ফিট’ থাকার নিশ্চয়তা। জিমকালচার আর সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে প্রোটিন যেন সুস্বাস্থ্যের শর্টকাট। কিন্তু এই ‘অধিক ভালো’ ধারণাটাই কি নীরবে তৈরি করছে হৃদ্রোগের ঝুঁকি? চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ বলছে, প্রশ্নটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।
প্রোটিন: প্রয়োজন বনাম অতিরিক্ততা-মানবদেহে কোষ গঠন, হরমোন উৎপাদন, রোগপ্রতিরোধ—সবখানেই প্রোটিনের ভূমিকা অপরিহার্য। সাধারণভাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন শরীরের ওজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাত্রার প্রোটিনই যথেষ্ট। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় তখনই, যখন প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি—বিশেষ করে প্রাণিজ প্রোটিন—নিয়মিত খাদ্যতালিকায় ঢুকে পড়ে।
অতিরিক্ত প্রোটিন কীভাবে ঝুঁকি বাড়ায়?
চিকিৎসকদের মতে, অতিরিক্ত প্রোটিন সরাসরি হার্ট অ্যাটাক ঘটায়—এমন সরল সমীকরণ নেই। তবে কয়েকটি পরোক্ষ পথ দিয়ে হৃদ্যন্ত্রের ওপর চাপ বাড়াতে পারে:
স্যাচুরেটেড ফ্যাটের আধিক্য: লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত মাংস বা ফুল-ফ্যাট দুগ্ধজাত পণ্যে প্রোটিনের সঙ্গে স্যাচুরেটেড ফ্যাটও বেশি থাকে। এগুলো রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (LDL) বাড়িয়ে ধমনীতে চর্বি জমার ঝুঁকি বাড়ায়।
কিডনির ওপর চাপ: দীর্ঘদিন অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ কিডনিকে অতিরিক্ত পরিশ্রমে বাধ্য করে। কিডনি সমস্যার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগের যোগসূত্র আছে।
অ্যামিনো অ্যাসিডের ভারসাম্যহীনতা: অতিরিক্ত কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরে প্রদাহ (inflammation) বাড়াতে পারে, যা হৃদ্রোগের একটি বড় ঝুঁকিপর্যায়ক।
ফাইবারের ঘাটতি: উচ্চ প্রোটিন ডায়েটের চাপে শাকসবজি ও ফল কমে গেলে খাদ্যতালিকায় ফাইবারের অভাব হয়—যা হৃদ্স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
সব প্রোটিন কি একরকম?
চিকিৎসকরা জোর দিচ্ছেন প্রোটিনের উৎসের ওপর। উদ্ভিজ্জ প্রোটিন—ডাল, ছোলা, বাদাম, সয়াবিন—হৃদ্যন্ত্রের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ। এগুলোতে ফাইবার ও উপকারী ফ্যাট থাকে, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত প্রোটিন হৃদ্ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট: সতর্কতার জায়গা
জিমে যাওয়া তরুণদের মধ্যে প্রোটিন পাউডার বা সাপ্লিমেন্টের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। চিকিৎসকদের মতে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত সাপ্লিমেন্ট নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে—বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা কিডনির সমস্যা আছে।
তাহলে করণীয় কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাধান ‘প্রোটিন এড়ানো’ নয়, বরং সুষম গ্রহণ-
বয়স, ওজন ও শারীরিক পরিশ্রম অনুযায়ী প্রোটিনের পরিমাণ ঠিক করা
প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের মধ্যে ভারসাম্য রাখা
প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে প্রাকৃতিক উৎসে জোর দেওয়া
হৃদ্রোগের ঝুঁকি থাকলে ডায়েট বদলানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
শেষ কথা
প্রোটিন স্বাস্থ্যকর, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু অতিরিক্ত প্রোটিন, বিশেষ করে ভুল উৎস থেকে, ধীরে ধীরে হৃদ্যন্ত্রের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। ফিটনেসের নামে অতিরঞ্জন নয়, সচেতনতা আর ভারসাম্যই হতে পারে সুস্থ হৃদয়ের সবচেয়ে নিরাপদ পথ।