
রাজধানীর কলাবাগানে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে রেখে স্বামীর পলায়নের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় হন্তারক স্বামী মোঃ নজরুল ইসলাম (৫৯)কে মামলা রুজুর ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কলাবাগান থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর ২০২৫) রাত আনুমানিক ৯:১০ ঘটিকায় বংশাল থানাধীন নবাবপুর রোড এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
কলাবাগান থানা সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার (১২ অক্টোবর ২০২৫) রাত ১১:০০ ঘটিকায় নজরুল ইসলাম কলাবাগান থানাধীন ১ম লেনে অবস্থিত ২৪ নং বাসার ভাড়াকৃত ৬ (বি) ফ্ল্যাটে ফিরে দেখেন ফ্ল্যাটের দরজার তিনটি লকের মধ্যে দুটি খোলা। স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের (৪২) প্রতি দীর্ঘদিনের সন্দেহ—পর পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ও তার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার ভয় তাকে উত্তেজিত করে। রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত স্ত্রীর মাথায় ধারালো দা দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি। এরপর লাশটি গামছা দিয়ে বেঁধে, বিছানার চাদর ও ওড়না দিয়ে মুড়িয়ে বাসার ফ্রিজে লুকিয়ে রাখেন। পরবর্তীতে রক্তমাখা তোষক উল্টিয়ে, মেঝে পরিষ্কার করে এবং নিজের জামাকাপড় ধুয়ে আলামত গোপনের চেষ্টা করেন। পরদিন সকালে নজরুল ইসলাম তার বড় মেয়ে নাজনীন আক্তারকে জানায়, তাদের মা অন্য পুরুষের সঙ্গে পালিয়েছে। এসময় নাজনীন আক্তার ঘরের দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পায়। এরপর নজরুল ইসলাম তার দুই মেয়েকে নানার বাড়ি রেখে আসার কথা বলে রাজধানীর আদাবরে তাদের ফুফুর বাসায় রেখে নিজের প্রাইভেটকারে করে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে এ বিষয়ে সন্দেহ হলে ভিকটিমের ছোট ভাই নাঈম হোসেন ও ভিকটিমের দুই মেয়ে ১৩ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ সন্ধ্যা আনুমানিক ৬:৩০ ঘটিকায় কলাবাগান থানায় এসে অভিযোগ দেয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলাবাগান থানা পুলিশের একটি টিম ভিকটিমের ফ্ল্যাটে উপস্থিত হয়ে ফ্ল্যাটের দরজার তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ঘরের মধ্যে রাখা ডিপ ফ্রিজ খুলে ফ্রিজের ওপর থেকে মাছ-মাংস সরালে ফ্রিজের ভিতর চাদর দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় ভিকটিম তাসলিমা আক্তারের মৃতদেহ দেখতে পায় পুলিশ। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন ও সিআইডির ক্রাইম সিন টিমের সহায়তায় কলাবাগান থানা পুলিশ ডিপ ফ্রিজের ভিতর থেকে হাত-পা ও মুখ বাধা অবস্থায় ভিকটিমের মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ওইদিন রাতে ভিকটিমের ছোট ভাই নাঈম হোসেন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলাটি রুজুর পর সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় কলাবাগান থানা পুলিশ ভিকটিমের স্বামী মোঃ নজরুল ইসলামের অবস্থান শনাক্ত করে। পরবর্তীতে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর ২০২৫) রাত আনুমানিক ৯:১০ ঘটিকায় বংশাল থানাধীন নবাবপুর রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত আনুমানিক ১১:৩০ ঘটিকায় তার নিজ বাসার ওয়্যারড্রোব হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নজরুল ইসলাম ও তাসলিমা আক্তার দম্পতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলহ চলছিল। নজরুল ইসলাম অবৈধ সম্পর্কের সন্দেহে স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো। এমনকি সে ভয় পেতো যে স্ত্রী তার সম্পত্তি ও ব্যাংকে রাখা অর্থ হাতিয়ে নেবে। এই চরম সন্দেহ ও নিয়ন্ত্রণের মানসিকতা থেকেই এই নৃশংস হত্যাকান্ড সংগঠিত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।