প্রযুক্তি যুদ্ধে মুখোমুখি দুই পরাশক্তি

প্রযুক্তি যুদ্ধে মুখোমুখি দুই পরাশক্তি

যুক্তরাষ্ট্র–চীন: প্রযুক্তিগত শীতলযুদ্ধের নতুন অধ্যায়

আধুনিক প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ—এআই, সেমিকন্ডাক্টর, সুপারকম্পিউটিং, সাইবার সিস্টেম—এখন এই প্রতিযোগিতার মূল মঞ্চ
প্রকাশিত

বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন আর শুধু সামরিক বা বাণিজ্যিক সীমায় আটকে নেই। দুই মহাশক্তির এই লড়াই ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক অর্থনীতি ও কূটনীতির চেহারা পাল্টে দেবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

টানাপোড়েনের আসল কেন্দ্র-

গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র উন্নত AI-চিপ ও সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি চীনের কাছে পৌঁছানো সীমিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। রপ্তানি-নিয়ন্ত্রণ, ব্ল্যাকলিস্ট, দেশভিত্তিক লাইসেন্স—সব দিকেই চাপ বাড়ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও ‘টেক-স্বনির্ভরতা’ নীতি জোরদার করেছে, যেখানে বিদেশি প্রযুক্তি নির্ভরতা কমানো, উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো এবং কাঁচামালের ওপর নিয়ন্ত্রণ শক্ত করা হচ্ছে।

এই দ্বিপক্ষীয় পদক্ষেপগুলোর ফলে বিশ্ব প্রযুক্তি বাজার দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

সাম্প্রতিক উত্তেজনার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ধাপ-

যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে উচ্চক্ষমতার চিপ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যা এআই গবেষণা ও সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চীনের গতি কমিয়ে দিতে পারে।

মার্কিন কংগ্রেস আরও কঠোর আইন পাসের উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে বিশেষ অনুমতি ছাড়া এ ধরনের প্রযুক্তি বাণিজ্য করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

প্রতিক্রিয়ায় চীন সরকারি প্রকল্প, ডেটা সেন্টার ও সংবেদনশীল খাতে বিদেশি চিপ ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে এবং তথ্য-প্রযুক্তি সরঞ্জামে নিজস্ব ব্র্যান্ডকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

“রেয়ার আর্থ” বা কৌশলগত খনিজ রপ্তানির ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে বেইজিংও পাল্টা চাপের অবস্থান তৈরি করছে।

<div class="paragraphs"><p>সারাবিশ্বে পড়ছে প্রভাব</p></div>

সারাবিশ্বে পড়ছে প্রভাব

অর্থনীতি ও ব্যবসায় কী প্রভাব পড়ছে-

এই প্রযুক্তিগত টানাপোড়েনের ফলে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিতে শুরু করেছে।

  • সাপ্লাই-চেইন ভাঙন: 

    একই প্রযুক্তির জন্য আলাদা মান, আলাদা সোর্সিং ও আলাদা বাজার তৈরি হচ্ছে। ফলে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রযুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।

  • ব্যবসায়িক অনিশ্চয়তা: 

বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ব্যবসা ও রাজনৈতিক দুই চাপেই আছে—একদিকে বাজার হারানোর ভয়, অন্যদিকে সরকারের কড়া নিয়ম মানার বাধ্যবাধকতা।

  • গবেষণা-উদ্ভাবনে ধাক্কা:

 আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কমে যাওয়ায় গবেষণায় গতি শ্লথ হচ্ছে, বিশেষ করে এআই ও সুপারকম্পিউটিং খাতে।

<div class="paragraphs"><p>&nbsp;দুই মহাশক্তির&nbsp;লড়াই&nbsp;বৈশ্বিক অর্থনীতির&nbsp;চেহারা পাল্টে দিচ্ছে</p></div>

 দুই মহাশক্তির লড়াই বৈশ্বিক অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দিচ্ছে

ভূরাজনৈতিক পরিণতি-

যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রযুক্তিগত শীতলযুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে বিশ্ব রাজনীতি তিন ভাগে যেতে পারে-

  • একটি ব্লক যুক্তরাষ্ট্র-নির্ভর প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম;

  • অন্যটি চীন-নেতৃত্বাধীন বিকল্প প্ল্যাটফর্ম;

  • মাঝখানে থাকবে মিত্র দেশগুলো, যারা দুপক্ষের চাপের মধ্যে নিজেদের শিল্পনীতি ও নিরাপত্তা স্বার্থ সামঞ্জস্য করতে বাধ্য হবে।

এ বিভাজন বিশ্ব কূটনীতিকে আরও জটিল করবে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতিতেও নতুন ধরনের সমীকরণ তৈরি করবে।

দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশের বাস্তব প্রভাব-

বাংলাদেশ সরাসরি চিপ-উৎপাদনকারী দেশ না হলেও, বৈশ্বিক টেক-যুদ্ধের কারণে স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন প্রভাব পড়তে পারে-

স্মার্টফোন, ডিভাইস ও ইলেকট্রনিক্সের দাম বাড়তে পারে, কারণ কোম্পানিগুলোকে বিকল্প উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহ করতে হবে।

ডেটা-সেন্টার, ক্লাউড, আইটি খাত ও স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে সরবরাহ বিলম্ব বা প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে।

বৈশ্বিক বাণিজ্য-অস্থিরতায় রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতিতে চাপ বাড়তে পারে।

উপসংহার-

বর্তমান প্রতিযোগিতা শুধু দুটি দেশের লড়াই নয়; এটি ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগত ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে পুরো বৈশ্বিক ব্যবস্থার রূপান্তর। কে কোন দিক বেছে নেবে, কোন নিয়মে প্রযুক্তি বাজার পরিচালিত হবে, এবং কীভাবে দেশগুলো কৌশলগত চাপ সামলাবে—এই তিনটি প্রশ্নই আগামী দশকের আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রধান নির্ধারক হয়ে উঠবে।

logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com