
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, সম্প্রতি সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে ২৫ জনের মধ্যে মাত্র ৩ জন নারী বিচারক নিযুক্ত হওয়া প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে নারীবান্ধব বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় এখনো কিছু কাঠামোগত ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে নারীদের জন্য পেশাগত প্রস্তুতি, কার্যকর দিকনির্দেশনা ও নীতিগত সহায়তা বাড়ানোর প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) থাইল্যান্ডে এশিয়ার নারী বিচারকদের আঞ্চলিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বর্তমানে ইউএনডিপি আয়োজিত একটি কনফারেন্সে অংশগ্রহণের জন্য ব্যাংকক অবস্থান করছেন।
বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগে নারীর অংশগ্রহণ কেবল প্রতিনিধিত্বের প্রশ্ন নয় বরং এটি ন্যায়বিচারের গুণগত উৎকর্ষ ও জন আস্থার বিশেষ প্রতীক।
নারী বিচারকরা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও পারিবারিক বিরোধের মতো সংবেদনশীল মামলায় মানবিক অন্তর্দৃষ্টি ও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচারপ্রক্রিয়াকে সমৃদ্ধ করে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারী বিচারকরা ক্ষমতার ভারসাম্য ও মর্যাদার সূক্ষ্ম দিকগুলো অনুধাবন করতে বেশি সক্ষম, যা বিচার ব্যবস্থাকে আরও ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার কর্ম বিভাগে সত্যিকারের সমতা শুধু নিয়োগের মাধ্যমে আসে না বরং এটি একটি রূপান্তরের প্রক্রিয়া। এ লক্ষ্যে তিনি স্বচ্ছ নিয়োগপ্রক্রিয়া, নারীবান্ধব পেশাগত পরিবেশ, মেন্টরশিপ নেটওয়ার্ক-এর ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে এশিয়ার বিচার বিভাগগুলোতে সমৃদ্ধ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের জেলা আদালতগুলোতে ৬২৫ জন নারী বিচারক কর্মরত থাকলেও উচ্চ আদালতে তাদের সংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে ১১৭ জন বিচারকের মধ্যে মাত্র ১২ জন নারী বিচারক রয়েছেন এবং এখনো বাংলাদেশে কোনো নারী প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হননি।
এছাড়া, বাংলাদেশে আইন পেশায় নারীর সংখ্যা ১২ শতাংশেরও কম, যা পেশাগত অগ্রগতিতে নারীর সীমিত অংশগ্রহণের ইঙ্গিত বহন করে।
বিচার বিভাগে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত হলে আইনি চিন্তাভাবনা আরও গভীর ও মানবিক হবে উল্লেখ প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগে নারী নেতৃত্ব আইনের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনে পারিবারিক, শ্রম, সম্পত্তি ও পরিবেশসংক্রান্ত মামলায় অধিক ন্যায়সংগত ফলাফল নিশ্চিত করতে সক্ষম।
এ প্রসঙ্গে সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী ও দাতাগোষ্ঠীর ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, নারীর বিচারিক নেতৃত্ব বিকাশে তাদের ভূমিকা নিছক সহায়তা নয় বরং এটি এক প্রকারের অংশীদারত্ব। বিশেষ করে, তিনি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিটি) প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশে ইউএনডিপি সুপ্রিম কোর্ট, সরকার ও সিভিল সোসাইটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে বিচার বিভাগের সক্ষমতা ও জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এর পাশাপাশি, তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির অবদানকেও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
প্রধান বিচারপতি নারী বিচারকদের মেন্টরশিপ, প্রশিক্ষণ ও নেতৃত্ব বিকাশে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য আইন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বার অ্যাসোসিয়েশন ও বিচারকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ন্যায়বিচার তখনই পূর্ণতা পায়, যখন বিচার বিভাগে সমাজের সকল স্তর ও লিঙ্গের প্রতিনিধিত্ব সুষমভাবে প্রতিফলিত হয়।
এর আগে সফরকালে প্রধান বিচারপতি ১৫ অক্টোবর থাইল্যান্ডের বিচারমন্ত্রী রুত্তাফন নাওয়ারাতের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এছাড়া ইএনডিপির এশিয়ার ডেপুটি রিজিওনাল ডিরেক্টর ক্রিস্টোফ বাহুয়েট এবং নেপালের ডেপুটি প্রধান বিচারপতির স্বপ্না প্রধান মাল্লার সঙ্গেও বৈঠক করেন রেফাত আহমেদ।