জঙ্গিবিরোধী অভিযানে কাশ্মীরে প্রশাসনের বুলডোজার

জঙ্গিবিরোধী অভিযানে কাশ্মীরে প্রশাসনের বুলডোজার
প্রকাশিত

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর, নিরাপত্তা বাহিনী জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার করেছে। ইতোমধ্যে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন। এই পদক্ষেপ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উপত্যকার রাজনৈতিক নেতারা।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২২ এপ্রিলের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির পর উপত্যকাজুড়ে সন্ত্রাসীদের খোঁজে ব্যাপক তল্লাশি চলছে। প্রশাসন বলছে, জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত সন্দেহভাজনদের বাড়িঘর ভেঙে দিয়ে আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও বাড়ি গুঁড়িয়ে দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ।

যাদের বিরুদ্ধে স্কেচ প্রকাশ করা হয়েছে, তাদের পরিবারের বাড়িও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এমনই এক ঘটনার শিকার হন কুপওয়ারা জেলার কালারুস এলাকার ফারুক আহমেদের পরিবার। পুলিশ বলছে, ফারুক ১৯৯০ সালে পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং আর তার খোঁজ মেলেনি। তার পরিবারের সদস্যরা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, বহু বছর ধরে ফারুকের কোনো খোঁজ নেই, তবু তাদের বসতবাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এক হতাশ কণ্ঠে তারা প্রশ্ন তোলেন, "আমাদের অপরাধ কী? এখন আমরা কোথায় যাব?"

কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ সতর্ক করে বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই প্রয়োজন হলেও নির্বিচারে পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না। তিনি বলেন, "উপত্যকার সাধারণ মানুষ নিরপরাধ নাগরিক হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে, একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এই স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন কাজে লাগাতে হবে। ভুল পদক্ষেপে যেন নিরপরাধ মানুষের উপর আঘাত না আসে।" (সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)

কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতৃত্বের আরও বক্তব্য এসেছে। পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (পিডিপি) নেত্রী মেহবুবা মুফতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'এক্স'-এ লিখেছেন, “সরকারের উচিত শান্তিপ্রিয় নাগরিক আর সন্ত্রাসীদের মধ্যে পার্থক্য বোঝা। যেসব পদক্ষেপে নিরপরাধ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়, তা জঙ্গিদেরই সুবিধা করে দেবে।” একই ধরনের মন্তব্য করেছেন পিপলস কনফারেন্স নেতা সাজ্জাদ লোন এবং হুরিয়ত কনফারেন্সের চেয়ারম্যান মিরওয়াইজ উমর ফারুক।

জানা গেছে, বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ায় আইনশৃঙ্খলার পুরো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। নির্বাচিত সরকার থাকলেও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নেই। (সূত্র: দ্য হিন্দু, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)

পহেলগাঁও হামলার পর নিরাপত্তাবাহিনী ইতিমধ্যে পাঁচশটিরও বেশি জায়গায় অভিযান চালিয়েছে এবং হাজারের বেশি মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের পরিবারের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে প্রশাসন, যার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

এদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং আন্তর্জাতিক মহলের কিছু পর্যবেক্ষকও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের বক্তব্য, “কলেক্টিভ পানিশমেন্ট (সমষ্টিগত শাস্তি)” আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী। (সূত্র: Amnesty International statement, 2024)

প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ কাশ্মীরের ভঙ্গুর পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com