
মর্গ থেকে চুরি হওয়া মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কালোবাজারে বিক্রির ঘটনায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা চালানোর সুযোগ পেল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। ম্যাসাচুসেটস সুপ্রিম জুডিশিয়াল কোর্ট সোমবার নিম্ন আদালতের একটি রায় বাতিল করে দিয়েছে, যা এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আইনি পদক্ষেপ থেকে সুরক্ষা দিয়েছিল।
আদালত রায় দিয়েছে যে, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ‘আঅ্যানাটমিক্যাল লিফট প্রোগ্রাম’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মার্ক এফ, সিচেত্রিও এই ঘটনার জন্য আইনগতভাবে দায়ি থাকবেন।
প্রধান বিচারপতি নট এল, কাফকার সোমবার তার রায়ে এই মামলাটিকে কয়েক বছর ধরে চলা একটি ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা বলে বর্ণনা করেছেন। এই পরিকল্পনায় মর্গটির সাবেক ম্যানেজার সেট্রিক গজ গবেষণা ও শিক্ষাদানের জন্য রাখা দেহাবশেষ থেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে চুরি করতেন এবং কালোবাজারে বিক্রি করতেন।
হার্ভার্ড বর্তমানে ৪৭ জন পরিবার সদস্যের পক্ষ থেকে দায়ের করা ১২টি মামলার মুখোমুখি। এসব মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, গজ এবং তার সহযোগিরা ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মৃতদেহগুলোর সঙ্গে অসঙ্গত আচরণ করেছেন। মামলাগুলিতে হার্ভার্ডের মর্গ সুরক্ষায় অবহেলা এবং ‘আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যানাটমি’র নির্দেশনা উপেক্ষা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিচারপতি কাফকার পরিবারগুলোর দাবির সঙ্গে একমত পোষন করে তার রায়ে লেখেন যে, হার্ভার্ডের দান করা মানব দেহাবশেষের প্রতি সখ্যানজনক আচরণ এবং নিষ্পড়ির জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল এবং হার্ভার্ড নিজেই স্বীকার করেছে যে, তারা এই ফেত্রে শোচনীয়ভাবে বার্থ হয়েছে।
এই চুরির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, চুরি করা মাথা, মস্তিষ্ক, ত্বক এবং হাড়সহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পাচার করতেন, যার ফলে মামলাটি ফেডারেল বিচার ব্যবস্থার অধীনে আসে।
রায় অনুযায়ী, একজন ষড়যন্ত্রকারী গজের কাছ থেকে ৬০০ ডলারে বিচ্ছিন্ন করা দুটি মুখ কিনেছিলেন। লজ ওই ষড়যন্ত্রকারীকে অন্য মানুষের ত্বক চামড়ায় রূপান্তর করার জন্য একটি তৃতীয় পক্ষকে সরবরাহ করার উদ্দেশ্যে মানব ত্বক খুঁজে পেতে সহায়তা করেছিলেন।
আরেকজন ষড়যন্ত্রকারী গজ এবং তার স্ত্রীকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য পেপ্যালের মাধ্যমে ৩৯টি কিস্তিতে মোট ১৩৭,০০০ ডলার প্রদান করেছিলেন।
রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, এই লেনদেনগুলোর মধ্যে একটির মেমোতে লেখা ছিল ‘১১,০০০ হেড নাম্বার ৭’ এবং অন্য একটি লেনদেনে ‘১২০০ ব্রেইনস’।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল ২০২৩ সালে লজকে বরখাস্ত করে এবং তার এই কাজকে নৈতিকভাবে নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করে। লছ মে মাসে চুরি যাওয়া মানব দেহাবশেষ আন্তারাজ্য পরিবহনের একটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। এই অপরাধের জন্য তাকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল এবং আড়াই লখ ডলার জরিমানা হতে পারে।
অন্যসূত্র: আল জাজিরা।