

নতুন ন্যাটো সদস্য দেশ সুইডেন ইউক্রেনকে তাদের সর্বাধুনিক ১৫০টি যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। ইউক্রেনের ক্ষুদ্র ও পুরোনো বিমানবাহিনীকে আধুনিক করতে ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশের এটি প্রথম বড় পদক্ষেপ।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসনের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তিটি ‘লেটার অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ হওয়ায় এখনো সুনির্দিষ্ট দাম, সরবরাহের সময় বা শর্ত নির্ধারণ করা হয়নি।
তবে দুই নেতাই বলেছেন, ১০০ থেকে ১৫০টি সাব গ্রিপেন-ই মডেলের এই যুদ্ধবিমান ইউক্রেনের জন্য ‘গেমচেঞ্জার’ হতে পারে। এটি শুধু ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, ন্যাটো ও ইউরোপের সার্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখবে।
জেলেনস্কি এক বার্তায় বলেন, ‘আমরা ইউক্রেন ও সুইডেনের সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় শুরু করছি। এই বিমানগুলো অত্যন্ত আধুনিক ও বহুমুখী, যেগুলো নানা ধরনের অভিযানে সক্ষম।’
সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টারসন বলেন, ‘এটি ইউক্রেন, সুইডেন ও সমগ্র ইউরোপের নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করবে।’
২০২৪ সালে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দেয়, যা তাদের দীর্ঘদিনের নিরপেক্ষতার নীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেয়। রাশিয়ার হামলার পর থেকেই ইউক্রেনের প্রধান চাহিদা ছিল আধুনিক যুদ্ধবিমান। এখনো ইউক্রেনের বিমানবাহিনীতে সোভিয়েত যুগের পুরোনো বিমানই বেশি। পশ্চিমা দেশগুলো কিছু পুরোনো এফ-১৬ ও ফরাসি মিরাজ সরবরাহ করলেও তা রাশিয়ার আধিপত্য ঠেকাতে যথেষ্ট হয়নি।
গ্রিপেন-ই যুদ্ধবিমানকে বিশেষজ্ঞরা ইউক্রেনের জন্য আদর্শ মনে করছেন। তুলনামূলকভাবে সস্তা, সহজে রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য এবং কঠিন পরিস্থিতিতেও এটি চালানো যায়— এমনকি রাস্তা বা কাঁচা রানওয়েতেও এটি উঠানামা করতে সক্ষম।
গ্রিপেন সিরিজের প্রথম বিমান ১৯৮০-এর দশকে তৈরি হলেও নতুন ই মডেলটি চলতি মাসেই সুইডেনের বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে। এতে আধুনিক রাডার, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সেন্সর এবং উন্নত অস্ত্র ব্যবহারের সক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছে।
প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সাব একে ‘গেমচেঞ্জার’ বলছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে সেন্সর ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ব্যবস্থার সমন্বয় করা যায়। প্রতিটি বিমানে রয়েছে ১০টি ‘হার্ড পয়েন্ট’, যেখানে আকাশ বা স্থল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র সংযুক্ত করা যায়।
ইউক্রেনের পাইলটরা ইতিমধ্যে পুরোনো গ্রিপেন মডেলে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যা নতুন সংস্করণ ব্যবহারে তাদের সহায়ক হবে বলে জানা গেছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, নতুন মডেল সরবরাহের আগ পর্যন্ত ইউক্রেন সাময়িকভাবে পুরোনো গ্রিপেন ব্যবহার করতে পারে।
তবে জেলেনস্কি আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী বছর থেকেই ইউক্রেন গ্রিপেন ব্যবহার শুরু করতে পারবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনীর জন্য গ্রিপেন এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’
চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হলে ১৫০টি গ্রিপেন-ই পেয়ে ইউক্রেন বিশ্বে এই মডেলের সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী দেশ হবে। বর্তমানে সুইডেন ছাড়াও ব্রাজিল, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, দক্ষিণ আফ্রিকা ও থাইল্যান্ড এই বিমান ব্যবহার করে।
এই ঘোষণা আসে ঠিক কয়েকদিন পর, যখন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দীর্ঘপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে কমপক্ষে ছয় মাস থেকে এক বছর প্রশিক্ষণ নিতে হয়, যা এখনই সম্ভব নয়।
সূত্র: সিএনএন