আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার কেন্দ্রে ডুরান্ড লাইন

আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার কেন্দ্রে ডুরান্ড লাইন
প্রকাশিত

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যকার সীমান্ত বহুদিন ধরেই উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে গত অক্টোবরেই ভয়াবহ সংঘর্ষে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

কাবুল থেকে এএফপি জানায়, আফগানিস্তানের আগের প্রশাসনগুলোর মতোই বর্তমান তালেবান সরকারও ‘ডুরান্ড লাইন’ নামে পরিচিত এই সীমান্তকে স্বীকৃতি দেয় না। তারা একে ‘কাল্পনিক রেখা’ বলে দাবি করে।

অন্যদিকে পাকিস্তান বলছে, এই সীমান্ত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তুরস্কে শান্তি আলোচনার নতুন পর্ব শুরুর আগে সীমান্ত নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—

ডুরান্ড লাইন কী?

১৯ শতকের শেষ দিকে বৃটিশ কূটনীতিক স্যার মার্টিমার ডুরান্ড আফগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করে এই সীমান্ত নির্ধারণ করেন।

ইরান থেকে শুরু হয়ে চীন পর্যন্ত বিস্তৃত এই রেখা ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ। পাহাড়ি অঞ্চল পেরিয়ে এটি পাখতুন জনগোষ্ঠীকে বিভক্ত করেছে। তালেবানদের প্রধান সমর্থন এই জনগোষ্ঠী থেকেই আসে।

এই সীমান্ত আফগানিস্তানকে সমুদ্র থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। এমনকি অনেক স্থানে একই বাড়িঘর দুই দেশের মাঝেই পড়ে গেছে।

পাকিস্তান ইতোমধ্যে সীমান্তের বড় অংশে কাঁটাতার ও পরিখা তৈরি করেছে। আফগানিস্তান বারবার এর প্রতিবাদ জানিয়েছে।

কারা এই সীমান্ত পেরোয়?

পাকিস্তানে লাখ লাখ আফগান কয়েক দশক ধরে বসবাস করছে। অনেকেরই কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের অনেককে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ আফগান পাকিস্তান থেকে নিজ দেশে ফিরে গেছে।

তবে, ছয়টি সরকারি সীমান্তচৌকি থাকলেও অনেকেই অনানুষ্ঠানিক পথে যাতায়াত করে।

সীমান্তটি বাণিজ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার পাকিস্তান। ফল-মূলসহ নানা পণ্যবাহী ট্রাক এই পথে নিয়মিত যাতায়াত করে।

আফগানিস্তান-পাকিস্তান চেম্বার অব কমার্স বলছে, ১২ অক্টোবর সীমান্ত বন্ধ হওয়ার পর প্রায় ৫ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এখন শুধু পাকিস্তান থেকে ফেরত যাওয়া আফগানদেরকেই সীমান্ত পার হওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

উত্তেজনার কারণ কী?

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর নিরাপত্তা উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। 

ইসলামাবাদ বলেছে, তারা ‘সন্ত্রাসী আস্তানা’ লক্ষ্য করে হামলা করেছে। এতে প্রায় ৫০ জন নিহত হয়।

পাকিস্তান অভিযোগ করে, আফগানিস্তান পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি)সহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে, যারা আফগান ভূখণ্ড থেকে হামলা চালায়।

তালেবান সরকার এসব গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পাশাপাশি তারা ‘ডুরান্ড লাইন’কে স্বীকৃতি দেয় না এবং একে ‘ঔপনিবেশিক যুগের অবশিষ্ট’ বলে অভিহিত করে।

আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব গত ১৯ অক্টোবর কাতার ঘোষিত যুদ্ধবিরতিতে সীমান্ত শব্দটি ব্যবহারের বিরোধিতা করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এটিকে কখনোই ‘সীমান্ত’ বলা হবে না।’

এখন কী হতে পারে?

অক্টোবরে কাবুলে বিস্ফোরণের পর আফগানিস্তানের পাল্টা আক্রমণে সীমান্তে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে ৭০ জনের বেশি নিহত হয় এবং আহত হয় শত শত মানুষ।

তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি আপাতত কার্যকর থাকলেও গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আলোচনা স্থায়ী চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি।

বৃহস্পতিবার আবার উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। 

দুই দেশই হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে চুক্তি না হলে ফের সংঘর্ষ শুরু হতে পারে।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com