ইমোশনাল ওয়েলনেস: মানসিক সুস্থতাই আধুনিক জীবনের আসল শক্তি

ইমোশনাল ওয়েলনেস: মানসিক সুস্থতাই আধুনিক জীবনের আসল শক্তি
প্রকাশিত

শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক ও আবেগগত সুস্থতা, ইমোশনাল ওয়েলনেস, আজকের জীবনে সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দ্রুতগতির শহুরে জীবন, প্রতিযোগিতামূলক কর্মক্ষেত্র, সামাজিক চাপ ও অনিশ্চয়তার ভিড়ে মানুষ দিন দিন আবেগগতভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। এই বাস্তবতায় ইমোশনাল ওয়েলনেস আর বিলাসিতা নয়; এটি সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের মৌলিক শর্ত।

ইমোশনাল ওয়েলনেস কী?

ইমোশনাল ওয়েলনেস মানে নিজের অনুভূতিগুলোকে চেনা, গ্রহণ করা এবং সেগুলোকে সুস্থভাবে পরিচালনা করার সক্ষমতা। এতে অন্তর্ভুক্ত-

  • আনন্দ, দুঃখ, রাগ বা হতাশা, সব আবেগকে স্বীকৃতি দেওয়া

  • চাপের মধ্যে স্থির থাকার ক্ষমতা

  • নিজের সীমা (boundaries) বোঝা ও রক্ষা করা

  • সম্পর্ক ও সিদ্ধান্তে আবেগগত ভারসাম্য বজায় রাখা

কেন ইমোশনাল ওয়েলনেস আজ এত জরুরি

১. মানসিক চাপের বিস্তার

কাজের চাপ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সামাজিক তুলনা মানুষের আবেগকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দীর্ঘদিন অবহেলিত আবেগ থেকেই জন্ম নেয় উদ্বেগ, অবসাদ ও সম্পর্কের জটিলতা।

২. সম্পর্কের জটিলতা

পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি, সময়ের অভাব এবং যোগাযোগের ঘাটতি আবেগগত দূরত্ব বাড়াচ্ছে।

৩. আত্মপরিচয়ের সংকট

সবসময় “ভালো থাকতে হবে” এই সামাজিক প্রত্যাশা অনেককে নিজের অনুভূতি লুকাতে বাধ্য করে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

ইমোশনাল ওয়েলনেসের মূল স্তম্ভ

আত্মসচেতনতা (Self-awareness)

নিজের অনুভূতি কী, কেন হচ্ছে, তা বোঝা।

প্রতিদিন নিজেকে প্রশ্ন করা: আমি কেমন অনুভব করছি?

আবেগ প্রকাশের স্বাধীনতা

কান্না, রাগ বা দুর্বলতা প্রকাশ করা দুর্বলতা নয়; বরং এটি সুস্থতার লক্ষণ।

স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক

যে সম্পর্ক আপনাকে সম্মান দেয় না বা মানসিকভাবে ক্ষয় করে—সেখান থেকে দূরত্ব তৈরি করাও ইমোশনাল ওয়েলনেসের অংশ।

আত্মযত্ন (Self-care)

নিজের জন্য সময় রাখা, ঘুম, বিশ্রাম, পছন্দের কাজ বা নীরবতা, সবই আবেগগত সুস্থতায় ভূমিকা রাখে।

দৈনন্দিন জীবনে ইমোশনাল ওয়েলনেস চর্চা

  • দিনে অন্তত ১০ মিনিট নিজের সঙ্গে নিরব সময় কাটানো

  • অনুভূতি লিখে রাখা (journaling)

  • “না” বলতে শেখা

  • সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলনা কমানো

  • প্রয়োজনে কাউন্সেলর বা বিশ্বস্ত কারও সাহায্য নেওয়া

কর্মক্ষেত্র ও ইমোশনাল ওয়েলনেস

দীর্ঘ সময় কাজ, টার্গেটের চাপ ও পারফরম্যান্স উদ্বেগ কর্মীদের আবেগগতভাবে ক্লান্ত করে তোলে। স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশে প্রয়োজন-

  • মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনা

  • কাজ ও ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য

  • সহানুভূতিশীল নেতৃত্ব

Fokusiert

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় সমাজে মানসিক কষ্টকে এখনও অনেক সময় “দুর্বলতা” হিসেবে দেখা হয়। এই ধারণা বদলানো জরুরি। আবেগের যত্ন নেওয়া মানে দায়িত্বশীল ও সচেতন জীবনযাপন।

উপসংহার

ইমোশনাল ওয়েলনেস কোনো একদিনের অর্জন নয়, এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। নিজের অনুভূতিকে সম্মান করা, প্রয়োজন হলে সাহায্য চাওয়া এবং আবেগকে সুস্থভাবে পরিচালনা করাই আধুনিক জীবনের প্রকৃত সাফল্য। মানসিকভাবে সুস্থ মানুষই পারে সুস্থ সম্পর্ক গড়তে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এবং জীবনের প্রতিটি অধ্যায় অর্থবহ করে তুলতে।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com