চাঞ্চল্যকর মামুন হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত দুইটি পিস্তল উদ্ধার এবং দুই শ্যুটারসহ গ্রেফতার ০৫

চাঞ্চল্যকর মামুন হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত দুইটি পিস্তল উদ্ধার এবং দুই শ্যুটারসহ গ্রেফতার ০৫
প্রকাশিত

রাজধানীর সূত্রাপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে তারেক সাইফ মামুন (৫৫) নামক এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত দুই শ্যুটারসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তাদের হেফাজত হতে এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুইটি বিদেশি পিস্তল, পিস্তলের দুইটি ম্যাগাজিন, ছয় রাউন্ড গুলি, একটি মোটরসাইকেল, নগদ ১,৫৩,৬৪০ (এক লক্ষ তেপ্পান্ন হাজার ছয়শত চল্লিশ) টাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হল: ১। মো: ফারুক হোসেন ফয়সাল (৩৮) ২। রবিন আহম্মেদ ওরফে পিয়াস (২৫) ৩। মো: রুবেল (৩৪) ৪। শামীম আহম্মেদ (২২) এবং ৫। মোঃ ইউসুফ ওরফে জীবন (৪২)

ডিবি সূত্রে জানা যায়, সোমবার (১০ নভেম্বর) সকাল আনুমানিক ১১.০০ ঘটিকার সময় রাজধানীর সূত্রাপুরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রবেশমুখে দুইজন অস্ত্রধারী নিহত মামুনকে লক্ষ্য করে কাছে থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক তাকে ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকগণ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করলে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পরপরই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ছায়া তদন্ত আরম্ভ করে এবং ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের সনাক্ত করে অভিযানে নামে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির একাধিক টিম রাজধানী ঢাকা, সিলেট ও নরসিংদী জেলায় ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাত আনুমানিক ২১.৫০ ঘটিকার সময় নরসিংদী সদর থানাধীন ভেলানগর এলাকা হতে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ফারুক ও রবিনের দেহ তল্লাশি করে নগদ ১,৫৩,৬৪০ (এক লক্ষ তেপ্পান্ন হাজার ছয়শত চল্লিশ) টাকা উদ্ধার করা হয়। তারা জানায় উদ্ধারকৃত অর্থ হত্যাকাণ্ডের পারিশ্রমিক হিসেবে রনির নিকট থেকে পেয়েছে।

ফারুক ও রবিনের নিকট প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক ঘটনার পর তারা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি শীর্ষ সন্ত্রাসী রনির নির্দেশে গ্রেফতারকৃত রুবেলের হেফাজতে প্রদান করে এবং রুবেল এসব অস্ত্র-গুলি প্রাপ্তির বিষয়টি রনিকে নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে এসব অস্ত্র-গুলি রুবেল রায়েরবাজার এলাকার জনৈক দর্জি ইউসুফের নিকট তা গচ্ছিত রেখে গা ঢাকা দেয়।

নরসিংদী থেকে গ্রেফতারকৃত রুবেলের নিকট প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক ডিবির টিম মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাত আনুমানিক ২৩.০৫ ঘটিকার সময় মোহাম্মদপুর থানাধীন রায়েরবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ইউসুফকে গ্রেফতার করে এবং তার দেখানো মতে তার বসতঘরের মেজে থেকে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় দুইটি বিদেশি পিস্তল, দুইটি ম্যাগাজিন এবং ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে ডিবি। এছাড়া ঢাকা ডেন্টাল কলেজের সামনে পার্কিং অবস্থায় এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়।

উক্ত ঘটনা সম্পর্কে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম জানান, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের পরিকল্পনায় এবং আরেক সন্ত্রাসী রনি কর্তৃক গ্রেফতারকৃত ফারুকের সহায়তায় এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় মর্মে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রবিবার (৯ নভেম্বর) সন্ত্রাসী রনি তার বাসায় গ্রেফতারকৃত রবিনকে ডেকে নেয়। এ সময় রনি জানায়, ১০ নভেম্বর মামুনের আদালতে হাজিরার দিন। এ সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে। রনি রবিনকে দুই লাখ টাকায় চুক্তি করে এবং বলে সাথে ফারুক, সুমন ও কামালসহ আরও ২/১ জন থাকবে।

পরিকল্পনা মোতাবেক পরদিন (১০ নভেম্বর) সকাল ০৯.০০ ঘটিকায় রনি রবিনকে জজকোর্ট এলাকায় যেতে নির্দেশ প্রদান করে এবং সে অনুযায়ী মোটরসাইকেলযোগে রবিন কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করার জন্য জজকোর্ট এলাকায় যায়। একই সময় রনির নির্দেশে ফারুক, সুমন, কামাল ও আরও ২/১ জন ঘটনাস্থলের কাছাকাছি উপস্থিত হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী সুমন ও ফারুককে গুলি করার জন্য রনি নির্দেশ প্রদান করে। এক পর্যায়ে সুমন ও রনির মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে রনি সুমনের নিকট থাকা পিস্তল রবিনের কাছে দেয়। নিহত মামুন ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছালে তারা তাকে অনুসরণ করতে থাকে। কামালের ওপর নির্দেশনা থাকে মামুনকে অনুসরণ করা এবং পরিকল্পনা মোতাবেক সে মামুনের কাছেই থাকে। কামালের সংকেত পেয়েই ফারুক ও রবিন মামুনকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলি ছুঁড়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

পরবর্তীতে তারা বেড়ি বাঁধ হয়ে রায়েরবাজার যায় এবং রনির নির্দেশে ফারুক ও রবিন উদ্ধারকৃত অস্ত্র-গুলি রুবেলের নিকট হস্তান্তর করে যা রুবেল তার বন্ধু ইউসুফের নিকট জমা রাখে। এ সময় রুবেল চুক্তি মোতাবেক ফারুক ও রবিনকে এক লক্ষ টাকা করে মোট দুই লক্ষ টাকা প্রদান করে।

রনির পরিকল্পনা ও নির্দেশে ফারুক, রবিন, শামীমকে সিলেটের উদ্দেশে পাঠানো হয় এবং রুবেল নিজেও তাদের সফরসঙ্গী হয়। ঘটনার পরপরই রনি এই চারজনের মোবাইল ফোনগুলো নিয়ে নেয়।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা সিলেট পৌঁছে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে কিন্তু সুবিধা করতে না পেরে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের উদ্দেশে সিলেট ত্যাগ করে ঢাকা অভিমুখে রওয়ানা করে এবং পথিমধ্যে নরসিংদী এসে ডিবির জালে ধরা পড়ে।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে নিয়মিত মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া মামুন হত্যার ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com