টেলিগ্রামের ব্যক্তিগত মেসেজ ও ডেটা দেখার সক্ষমতা রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার আছে। মেসেজিং অ্যাপটির ওপর রাশিয়ান স্পেশাল সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণের প্রমাণ পেয়েছে ইউক্রেন। এমন দাবি করে মস্কোর নজরদারি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কিয়েভ। শুধু তাই নয়; জেলেনস্কির প্রশাসন সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাদের রাষ্ট্র-ইস্যু করা ডিভাইসে টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
ইউক্রেনের জিইউআর সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কিরিলো বুদানভ টেলিগ্রামে রাশিয়ার প্রবেশের ক্ষমতার প্রমাণাদি জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলে উপস্থাপন করেন। এরপর শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিবৃতি দেওয়া হয়। এতে নিষেধাজ্ঞাকে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয় দেশেই টেলিগ্রাম ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করার পর টেলিগ্রাম আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তখন থেকে এটি তথ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসের কাজ করছে।
রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ তার সামরিক কমান্ডার এবং আঞ্চলিক ও শহরের কর্মকর্তা সবাই নিয়মিত যুদ্ধের আপডেট টেলিগ্রামে প্রকাশ করেন। অ্যাপটিতে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সিদ্ধান্তও প্রচার করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেসব কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্বের অংশ হিসেবে টেলিগ্রাম ব্যবহার করেন; তারা নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন না।
রাশিয়ান বংশোদ্ভূত পাভেল দুরভ টেলিগ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। এটি দুবাইভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। টেলিগ্রামের আগে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ভিকন্টাক্ট চালু করেন দুরভ। সেখানে রাশিয়ার ক্ষমতাসীনদের বিরোধী মতাদর্শের চ্যানেল বন্ধ করার নির্দেশ অমান্য করে সরকারি তোপের মুখে পড়েন। শেষমেশ ২০১৪ সালে রাশিয়া ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
দুরভকে গত মাসে ফ্রান্সে গ্রেপ্তার করা হয়। তার প্ল্যাটফর্মে অবৈধ আধেয় প্রকাশের অভিযোগ করা হয়েছে। ইউক্রেনের সিকিউরিটি কাউন্সিলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বুদানভ প্রমাণ দিয়েছেন যে রাশিয়ান স্পেশাল সার্ভিস টেলিগ্রাম বার্তাগুলোতে অ্যাক্সেস করতে পারে। এমনকি মুছে ফেলা বার্তাও তারা দেখতে পায়। ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ডেটাসহ কোনো কিছু রাশিয়া থেকে গোপন রাখা সম্ভব নয়।
বুদানভ বলেন, আমি সবসময় বাক স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছি। এখনও সেই সমর্থন অব্যাহত রেখেছি। তবে টেলিগ্রামের বিষয়টি বাক স্বাধীনতার বিষয় নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়।
কিয়েভের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে টেলিগ্রাম একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলেছে, তারা কখনও কারও ডেটা বা কোনো বার্তার বিষয়বস্তু প্রকাশ করেনি বা ভবিষ্যতেও করবে না। টেলিগ্রাম রাশিয়াসহ কোনো দেশে কোনো গ্রাহকের ডেটা সরবরাহ করেনি। মুছে ফেলা বার্তা চিরতরে মুছে ফেলা হয় এবং পুনরুদ্ধার করা প্রযুক্তিগতভাবে অসম্ভব।