মোহাম্মদপুরে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত ঘাতক গৃহকর্মী ও তার স্বামী গ্রেফতার

মোহাম্মদপুরে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত ঘাতক গৃহকর্মী ও তার স্বামী গ্রেফতার
প্রকাশিত

গত সোমবার (০৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি বাসায় গৃহকর্মী কর্তৃক লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা (১৫) নৃসংশভাবে খুনের ঘটনায় জড়িত ঘাতক গৃহকর্মী ও তার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের নাম- আয়েশা আক্তার (২০) ও জামাল সিকদার রাব্বি (২৫) ।

মোহাম্মদপুর থানা সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন সকাল ০৭:৫১ ঘটিকার সময় উক্ত বাসায় গৃহকর্মী আয়েশা বাসায় প্রবেশ করে এবং ০৯:৩৫ ঘটিকার সময় উক্ত বাসা ত্যাগ করে। ধারনা করা হয় এই সময়ের মধ্যে উক্ত নৃশংস ঘটনা সংগঠিত হয় এবং বাসার গৃহকর্মী আয়েশা ঘটনার পর সুকৌশলে বাসা থেকে বের হয়ে আত্মগোপন করে। এই ঘটনায় নিহত লায়লা আফরোজের স্বামী বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরপরই মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ও ডিএমপির উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সাথে জড়িত প্রধান সন্দেহভাজন গৃহকর্মী আয়েশার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ কাজ আরম্ভ করেন।

মোহাম্মদপুর থানা সূত্রে আরও জানা যায়, সন্দেহভাজন গৃহকর্মী আয়েশা ঘটনার তিনদিন পূর্বে উক্ত বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেয়। কাজের যোগ দেওয়ার পূর্বে তার নাম, ঠিকানা ও যোগাযোগের কোন ফোন নম্বর উক্ত বাসায় কারও কাছে ছিলো না। সন্দেহভাজন আয়েশাকে সনাক্ত করার জন্য পুলিশ উক্ত ভবনের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে। কিন্তু কাজে আসা যাওয়ার সময় সে মুখ ঢেকে রাখতো বিধায় তার চেহারা সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি তার বাসার ঠিকানাও কেউ জানতো না।

এক পর্যায়ে, আয়েশা সম্পর্কে কোন তথ্য না পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় গত এক বছরে গৃহকর্মী কর্তৃক চুরির ঘটনাসমূহ পর্যালোচনা করে গলায় পোড়া দাগ এবং জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় থাকে আয়েশা নামের এক গৃহকর্মীর খোঁজ পাওয়া যায় এবং সে গত জুলাই মাসে মোহাম্মদপুর থানার হুমায়ুন রোডের এক বাসায় চুরির ঘটনায় জড়িত ছিলো। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে উক্ত আয়েশার সাথে যোগাযোগের একটি মোবাইল থেকে নম্বর পাওয়া যায়। উক্ত নম্বরে যোগাযোগ করলে জানা যায় তার মোবাইল নম্বরটি কখন কে ব্যবহার করেছেন তিনি সঠিক মনে করতে পারছেন না। তবে কিছুদিন পূর্বে তার ফোনে ডিসপ্লে নষ্ট থাকায় রাব্বী নামে তার এক ছোট ভাইকে ঠিক করার জন্য দেয় এবং এই সময় সিমটি রাব্বীর ফোনে ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। এভাবে রাব্বীকে সনাক্ত করা হয় এবং তিনি জানান রাব্বীর স্ত্রীর নাম আয়েশা, সে মানুষের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে। আরও জানা যায়, তারা জেনেভা ক্যাম্পে ভাড়া বাসায় থাকে। এভাবে ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারী আয়েশার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।

আয়েশাকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ প্রথমে হেমায়েতপুরে তার মায়ের বাসায় অভিযান পরিচালনা করে কিন্তু তার মা জানান তারা রাত্রে বাসায় ছিলো কিন্তু সকাল বেলা বের হয়ে গেছে। আয়েশার মা‘কে নিয়ে পুলিশ রাব্বির মায়ের বাসায়ও যায় কিন্তু সেখানেও তাদের পাওয়া যায়নি। তারা পুলিশকে জানায় আয়শা ও রাব্বি বরিশালে গিয়ে থাকতে পারে। এক পর্যায়ে তাদের নিকট প্রাপ্ত তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় পটুয়াখালীর দুমকি থানাধীন প্রত্যন্ত নলুয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। কিন্তু সেখানেও তাদের পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে এডিসি মোহাম্মদপুরের নেতৃত্বে থাকা পুলিশের আভিযানিক টিম ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার চরকারা গ্রামে আয়েশার স্বামী রাব্বীর দাদার বাড়িতে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) অভিযান পরিচালনা করে বেলা আনুমানিক ১২:৩০ ঘটিকার সময় আয়েশা ও তার স্বামী জামাল সিকদার রাব্বীকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কক্ষ তল্লাশী করে গৃহকর্মী আয়েশা কর্তৃক চোরাইকৃত একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। একইভাবে জানা যায় গৃহকর্মে নিয়োজিত থেকে চুরি করার অভ্যাস পূর্ব থেকেই ছিলো গ্রেফতারকৃত আয়েশার।

চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের কারণ অনুসন্ধানে আয়েশা বলে, কাজে আসার দ্বিতীয় দিনে সে বাসা থেকে দুই হাজার টাকা চুরি করে। এ নিয়ে গৃহকর্ত্রী আয়েশাকে প্রশ্ন করলে তার সাথে গৃহকর্ত্রীর বাকবিতণ্ডা হয়। লায়লা আফরোজ আয়েশাকে পুলিশে দেওয়ারও ভয় দেখান। চতুর্থ দিন কাজে আসার সময় আয়েশা বাসা থেকে একটা সুইচ গিয়ার চাকু নিয়ে আসে। ঘটনার দিন টাকা চুরি নিয়ে তাদের মধ্যে আবারও কথা কাটাকাটি হয় এবং ধ্বস্তাধ্বস্তির এক পর্যায়ে আয়েশা গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজকে সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। এ সময় তাদের মেয়ে নাফিসা তার মাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। ছুরিকাঘাতের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মা ও মেয়ে দুজনেই মারা যান বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। ঘটনার সময় আয়েশা নিজেও আহত হয় এবং রক্তমাখা কাপড়চোপড় পাল্টিয়ে মেয়ে নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। যাওয়ার সময় ব্যাকপ্যাকে একটি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও আরও কিছু জিনিসপত্র নিয়ে যায়। বাসা থেকে বের হয়ে সে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের ভিতরে গিয়ে পুনরায় কাপড় পাল্টিয়ে সাভারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পরবর্তীতে সে চুরি করা ফোনও রক্তাক্ত কাপড় চোপড় সিংগাইর ব্রীজ হতে নদীতে ফেলে দেয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com