১০০ কোটি ডলার ব্যয়, ২২ বছর অপেক্ষা: খুলল সর্ববৃহৎ ‘গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম’

১০০ কোটি ডলার ব্যয়, ২২ বছর অপেক্ষা: খুলল সর্ববৃহৎ ‘গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম’
প্রকাশিত

দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ও ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত বিশ্বের বৃহত্তম প্রাচীন সভ্যতাভিত্তিক জাদুঘর অবশেষে চালু হলো। গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম (জিইএম) নামের জাদুঘরটি মিশরে অবস্থিত গিজার পিরামিডের পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে। শনিবার (১ নভেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে এটি খুলে দিয়েছে মিশর সরকার। এ উপলক্ষে দেশজুড়ে ঘোষণা করা হয়েছে সরকারি ছুটি।

২২ বছর আগে ২০০২ সালে মিশর সরকার জাদুঘরটির নকশার জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করে এবং পরে চার সদস্যের স্থাপত্য সংস্থাকে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জাদুঘরের নকশা করার জন্য নির্বাচিত করা হয়। আয়ারল্যান্ডের রোইসিন হেনেঘানকে ফোন কলে যখন জানানো হয় যে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন, তখন তিনি ভেবেছিলেন এটি রসিকতা। পরে কর্মকর্তাদের তিনি ফোন করে নিশ্চিত হন যে এটি আসলে সত্য।

তাদের প্রস্তাব ১৫৫৬টি ডিজাইনের মধ্য থেকে নির্বাচিত হয়। তবে প্রকল্পটি বাস্তব রূপ নিতে ২০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। বিপুল অর্থ ব্যয়, রাজনৈতিক পরিবর্তন, ২০১১ সালের আরব বসন্ত, ২০১৩ সালের সামরিক অভ্যুত্থান এবং কোভিড-১৯ মহামারির মতো নানা বাধা এই প্রকল্পকে বিলম্বিত করে।

স্থাপত্যের বিস্ময়: প্রাচীন সভ্যতার আধুনিক উপস্থাপনা
গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামকে বলা হচ্ছে “প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার স্থায়িত্ব ও মহিমার প্রতীক।” জাদুঘরটি ২.৫৮ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে তৈরি, যেখানে মিশরের প্রাক-রাজবংশীয় যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ সাল) থেকে কপটিক যুগ (খ্রিষ্টাব্দ সপ্তম শতক) পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ প্রত্নবস্তু সংরক্ষিত থাকবে।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো “তুতানখামেন গ্যালারি”, যেখানে রাজার সমাধি থেকে পাওয়া ৫০০০টি নিদর্শন প্রদর্শিত হয়েছে। জাদুঘরের বাইরে রয়েছে সুন্দরভাবে সাজানো বাগান ও একটি খোলা প্লাজা, যা দর্শনার্থীদের স্বাগত জানায়। তবে, এর প্রবেশমুখে রয়েছে বিশাল ৩৬ ফুট উঁচু দ্বিতীয় রামেসিসের মূর্তি, আর অভ্যন্তরে রয়েছে পিরামিড অনুকরণে তৈরি ত্রিভুজাকৃতি নকশা ও প্রাকৃতিক আলোর উজ্জ্বল পরিবেশ, যা দর্শকদের অভিভূত করবে।

প্রাকৃতিক আলো প্রবেশের জন্য মূলত ছাদে ভাঁজ রাখা হয়েছে। বলা হচ্ছে, পাথরের শিল্পকর্মগুলো চিত্রকলার মতো জৈব শিল্পকর্মের তুলনায় সূর্যের সংস্পর্শে কম ঝুঁকিপূর্ণ। স্থপতি হেনেঘান বলেন, ‘আমরা এমনভাবে ডিজাইন করেছি যাতে প্রাকৃতিক আলো মিশে যায় প্রাচীন পাথরের আবহে—যেন দর্শকরা সর্বদা কৃত্রিম আলোয় সীমাবদ্ধ না থাকেন।’

জাদুঘরটির অন্যতম আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো- একটি ছয় তলা সিঁড়ি। এটি জাদুঘরবাসীদের বিপরীত কালানুক্রমিক ক্রমে সাজানো পাথরের স্মৃতিস্তম্ভ এবং ফারাও মূর্তিগুলোর পাশ দিয়ে নিয়ে যায়। এর চূড়ায় রয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম। এখান থেকে মাত্র এক মাইল দূরে গিজা পিরামিড কমপ্লেক্সের সরাসরি এবং অবাধ দৃশ্য দেখা যায়।

বিশ্বের সাত আশ্চর্যকে কাছ থেকে দেখা
বিশ্বের সাত আশ্চর্যের একটি গিজার পিরামিডের পাশে নতুন এই জাদুঘর নির্মাণ ছিল স্থপতিদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। তারা এমনভাবে ছাদের ঢাল তৈরি করেছেন, যাতে সেটি গ্রেট পিরামিডের শীর্ষবিন্দুর সঙ্গে সোজা রেখায় যুক্ত হয়, কিন্তু কখনোই সেটিকে অতিক্রম না করে। ফলে জাদুঘরটি আকারে বিশাল হলেও পিরামিডের ঐতিহাসিক মহিমাকে ছাপিয়ে যায় না। হেনেঘান বলেন, ‘আমরা চাইনি আমাদের স্থাপনা পিরামিডকে ছাপিয়ে যাক। আমরা কেবল মরুভূমির প্রান্তে এক নতুন সীমারেখা তৈরি করেছি।’

জাদুঘরের অভ্যন্তরে রয়েছে ১৭টি সংরক্ষণাগার ও গবেষণাগার, যেখানে হাজার বছরের পুরোনো প্যাপিরাস পাণ্ডুলিপি, বস্ত্র, মৃৎশিল্প, সারকোফেগাস এবং মমি সংরক্ষণ করা আছে।

৬২ বছর বয়সী হেনেঘান বলেন, ‘বড় প্রকল্পগুলো সময়সাপেক্ষ। তবে যদি সময় নিয়ে সঠিকভাবে করা যায়, তাহলে সেটাই সার্থকতা। আজও যদি আমাকে আবার এই মিউজিয়াম ডিজাইন করতে বলা হয়, আমি খুব বেশি কিছু পরিবর্তন করব না। আমি মনে করি প্রকল্পের অন্তর্নিহিত কাঠামো খুবই শক্তিশালী এবং আমি মনে করি এটি বছরের পর বছর ধরে টিকে আছে।’

সূত্র: সিএনএন

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com