

হৃৎপিণ্ড হল আমাদের শরীরের “মোটর”। অবিরাম রক্ত সঞ্চালন চালিয়ে রাখা এই অঙ্গ ছাড়া জীবন সম্ভব নয়। তবে আধুনিক জীবনধারা, মানসিক চাপ, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও অপ্রতুল ব্যায়ামের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি ক্রমবর্ধমান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি সময়মতো সচেতনতা ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণ করা হয়।
১) হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যহানি হয় যেসব কারণে
প্রধান কারণসমূহ:
অস্বাস্থ্যকর খাদ্য: অতিরিক্ত চর্বি, তেল, জাঙ্ক ফুড
অল্প বা কোন ব্যায়াম না করা
উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল বৃদ্ধি
ধূমপান ও মাদকদ্রব্য ব্যবহার
মানসিক চাপ ও অনিদ্রা
পরিসংখ্যান মতে:
প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ জনের বেশি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে
হার্ট অ্যাটাকের কারণে মৃতদের মধ্যে প্রায় ৩০% বয়স ৫০-এর নিচে
২) হৃদরোগের লক্ষণগুলো চিনে নিন
হঠাৎ বা দীর্ঘস্থায়ী বুকের ব্যথা
শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি, ঘন ঘন ঘাম হওয়া
হঠাৎ মাথা ঘোরা বা হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হওয়া
দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলায় চাপ অনুভূতি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লক্ষণগুলো উপেক্ষা করা বিপজ্জনক। কোনো সন্দেহ হলে ডাক্তারের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ জরুরি।
৩) প্রতিরোধ ও জীবনধারার পরিবর্তন
খাদ্যাভ্যাস
সুষম খাদ্য: তাজা সবজি, ফল, হোল গ্রেইন, লিন প্রোটিন
লবণ ও চিনি সীমিত ব্যবহার
তেল-মশলার পরিমাণ কমানো
প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলা
ব্যায়াম ও শরীরচর্চা
সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মডারেট ইন্টেনসিটি ব্যায়াম: হাঁটা, সাঁতার, সাইক্লিং
যোগা বা মেডিটেশন: মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে
স্ট্রেচিং ও হালকা শক্তি প্রশিক্ষণ
মানসিক স্বাস্থ্য
ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
ঘুমের পর্যাপ্ত সময়: ৭-৮ ঘণ্টা
মানসিক চাপ কমানো: হবি, সামাজিক মিলন
৪) নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল, শর্করা পরিমাপ
বয়স অনুযায়ী ইকোকার্ডিওগ্রাম বা স্ট্রেস টেস্ট
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ
৫) পরিবারের ও সামাজিক দায়িত্ব
পরিবারের সবাইকে স্বাস্থ্য সচেতন করা
খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাসে সহায়তা
নিয়মিত ব্যায়াম ও হালকা হাঁটার জন্য উৎসাহ দেওয়া
মানসিক ও সামাজিক সহায়তা নিশ্চিত করা
~ কুইক টিপস বক্স: সুস্থ হৃদরোগের রুটিন
প্রাতঃকাল: হালকা হাঁটা ২০ মিনিট
খাবার: ফল, সবজি, লিন প্রোটিন, কম চর্বি
পানীয়: পর্যাপ্ত পানি, সীমিত কফি/চা
রাত: পর্যাপ্ত ঘুম ও স্ট্রেচিং
সাপ্তাহিক: ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা
চূড়ান্ত পরামর্শ
হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখা মানে দীর্ঘায়ু ও গুণগত জীবন নিশ্চিত করা। খাদ্য, ব্যায়াম, মানসিক স্বাস্থ্য ও নিয়মিত পরীক্ষা, এই চারটি চাবিকাঠি অনুসরণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।