
রমজান মাসের প্রথম শুক্রবার এবং ছুটির দিন হওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের শপিং মল ও বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সকাল থেকেই মানুষ দলে দলে কেনাকাটার জন্য বেরিয়ে পড়ে, ফলে দুপুরের মধ্যেই প্রায় প্রতিটি বিপণিবিতানে ভিড় বাড়তে থাকে। ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানের শুরুতেই কেনাকাটার এমন উন্মাদনা তাদের জন্য আশাব্যঞ্জক।
রমজানের প্রথম শুক্রবার মুসলমানদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। অনেকে এই দিনে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি পরিবারের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে বের হন। সেই সঙ্গে সরকারি ছুটি থাকায় অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শপিংয়ে আসেন। ফলে অন্যান্য দিনের তুলনায় এদিন মার্কেটগুলোতে ভিড় অনেক বেশি হয়।
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, যমুনা ফিউচার পার্ক, চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার, খুলনার শিববাড়ি মোড়, রাজশাহীর সাহেববাজারসহ দেশের বড় বড় বিপণিবিতানগুলোতে সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে। অনেক জায়গায় পার্কিং সংকটও দেখা গেছে, ফলে ক্রেতাদের কিছুটা ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
শপিং মলগুলোতে পোশাকের দোকানে ছিল সবচেয়ে বেশি ভিড়। ঈদ উপলক্ষে নতুন পোশাক কেনার জন্য অনেকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দেশীয় ব্র্যান্ডের পাশাপাশি ভারতীয়, পাকিস্তানি এবং তুরস্কের পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি দেখা গেছে। বিশেষ করে মেয়েদের থ্রি-পিস, শাড়ি এবং ছেলেদের পাঞ্জাবি-ব্লেজারের দোকানগুলোতে প্রচুর ভিড় ছিল।
একজন বিক্রেতা জানান, “রমজানের প্রথম জুমার দিন থেকেই আসলে ঈদের কেনাকাটা জমে ওঠে। আজকের বিক্রি দেখে মনে হচ্ছে, সামনে আরও বেশি ক্রেতা আসবে।”
এছাড়া কসমেটিকস, জুতা, পারফিউম ও শিশুদের পোশাকের দোকানগুলোতেও ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেক ব্যবসায়ী বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার বিক্রি ভালো হচ্ছে, তবে কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে, যা ক্রেতাদের জন্য কিছুটা চাপ সৃষ্টি করছে।
শপিং করতে আসা এক ক্রেতা বলেন, “আজ ছুটির দিন, তাই পরিবারের সবাই মিলে কেনাকাটা করতে এসেছি। রমজানের শুরুতে কেনাকাটা করলে পরে আর ভিড় সামলাতে হয় না।”
তবে অনেকে আবার অভিযোগ করেন, ভিড়ের কারণে পছন্দের জিনিস ঠিকমতো দেখা সম্ভব হচ্ছে না। একজন ক্রেতার ভাষায়, “অনেক দোকানে এত ভিড় যে ভেতরে ঢুকতেই পারছি না। বিক্রেতাদেরও সময় কম, তাই পছন্দমতো কেনাকাটা করতে একটু সমস্যা হচ্ছে।”
শপিং মলে প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে অনেক ক্রেতা এখন অনলাইন কেনাকাটার দিকেও ঝুঁকছেন। বিশেষ করে যারা ভিড় এড়াতে চান, তারা বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে অর্ডার দিচ্ছেন। ফেসবুক ও ওয়েবসাইটভিত্তিক অনলাইন ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন যে তাদের বিক্রি বেড়েছে।
শপিং মলগুলোতে ভিড় সামলাতে অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষ করে বড় বিপণিবিতানগুলোর সামনে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। তবে অনেক জায়গায় অতিরিক্ত যানজট সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে বিকেলের দিকে রাজধানীর বেশ কিছু শপিং এলাকার সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে।
রমজানের প্রথম শুক্রবার হওয়ায় শপিং মলগুলোর ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। ব্যবসায়ীরা বেচাকেনায় খুশি, তবে ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা হতাশাও ছিল দাম বৃদ্ধির কারণে। সামনে রমজান যত এগিয়ে যাবে, ঈদের কেনাকাটার চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই শপিং মল ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আরও প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।