প্রাকৃতিক রূপচর্চার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। রাসায়নিক পদার্থের ক্ষতিকর প্রভাব, ত্বকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং চোখের সমস্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যখন ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ কাজ করছে, তখন অনেকেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন প্রাচীন ঘরোয়া উপায়গুলোর দিকে। এর একটি উদাহরণ হলো- চোখের কাজল।
বাজারের প্রচলিত আইলাইনার ও কাজলে ব্যবহৃত নানা ধরনের প্রিজারভেটিভ, প্যারাবেন, সালফেট এবং সিনথেটিক রঙের কারণে চোখের আশেপাশের সংবেদনশীল ত্বকে সৃষ্ট হয় চুলকানি, জ্বালাপোড়া, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে হতে পারে অ্যালার্জি কিংবা সংক্রমণ। চিকিৎসক ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা তাই পরামর্শ দিচ্ছেন, যেকোনো প্রসাধনী ব্যবহারে থাকতে হবে সচেতন।
এই প্রেক্ষাপটে নারীদের মধ্যে নতুন করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরে তৈরি কাজল। অ্যাকটিভেটেড চারকোল, অ্যালোভেরা জেল, নারিকেল তেল, মৌমাছির মোম, স্পিরুলিনা পাউডার কিংবা কোকো পাউডারের মতো সহজলভ্য এবং ক্ষতিকর রাসায়নিকবর্জিত উপাদান দিয়েই তৈরি হচ্ছে এই কাজল। কোনো জটিল যন্ত্রপাতি ছাড়াই, কিছুটা সময় ও যত্ন ব্যয় করলেই বাসায় তৈরি করা সম্ভব এই নিরাপদ আইলাইনার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব উপকরণে কোনো ধরনের চর্ম বা চক্ষু-প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে, বরং এদের অনেকের রয়েছে উপকারী পুষ্টিগুণ। নারিকেল তেল চোখের আশেপাশের ত্বককে মসৃণ রাখে, অ্যালোভেরা জেল ঠান্ডা অনুভূতি দেয়, আর চারকোল বা কোকো পাউডার কাজলের মতো রঙ তৈরি করে। অনেকে আবার স্পিরুলিনার মতো প্রাকৃতিক গুঁড়ো দিয়ে সবুজ বা বাদামি রঙের কাজল তৈরি করছেন, যা ট্রেন্ডি রঙের চাহিদাও মেটায়।
এই কাজল তৈরির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো বিশুদ্ধ পানি। অনেকেই ঘরে বসে সহজ উপায়ে বাষ্পীয় প্রক্রিয়ায় ডিস্টিলড ওয়াটার তৈরি করছেন, যাতে জীবাণুর সংক্রমণ না ঘটে। একটি বড় হাঁড়িতে পানি, তার ভেতর একটি হিট-প্রুফ পাত্র, উপরে উল্টানো ঢাকনায় বরফ- এই তিনের সমন্বয়ে তৈরি হচ্ছে নিরাপদ পানি, যা ব্যবহার করা হচ্ছে কাজল তৈরিতে।
শুধু ঘরোয়া সৌন্দর্যচর্চা নয়, এই প্রবণতা এখন ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে ব্যবসায়িক উদ্যোগে। অনেক তরুণ উদ্যোক্তা এখন ‘ডিআইওয়াই বিউটি কিট’ আকারে এই উপকরণ বাজারজাত করছেন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। বিশেষ করে ই-কমার্সে নারীদের মাঝে এর চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সামান্য বিনিয়োগে কেউ কেউ শুরু করছেন কাজল তৈরির ছোট ব্যবসাও।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কেবল এক ধরনের রূপচর্চার পরিবর্তন নয়, বরং একধরনের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতনতার প্রতিফলন। দীর্ঘদিনের অভ্যাস বদলে মানুষ এখন নতুন এক ধরনের সচেতনতা নিয়ে ভাবছেন- তাদের ত্বক, চোখ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কী নিরাপদ এবং টেকসই।
এভাবেই প্রাকৃতিক উপাদান আর ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফিরে আসছে একসময়ের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য। চোখের সাজে যেমন আনছে নতুনত্ব, তেমনি রক্ষা করছে শরীরকে ক্ষতিকর রাসায়নিকের হাত থেকে।
