মালয়েশিয়ার ৬৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত

মালয়েশিয়ার ৬৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত
প্রকাশিত

জমকালো কুচকাওয়াজ ও দেশাত্মবোধক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার ৬৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়েছে। দেশটির স্বাধীনতা দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মালয়েশিয়া মাদানি: আজম ও ইখলাস’ যা দেশের ঐক্য, মানবিক মূল্যবোধ এবং উন্নয়নের প্রতি গভীর অঙ্গীকারকে তুলে ধরেছে।

পুত্রজায়ার দাতারান পুত্রজায়ায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে, যা মালয়েশিয়ার ঐক্য ও সমৃদ্ধির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

রোববার (৩১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বিশিষ্ট অতিথিদের আগমনের পর সকাল ৮টায় মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান ইব্রাহিম এবং রাণী রাজা জারিথ সোফিয়াহ অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম, উপ-প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ড. আহমদ জাহিদ হামিদি এবং দাতুক সেরি ফাদিল্লাহ ইউসুফসহ মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনীতিক ও বিদেশি গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

দেশটির জাতীয় সঙ্গীত ‘নেগারা কু’ গাওয়ার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর মেজর হাফিজান মাত গনি-এর নেতৃত্বে রয়্যাল আর্টিলারি রেজিমেন্টের ৪১তম ব্যাটারি মালয়েশিয়ার ১৪টি রাজ্যকে প্রতীক করে ১৪টি তোপধ্বনি প্রদান করে।

অনুষ্ঠানে খ্যাতিমান শিল্পী দাতুক সেরি সিটি নূরহালিজা উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তোলেন। তিনি এ বছরের স্বাধীনতা দিবসের থিম সং ‘মালয়েশিয়া মাদানি: আজম ও ইখলাস’ পরিবেশন করেন। তার গানে হাজার হাজার দর্শক কণ্ঠ মেলায়, যা জাতীয় ঐক্য ও গর্বের এক শক্তিশালী মুহূর্ত তৈরি করে।

প্যারেডে মালয়েশিয়ার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, সরকারি সংস্থা, এবং বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। তাদের সুশৃঙ্খল কুচকাওয়াজ এবং মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনী উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে তোলে। সামরিক বাহিনীর অত্যাধুনিক সরঞ্জামের প্রদর্শন, যেমন - ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধবিমান, দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে তুলে ধরেছে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও পোশাকের প্রদর্শনী মালয়েশিয়ার বহু-সাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক অনন্য চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে।

প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম তার ভাষণে এবারের প্রতিপাদ্য ‘মালয়েশিয়া মাদানি’-এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, এই ধারণাটি একটি উন্নত, ন্যায়পরায়ণ এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের লক্ষ্যকে তুলে ধরে, যেখানে সকল নাগরিক সমান সুযোগ ও সম্মান নিয়ে বসবাস করতে পারে।

তিনি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক ন্যায়বিচার, এবং সকল জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখার ওপর জোর দেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় দেশের তরুণ প্রজন্মকে দেশের ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

কুয়ালালামপুর ছাড়াও মালয়েশিয়ার অন্যান্য রাজ্যগুলোতেও স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়েছে। জোহর বাহরু, পেনাং, মেলাকা, এবং সাবাহ-এর মতো শহরগুলোতে স্থানীয় পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্কুল, কলেজ এবং বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা এবং দেশাত্মবোধক গান ও কবিতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

বিশেষ করে কুয়ালালামপুরের পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার্স ও কুয়ালালামপুর টাওয়ার্সে চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বিমান বাহিনীর চিত্তাকর্ষক মহড়া। এয়ার ফোর্স কমান্ডার জেনারেল দাতুক সেরি মুহাম্মদ নোর আজলান আরিস-এর নেতৃত্বে ৩০টি যুদ্ধবিমানের সমন্বয়ে গঠিত এই মহড়াটি দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে তোলে।

মালয়েশিয়ার ৬৮তম স্বাধীনতা দিবস কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণ নয়, বরং এটি দেশের ঐক্য ও অগ্রগতির প্রতি এক নতুন অঙ্গীকারের প্রতিফলন।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com