কর্মী ছাঁটাই নিয়ে নতুন তথ্য জানাল ইনটেল

কর্মী ছাঁটাই নিয়ে নতুন তথ্য জানাল ইনটেল
প্রকাশিত

২০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের খবর উড়িয়ে দিয়েছেন ইনটেলের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ডেভিড জিন্সনার। তিনি বলে কর্মী ছাঁটাইয়ের এই দাবি ‘ভুল।’ তবে তিনি এটিও নিশ্চিত করেছেন, কম্পানির বৃহত্তর পুনর্গঠনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এখনও কর্মী ছাঁটাই করা হচ্ছে। 

বিশ্ববিখ্যাত চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইনটেল চলতি সপ্তাহেই তাদের মোট কর্মীর ২০ শতাংশেরও বেশি ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গ।

এর ফলে ২০ হাজারেরও বেশি কর্মী চাকরি হারাতে পারেন, যা ইনটেলের  ইতিহাসে অন্যতম বড় ছাঁটাই। 

প্রতিষ্ঠানটির খরচ কমানো এবং প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস করার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। এর আগে ২০২৪ সালের আগস্টে প্রায় ১৫ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছিল ইনটেল। প্রশাসনিক, বিপণন, বিক্রয় ও সহায়ক বিভাগের কর্মীরা চাকরি হারান তখন।

উৎপাদন ও প্রকৌশল বিভাগগুলোকে তুলনামূলকভাবে ছাঁটাই থেকে রক্ষা করা হয়। কারণ ইনটেল তাদের ফাউন্ড্রি (চিপ) ব্যবসার ওপর আস্থা রাখছে এবং প্রতিযোগিতামূলক পণ্য উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছে। নির্বাহীরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেমিকন্ডাক্টর জায়ান্ট ইনটেল বড় ধরনের রূপান্তরের পথে হাঁটছে। আর এর প্রথম ধাপ হিসেবে প্রতিটি বিভাগ এখন নিজের কাঠামো খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছে কম্পানিটি।

কিছু কর্মীকে স্বেচ্ছামূলক প্রস্থান (ভলান্টারি বাইআউট) বা সেচ্ছায় চাকরি ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে, তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে—সব অনুরোধই গৃহীত হবে না। আগের চর্চার বিপরীতে, এবার কোনো আগাম অবসর সুবিধা দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে ইনটেল। আগাম অবসর দেওয়াকে এখন তারা একটি ‘ভুল পদক্ষেপ’ হিসেবে বিবেচনা করছে, যা ফলে কম্পানি মূল্যবান অভিজ্ঞতা হারিয়েছে। 

গত বৃহস্পতিবার ইনটেলের সদ্যনিযুক্ত সিইও লিপ-বু ট্যান ১ হাজার ২০০ শব্দের এক চিঠিতে বৃহৎ রূপান্তর পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। যেখানে কাঠামোগত ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হয়—উদ্দেশ্য, ইনটেলকে আবার প্রতিযোগিতার পথে ফিরিয়ে আনা।

তবে, সে চিঠিতে কারা এই পরিবর্তনের আওতায় পড়বেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু ছিল না।

ট্যান লিখেছিলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলো আমাদের কর্মীবাহিনী কমিয়ে দিবে।’ যদিও নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করেননি। তিনি জানান, ছাঁটাই শুরু হবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে এবং পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব তা সম্পন্ন করা হবে। ট্যান এবং সিএফও ডেভিড জিন্সনার পুনরায় পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। কিন্তু কোন বিভাগ সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে বা কোথায় হবে—তা স্পষ্ট করেননি। বর্তমানে ইনটেলের বিশ্বব্যাপী কর্মী সংখ্যা প্রায় ১ লাখ নয় হাজার।

এই পদক্ষেপগুলো মূলত ব্যয় নিয়ন্ত্রণের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। ট্যান ঘোষণা করেছেন, ২০২৫ সালে অপারেটিং খরচ কমিয়ে ১৭ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৬ সালে ১৬ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এর পাশাপাশি চলতি বছর পুঁজি খরচেও ২ বিলিয়ন ডলার কমানো হবে।

ইতোমধ্যে কম্পানিটি গত এক বছরে কর্মীদের নানা সুযোগ-সুবিধাও কমিয়েছে—যেমন পরিবহন সুবিধা এবং ফ্রি সার্ভিস। গত নভেম্বরে কর্মীদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর ইসরায়েলে কার বেনিফিট পুনরায় চালু করা হয় এবং ফ্রি কফি-চা সুবিধাও ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

মাত্র পাঁচ সপ্তাহ আগে সিইও হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া ট্যান লিখেছেন, ‘আমাদের আমাদের শিকড়ে ফিরতে হবে এবং আমাদের প্রকৌশলীদের ক্ষমতা দিতে হবে।’ তিনি কম্পানির কর্পোরেট সংস্কৃতিকে ‘অতিমাত্রায় ধীর, জটিল এবং গতানুগতিক’ বলে অভিহিত করেন।

তবুও, বিশ্বের হাজার হাজার ইনটেল কর্মীর জন্য ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। ২০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা কর্তৃপক্ষ প্রত্যাখ্যান করলেও বড় পরিসরের ছাঁটাই আসছে বলে তারা জানিয়েছে। তবে সেটা কত বা কোথায় এবং কখন হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়।

ট্যান লিখেছেন, ‘আমাদের ছাঁটাইয়ের ভারসাম্য রাখতে হবে, যাতে আমরা মূল প্রযুক্তিগত দক্ষতা হারিয়ে না ফেলি এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রতিভা ধরে রাখতে ও নিয়োগ দিতে পারি।’

সুত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com