শীত আমাদের শরীরের ভেতর আনে এক নতুন ‘সিজন’
শীত যেন শুধু বাতাসে ঠান্ডা নিয়ে আসে না—আনে আমাদের শরীরের ভেতর এক নতুন আরেকটি ‘সিজন’। তাপমাত্রার সামান্য ওঠানামায়ই বদলে যায় রোগের আচরণ, অস্বস্তির তালিকা আর স্বাস্থ্যঝুঁকির ধরন। যেসব অসুস্থতা অন্য সময় তেমন গুরুত্ব পায় না, শীত এলেই সেগুলো হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এই নীরব মৌসুমে তাই প্রতিটি পরিবারকে প্রস্তুত থাকতে হয় মৌসুমি অসুস্থতার অদৃশ্য হামলার বিরুদ্ধে।
১) সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা: মৌসুমের ‘কমন ভিজিটর’
শীতে ভাইরাসের সক্রিয়তা বেড়ে যায়। ফলে সাধারণ ঠান্ডা, গলা ব্যথা, কাশি, নাক বন্ধ, জ্বর—এসব উপসর্গ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। যাতায়াত, অফিস-স্কুল, বাসাবাড়ির বন্ধ জানালা—সব মিলেই সংক্রমণ দ্রুত বাড়ে।
কি করবেন?
ভিড় এড়ানো, ঘন ঘন হাত ধোয়া
উষ্ণ পানি পান
হঠাৎ ঠান্ডায় বের না হওয়া
নাক-গলা ঢেকে রাখা
২) নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিস: ‘চাইল্ড-সিনিয়র’ ঝুঁকি বেশি
শীতকালে শিশু ও প্রবীণদের শ্বাসতন্ত্র বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। ঠান্ডা বাতাস ফুসফুসের প্রদাহ বাড়ায়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, মারাত্মক ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার ঝুঁকিও তৈরি হয়।
সতর্কতা:
শিশুদের বুকে-গলায় ঠান্ডা না লাগতে দেওয়া
স্যাঁতসেঁতে ঘর এড়ানো
অ্যাজমা রোগীদের ইনহেলার ব্যবহার নিয়মিত
জ্বর, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস দেখলে দ্রুত চিকিৎসা
৩) সাইনাস সমস্যা: ধুলো-ঠান্ডার যুগল আক্রমণ
শুষ্ক বাতাস, ধুলোবালু ও ঠান্ডার জন্য সাইনাস সহজে ব্লক হয়। ফলে মাথা ব্যথা, নাক বন্ধ, মুখ ভার হয়ে থাকা—এসব সমস্যা বাড়ে।
কি করবেন:
নাকে বাষ্প নেয়া
পর্যাপ্ত পানি
ধুলাবালু এড়াতে মাস্ক
ঘর একটু আর্দ্র রাখতে বোল পানি রেখে দেওয়া
৪) এলার্জি ও ত্বক শুকিয়ে যাওয়া
শীতে এলার্জি বাড়ে—ধুলো, উলের কাপড়, ঠান্ডা বাতাস সবই ট্রিগার হতে পারে। পাশাপাশি ত্বক শুষ্ক হওয়া, চুলকানি, ঠোঁট ফেটে যাওয়ার সমস্যাও বেশি।
সমাধান:
ময়েশ্চারাইজার নিয়মিত
হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার
অতিরিক্ত সাবান/হট শাওয়ার এড়িয়ে চলা
এলার্জি থাকলে নির্দিষ্ট কাপড় পরা
৫) জয়েন্ট পেইন: শীতে ‘পুরনো ব্যথা’ জেগে ওঠে
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও সাধারণ জয়েন্ট পেইন শীতে তীব্র হয়। ঠান্ডা তাপমাত্রায় পেশি শক্ত হয়ে যায়, রক্তসঞ্চালন কমে, ফলে ব্যথা বাড়ে।
যা করবেন:
হালকা ব্যায়াম
শরীর উষ্ণ রাখা
গরম পানিতে সেঁক
প্রয়োজন হলে অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ