
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) ফেডারেল রিজার্ভ সদর দফতরের সংস্কার কাজ পরিদর্শনকালে পাওয়েলের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান ট্রাম্প।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনপিআর জানিয়েছে, ট্রাম্প ও পাওয়েলের বাকবিতণ্ডার কারণ মূলত ফেড সদর দফতরের সংস্কার ব্যয় নিয়ে। বৃহস্পতিবার ফেড চেয়ারম্যানের সাথে ফেড সদর দফতরের সংস্কার প্রকল্প পরিদর্শনে যান ট্রাম্প।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফেড সংস্কার ব্যয় ১.৯ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২.৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য বিবাদের বিষয় হয়ে উঠেছে। পরিদর্শনের সময় ট্রাম্প একটি নথি দেখিয়ে দাবি করেন যে, সংস্কার ব্যয় এখন ৩.১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
এ কারণে ট্রাম্প সংস্কার প্রকল্পটি নিয়ে ক্ষুব্ধ। কারণ প্রকল্পটির ব্যয় বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেছে। এর আগে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সবশেষ ২০০৬ সালে ফেড সদর দফতর পরিদর্শন করেন জর্জ ডব্লিউ বুশ।
ফেডের সুদের হার না কমানোয় পাওয়েলের উপর আগে থেকে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প। তাকে অপসারণের হুমকিও দিয়ে আসছেন তিনি। এদিন ফেড সদর দফতর পরিদর্শনে গিয়ে প্রকল্পের ব্যয়বৃদ্ধির জন্য ফেড চেয়ারম্যান পাওয়েলের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এটা প্রায় ৩.১ বিলিয়ন ডলার, একটু বা অনেক বেশি বেড়েছে।’
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চেয়ারম্যান প্রেসিডেন্টের তীরস্কারের জবাব দেন। ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ে তার ভুলও ধরিয়ে দেন তিনি। বলেন, প্রেসিডেন্ট পাঁচ বছর আগে সংস্কার করা একটি অতিরিক্ত ভবনও হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করছেন।
উভয়ের মধ্যে স্পষ্ট উত্তেজনা টেলিভিশন লাইভেও দেখা যায়। ট্রাম্প যে কাগজপত্র দেখান, তাতে উইলিয়াম ম্যাকচেসনি মার্টিন জুনিয়র বিল্ডিংয়ের সংস্কার ব্যয়ও যুক্ত ছিল। যদিও সেটি প্রকল্পের অংশ নয়। পাওয়েল স্পষ্ট বলেন, ‘আপনি মার্টিন ভবনের খরচও ধরেছেন, এটি প্রকল্পে নেই।’
ট্রাম্প পাল্টা বলেন, ‘সেটিও সামগ্রিক প্রকল্পের অংশ’। পাওয়েল জবাব দেন, না, ‘ওটা পাঁচ বছর আগেই শেষ হয়েছে। এটা নতুন নয়।’
ট্রাম্প এমন সময়ে ফেড সদর দফতরে পরিদর্শনে গেলেন যখন তিনি যৌন অপরাধী প্রয়াত জেফরি এপস্টেইনের নথি প্রকাশ করা নিয়ে সৃষ্ট সংকট থেকে মনোযোগ সরাতে মরিয়া। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, চলতি বছরের বসন্তে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছিলেন, এপস্টেইনের নথিপত্রে তার নামও রয়েছে।
এপস্টেইনের বিরুদ্ধে ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌন কাজে বাধ্য করার অভিযোগ ছিল। এই অভিযোগে মামলা হলেও তাকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু বিচারাধীন অবস্থায় ২০১৯ সালে কারাগারে তার মৃত্যু হয়। ট্রাম্প প্রশাসন এটাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে বর্ণনা করে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় এপস্টেইনের অপরাধ ও তার ক্লায়েন্ট তালিকা প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাম্প। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পর সাত মাস চলেও এখনও তা প্রকাশ করেননি তিনি। এ নিয়ে তার উপর চাপ বাড়ছে।
বিষয়টি চাপা দিতে ট্রাম্প এখন নানা টার্গেটে আঘাত করছেন। ডেমোক্রেটিক পূর্বসূরি তথা সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনথেকে শুরু করে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদেরও ছাড় দিচ্ছেন না।
গত বুধবার (২৩ জুলাই) সুদের হার নিয়ে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন। এবং পরদিন বৃহস্পতিবার ফেড সদর দফতর পরিদর্শনের সময়ও ১০ বারেরও বেশি ঋণ গ্রহণের উচ্চ খরচ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যত ভালো করছি, আরও ভালো করতাম যদি সুদের হার কম হতো।’
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পাওয়েলের সমালোচনা করে আসছেন। কারণ পাওয়েল সুদের হার ৪.৩ শতাংশে রেখেছেন, যদিও গত বছর জো বাইডেনের আমলে এটি তিনবার কমানো হয়েছিল।
পাওয়েল বলেছেন, ট্রাম্পের নতুন নতুন আমদানি শুল্কের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। যা মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে পারে। কিন্তু ট্রাম্প তাকে ‘মূর্খ’ ও ‘পরাজিত’ বলে কটাক্ষ করেন এবং অভিযোগ করেছেন যে, পাওয়েল দেশের অর্থনীতিকে পিছিয়ে দিচ্ছেন।
তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি কিছুটা নরম সুরে বলেন, তাদের মধ্যে ‘অর্থনীতি নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা’ হয়েছে এবং কোনো উত্তেজনা ছিল না।’ ট্রাম্প বলেন, ‘একটু দেরি হয়ে গেছে বটে, তবে আমি বিশ্বাস করি তিনি সঠিক কাজটি করবেন।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত ৮৮ বছরের পুরনো ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান কার্যালয় ও পাশের একটি ভবনের সংস্কার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিষয়টি নজরে এসেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। প্রাথমিকভাবে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের কথা থাকলেও পরে তা ৬০০ মিলিয়ন ডলার বেড়ে গেছে।
এই ব্যয়বৃদ্ধির একটি বড় কারণ ভবনের নিরাপত্তা যেমন বিস্ফোরণ প্রতিরোধী জানালা ও ভবন ধ্বংস ঠেকানোর ব্যবস্থা। বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ স্বাধীনভাবে নীতিনির্ধারণ করে এবং এর বোর্ড সদস্যরা সাধারণত উভয় দলীয় প্রেসিডেন্টদের অধীনে দায়িত্ব পালন করেন।