
আজ পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম জুমা। রহমতের দশকের ষষ্ঠ রোজায় এসে মুসলিম উম্মাহ পেল এক বরকতময় জুমার দিন। এটি এমন এক দিন, যেদিন আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়। এটি সওয়াব অর্জনের এক সুবর্ণ সুযোগ, ইবাদতের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জনের এক মহাময় মুহূর্ত।
জুমার দিনের বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কোরআনে ইরশাদ করেছেন, “হে মুমিনরা! জুমার দিন যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে এগিয়ে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটি তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ।” (সুরা জুমা: ৯-১০)। এ দিন মহান রবের দরবারে নিজের আমল পেশ করার এবং দোয়া কবুল হওয়ার এক বিশেষ সুযোগ।
জুমার দিনের ফজিলত
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “সব দিনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এই দিনেই আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। আবার এই দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৫০২)।
জুমার দিন করণীয় আমল
জুমার দিনকে আরও বরকতময় করতে কিছু বিশেষ আমলের প্রতি গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে হাদিস শরিফে।
১. গোসল ও পবিত্রতা রক্ষা
জুমার দিন পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করা সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালোভাবে গোসল করল, পবিত্রতা অর্জন করল, সুগন্ধি ব্যবহার করল, তারপর দ্রুত মসজিদে গেল এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনল, তার প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব লেখা হবে।” (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৪৫)।
২. জুমার নামাজ আদায়
জুমার নামাজ হলো মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ ইবাদত। রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করে, তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করা হয়, যদি সে কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।” (মুসলিম, হাদিস: ২৩৩)।
৩. সুরা কাহাফ তেলাওয়াত
জুমার অন্যতম আমল হলো সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলো হয়ে থাকবে।” (সহিহ তারগিব, হাদিস: ১৪৭৩)।
৪. দোয়া কবুলের মুহূর্ত
জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা কিছুই প্রার্থনা করে, তা কবুল হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে এক মুহূর্ত আছে, যদি কোনো মুসলিম এই সময়ে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাকে তা দান করেন। তোমরা এই সময়টি আসরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো।” (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৪৮)।
৫. বেশি বেশি দরুদ পাঠ
জুমার দিন নবীজি (সা.)-এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা উচিত। রাসুল (সা.) বলেন, “তোমাদের মধ্যে জুমার দিন হলো সর্বোত্তম দিন। এই দিনে আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। তাই তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।” (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৪৭)।
জুমার দিনের মাহাত্ম্য ও আমাদের করণীয়
পবিত্র মাহে রমজান এমনিতেই ইবাদতের জন্য বরকতময় মাস। আর তার ওপর জুমার দিন আরও বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এটি এমন এক দিন, যেদিন আল্লাহর অনুগ্রহ অর্জনের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়। তাই আমাদের উচিত, এ দিনকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা।
✦ নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া।
✦ সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা।
✦ অধিক পরিমাণে দরুদ শরিফ পাঠ করা।
✦ দান-সদকা করা।
✦ দোয়া ও ইস্তিগফার করা।
আজকের এই পবিত্র দিনে আমাদের উচিৎ আল্লাহর দিকে আরও বেশি মনোযোগী হওয়া। জুমার দিনে ইবাদত ও আমলের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা আমাদের সবার একান্ত কর্তব্য। রমজানের এই বরকতময় মুহূর্তে জুমার গুরুত্ব অনুধাবন করে আমল করলে আমাদের ইহকাল ও পরকাল উভয়ই সুন্দর হয়ে উঠবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র দিনকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর তৌফিক দান করুন। আমিন।