
জাপানের ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) তাদের নতুন নেতা হিসেবে সানায়ে তাকাইচিকে নির্বাচিত করেছে। এর ফলে ৬৪ বছর বয়সী এই রাজনীতিক দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।
তাকাইচি জাপানের রাজনীতিতে পরিচিত ও বিতর্কিত এক মুখ। তিনি দলের ডানপন্থী অংশের একজন প্রবল সমর্থক এবং সাবেক মন্ত্রী, টেলিভিশন উপস্থাপক ও হেভি মেটাল ড্রামার হিসেবেও পরিচিত।
নতুন দায়িত্বে তাকাইচির সামনে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ—মন্দার মুখে থাকা অর্থনীতি ও লাগামছাড়া মূল্যস্ফীতিতে ভোগা জনগণকে সহায়তা করা, এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েনপূর্ণ সম্পর্ক সামলানো। পাশাপাশি তাকে আগের সরকারের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের যে শুল্কচুক্তি হয়েছিল, সেটি বাস্তবায়নেও নজর দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হলে তাকাইচির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ক্ষমতাসীন দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। গত কয়েক বছরে দলটি একের পর এক কেলেঙ্কারি ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা একাধিক নির্বাচনে পরাজয়ের পর পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এর ফলে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) নেতৃত্বাধীন জোট সংসদের দুই কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়।
টোকিওর টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক জেফ কিংস্টন বিবিসিকে বলেন, 'তাকাইচি দলের ভেতরকার বিভাজন নিরসনে খুব একটা সফল হবেন না।'
তিনি বলেন, 'তাকাইচি এলডিপির "হার্ডলাইন" ঘরানার রাজনীতিক, যাদের মতে দলের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার মূল কারণ হলো "নিজস্ব ডানপন্থী আদর্শ থেকে বিচ্যুতি"। তিনি ডানপন্থী ভোটারদের আবারও একত্র করতে পারবেন, তবে এর ফলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে সমর্থন কমে যেতে পারে।'
তাকাইচি দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারকে অনুসরণ করে আসছেন। এবার তিনি যেন নিজের 'আয়রন লেডি' স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে।
তবে জাপানের অনেক নারী ভোটার তাকাইচিকে নারীর অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে দেখেন না। অধ্যাপক কিংস্টন বলেন, 'তিনি নিজেকে জাপানের থ্যাচার বলে দাবি করেন। কিন্তু আর্থিক শৃঙ্খলার দিক থেকে তিনি মোটেও থ্যাচার নন। আর থ্যাচারের মতোই তিনি খুব ভালো সমঝোতাকারী নন, নারীর ক্ষমতায়নেও তেমন ভূমিকা রাখেননি।'
দৃঢ় রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত তাকাইচি বিবাহের পর নারীদের নিজস্ব পারিবারিক নাম রাখার আইন এবং সমলিঙ্গ বিবাহের বিরোধী। তিনি প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং তার অর্থনৈতিক নীতি 'আবেনমিকস' পুনরুজ্জীবিত করার অঙ্গীকার করেছেন, যা উচ্চ সরকারি ব্যয় ও স্বল্প সুদের ঋণের ওপর নির্ভর করে।
নিরাপত্তা বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া এই এলডিপি নেত্রী জাপানের শান্তিবাদী সংবিধান সংশোধনের পক্ষেও অবস্থান নিয়েছেন। তিনি নিয়মিত যান বিতর্কিত ইয়াসুকুনি মন্দিরে, যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নিহত জাপানি সৈন্যদের স্মরণ করা হয়।