

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি দূত স্টিভ উইটকফ এবং প্রেসিডেন্টের জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে তার একটি 'খুবই গঠনমূলক' ফোনালাপ হয়েছে।
জেলেনস্কি বলেছেন, তারা আলোচনা করেছেন কীভাবে রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করার সম্ভাব্য যে কোনও চুক্তি মেনে চলবে তা নিশ্চিত করা যায়। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে তিনি 'দৃঢ়প্রতিজ্ঞ'।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারাও মায়ামি থেকে এ ফোন কলে যোগ দেন। এ কর্মকর্তারা মায়ামিতে রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তৃতীয় দিনের আলোচনায় অংশগ্রহণ করছেন।
তবে মস্কো কোনো ধরনের ছাড় দিতে রাজি নয় বলেই মনে হচ্ছে, এবং তারা ইউক্রেন জুড়ে ব্যাপক বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে।
জেলেনস্কি এক্স-এ বলেছেন, 'সত্যিকারের শান্তি অর্জনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কাজ চালিয়ে যেতে ইউক্রেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।'
তিনি বলেন, 'রক্তপাত বন্ধ করা এবং রাশিয়ার নতুন করে পূর্ণ মাত্রার হামলার হুমকি দূর করতে পারে— এমন অনেক বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এবং গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্ট পর্যালোচনা করেছি।'
এদিকে রাশিয়া রাতভর ইউক্রেনের ওপর আরও বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এ হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিত্ররা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জানান, তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তার প্রতি 'পূর্ণ সংহতি' জানিয়েছেন।
মাখোঁ আরও বলেন, 'উত্তেজনা কমাতে এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে ফ্রান্স সব অংশীদারের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'
এর আগে ম্যাঁখো নিশ্চিত করেছেন যে তিনি আগামী সোমবার লন্ডনে জেলেনস্কি, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎর্স সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেবেন।
চার নেতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের চলমান আলোচনাগুলো নিয়ে বৈঠক করবেন। তাদের এ বৈঠকের লক্ষ্য যুদ্ধ-পরবর্তী ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি চুক্তি করা।
এর দুই সপ্তাহ আগে তারা ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছিলেন, যেখানে যুদ্ধবিরতি হলে একটি ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউক্রেনে মোতায়েন করা যেতে পারে—এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।
স্যার কিয়ার বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনকে নিজের ভবিষ্যৎ নিজেকেই নির্ধারণ করতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, 'কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং'-এর শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে 'অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা' পালন করবে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এমন শান্তিরক্ষী বাহিনীর ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে মোতায়েন করা যে কোনো সেনা সদস্যই রাশিয়ার কাছে 'বৈধ লক্ষ্যবস্তু' হবে।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, শুক্রবার রাতে রাশিয়া ৬৫৩টি ড্রোন এবং ৫১টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
একটি হামলা কিয়েভের দক্ষিণ-পশ্চিমে ফাস্তিভ শহরের একটি রেলওয়ে হাবে আঘাত হানে, যেখানে প্রধান স্টেশন ভবনটি ধ্বংস করা হয় এবং একাধিক রেলগাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রুশ হামলায় দেশের আটটি অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট সৃষ্টি হয়েছে।
রাশিয়া বলেছে, তাদের সর্বশেষ হামলাগুলো সামরিক–শিল্প কারখানা, জ্বালানি অবকাঠামো এবং বন্দর সুবিধাসহ বিভিন্ন স্থাপনাকে লক্ষ্য করেই চালানো হয়েছে।
মস্কোতে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি না হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের আলোচকরা রাশিয়াকে 'দীর্ঘমেয়াদি শান্তির প্রতি গুরুতর অঙ্গীকার' দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত শান্তি প্রস্তাব গ্রহণে ইউক্রেনকে রাজি করাতে মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে ফ্লোরিডায় চলা আলোচনা তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে উইটকফ জানান যে ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব রুস্তেম উমেরভের সঙ্গে তাঁর দুই দিনের বৈঠক "গঠনমূলক" ছিল।
বিবৃতিতে বিশদ বিবরণ না দিয়ে বলা হয়েছে যে উইটকফ ও উমেরভ "নিরাপত্তা ব্যবস্থার কাঠামোর বিষয়ে একমত হয়েছেন" এবং "একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করেছেন"।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুদ্ধ শেষ করার বিষয়টি নির্ভর করছে রাশিয়ার "উত্তেজনা কমানো ও হত্যা বন্ধের দিকে পদক্ষেপ" নেওয়ার প্রস্তুতির ওপর।
খবর -বিবিসি