বাংলাদেশে নারী ও কিশোরী পাচার চক্রের কার্যক্রম এখন আর আগের মতো সীমান্তবর্তী গ্রাম বা দালাল-নেটওয়ার্কের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল নয়।
প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়ার সহজলভ্যতা পাচারকারীদের কৌশল পাল্টে দিয়েছে।
১) কৌশল: ‘মডেলিং’, ‘অ্যাম্বাসাডর’, ‘ব্র্যান্ড শ্যুট’, মিথ্যা চাকরির প্রলোভন
চক্রগুলো সাধারণত এমন তরুণীদের খুঁজে-
যারা.
সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়
ভিডিও বানানো/লাইভে আগ্রহী
পরিবারিক বা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল
স্বাধীনভাবে কিছু করতে চায়
রিক্রূটমেন্ট সাধারণত ৩ ধাপে হয়:
ধাপ–১: টিকটকে ফলো রিকোয়েস্ট → লাইক → ইনবক্স
ধাপ–২: “তুমি খুব সুন্দর”, “মডেলিং করতে চাও?”, “দুবাইতে ইভেন্টে মডেল দরকার”—এ ধরনের প্রলোভন
ধাপ–৩: মেসেঞ্জার/হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কল → আশ্বাস → বিশ্বাস অর্জন → ‘ভ্রমণে নেওয়া’
অনেক সময় মেয়েদের ‘গ্লামারাস লাইফ’ দেখিয়ে ভয়েস নোট পাঠানো হয়—“আয়, তোকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর বানাবো।”
২) টিকটক ‘এজেন্সি গ্রুপ’: নতুন বিপদ
চক্রগুলো এখন টিকটক এজেন্সির নামে গ্রুপ চালায়।
সেখানে বলা হয়-
মাসে ৩০–৭০ হাজার আয়
ব্র্যান্ড লাইভ
শো-শুট
বিদেশে কাজ
ভিকটিমকে প্রথমে ঢাকা নিয়ে আসা হয়, এরপর সীমান্ত।
বাংলাদেশ থেকে পাচারের প্রধান পয়েন্ট- যশোর, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকা।
৩) বাস্তব গল্প:
সিরাজগঞ্জের ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরী টিকটকে ৪ মাস লাইভ করত। একদিন ইনবক্সে এলো-
“দুবাইতে ইভেন্টে মডেল লাগবে, ৩ মাসে ২ লাখ টাকা। আসতে আগ্রহী?”
ছেলেটি নিজের পরিচয় দিল ‘টিকটক এজেন্সি ম্যানেজার’। নিয়মিত কথা, ভিডিও কল, মুগ্ধ করার মতো স্বপ্ন দেখানো—সব মিলিয়ে মেয়েটি রাজি হয়ে যায়। ঢাকায় এনে তাকে ‘শেখানোর’ নাম করে ৩ দিন একটি ফ্ল্যাটে আটকে রাখে। পরে পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হয়।
৪) পাচারের ভেতরের ব্যবসা: প্রতিটি মেয়ের দাম নির্ধারিত,
মানব পাচার এখন সংগঠিত অপরাধ। প্রযুক্তি যোগ হওয়ায় লাভ আরও বেড়েছে।
প্রতিটি মেয়ের বিনিময়ে পাচারকারীরা ১-৩ লাখ টাকা পায়
বিদেশে পাঠানোর পর আবার নতুন ‘দালাল’ লেনদেন হয়
ভিকটিমকে দরিদ্র পরিবার বলতে শিখিয়ে দেওয়া হয়- “ভ্রমণে যাচ্ছি”
একবার যাওয়ার পর বেশিরভাগকে ফেরত আসতে দেওয়া হয় না।
৫) কেন কিশোরীরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে?
সামাজিক চাপ
পারিবারিক অভাব
অনলাইন ফ্রেন্ডশিপে দ্রুত বিশ্বাস
নিজের সিদ্ধান্তে ‘ফ্রিডম’ অনুভব
মডেলিং/ফেম/লাইফস্টাইলের প্রতি আকর্ষণ
নিরাপত্তা সম্পর্কে অজ্ঞতা
চক্রগুলো এ দুর্বলতাই ব্যবহার করে।
৬) সাইবার গোয়েন্দাদের মতে নতুন ট্রেন্ড
পুলিশি সাইবার ইউনিট বলছে-
৬০% প্রতারণা এখন সোশ্যাল মিডিয়া ভিত্তিক
টিকটক লাইভে ‘গিফট’ দেওয়া-বান্ধবী সাজা পদ্ধতি ব্যবহার হচ্ছে
মেসেঞ্জার ভিডিও কল রেকর্ড করে ব্ল্যাকমেইল করা হয়
অনেক ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টে বিদেশি নাম ব্যবহার করে, যাতে সন্দেহ কম হয়
পুলিশের মতে:
“যেই মেয়েকে সীমান্তে নেওয়া যায়, তাকে ফিরে পাওয়া কঠিন। সন্দেহ হলে দ্রুত থানায় বা হটলাইনে যোগাযোগ করুন।”
৮) বিশেষ সতর্কতা-
🚫 যে লাইনগুলো শুনলেই সতর্ক হবেন
“তোমাকে বিদেশে মডেল বানাবো”
“মাসে ১ লাখ ইনকাম”
“তোমাকে VIP ইভেন্টে নিতে হবে”
“একটু ট্রেনিংয়ের জন্য ঢাকায় আসো”
“তোমার পাসপোর্ট লাগবে, শুধু দাও”
✔ যে করণীয়গুলো অবশ্যই করবেন-
এমন কোথাও যুক্ত হতে হলে পরিবারকে বলবেন
পরিচয়, অফিস, চুক্তি- সব সত্য কিনা যাচাই করবেন
একা কোনো ফ্ল্যাট/লোকেশনে যাবেন না
অপরিচিতের ভিডিও কলে ব্যক্তিগত কিছু বলবেন না
সন্দেহ হলে ৯৯৯ বা সাইবার সেলে রিপোর্ট করুন