
সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে লালন, পালন এবং ধারণ করতে এ অভ্যুত্থানের সকল শক্তির ঐক্যকে অটুট রাখতে হবে। বিভেদ, বিদ্বেষ কিংবা বৈষম্যের সৃষ্টি হলে তা ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার উপলক্ষ তৈরি করতে পারে।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ঘিরে একটি কালচারাল ন্যারেটিভ তৈরি করতে হবে, যা এর প্রেক্ষাপট, প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিকতাকে অমলিন ও অটুট রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের মনন ও বোধকে ঘিরে একটি সাংস্কৃতিক ধারার নির্মাণ করবে।
ফারুকী বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে তার মন্ত্রণালয় অনেক কাজই করেছে। ধীরে ধীরে এসব কাজ দৃশ্যমান হবে। জুলাইয়ের আদর্শ কীভাবে আগামীর প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায় নতুন সংস্কৃতিমন্ত্রীর জন্য তার একটা রোডম্যাপ প্রস্তুত করে যাবেন তিনি।
শনিবার দুপুরে বাংলা একাডেমির শামসুর রহমান মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রাজপথের সংগঠন ‘বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজ’র বর্ষপূতি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজের মুখমাত্র ইমরান মাহফুজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের উদ্ধোধন করেন শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান দিপ্তী ও বাবা সাহরিয়া খান পলাশ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজের আহ্বায়ক কবি আবিদ আজম।
বিশিষ্ট গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জীর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কবি শান্তা মারিয়া বলেন, এখনো স্বৈরাচারের দোসরেরা নানা ন্যারেটিভস ছড়াচ্ছে। মানুষের মন মগজ থেকে ফ্যাসিবাদী চিন্তা চেতনা দূর করতে হবে।
জাতীয়তাবাদি লেখক ফোরামের সভাপতি কবি শাহীন রেজা বলেন, জনতার বিপ্লব কখনো ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। এই ইতিহাস অবশ্যই লালন করতে হবে।
কবি জাকির আবু জাফর বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মূল চেতনা থেকে সরে গেছে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা।
অনুষ্ঠানে জুলাইয়ের স্মৃতিচারণের পাশাপাশি কবিতা পাঠ করেন কবি বকুল আশরাফ, ড. কাজল রশীদ শাহিদ, কবি মাহফুজা অনন্যা, কবি মনসুর আজিজ, প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন, ছড়াকার মামুন সারওয়ার, কবি ও সাংবাদিক ফারজানা ববি, রাইয়ান জহির ও কবি মনসুর আজিজ, কবি রাসেল রায়হান, কবি সাম্য শাহ, কবি মাহফুজা অনন্যা, ডাকটিকেটের প্রধান সম্পাদক বোরহান মাহমুদ, চলচ্চিত্রকার পার্থিব রাশেদ, কবি শাকিল মাহমুদ, কবি হাসনাইন ইকবাল, বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজের সংগঠক পথিক রানা, কবি মঈন মুনতাসির, নিমগ্ন দুপুর, ফারুক হোসেন খান, নাহিদ যাযাবর, ফরিদুল ইসলাম নির্জন, তানজীনা ফেরদৌস, হালিমা মুক্তা, কবি লোকমান হোসেন জীবন, কবি নোমান সাদিক ও কবি সাইফ মাহদী।
অনুষ্ঠানে জুলাইয়ের গান পরিবেশন করেন কবি জগলুল হায়দার। সংগীত পরিবেশন করবেন ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ শ্লোগান সংগীতের রচয়িতা আমিরুল মোমেনীন মানিক।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের মুখপাত্র কবি ইমরান মাহফুজ সম্পাদিত বিশেষ স্যুভেনিরসহ বেশ কয়েকটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এর আগে, বিকাল ৩টায় বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের সামনের গলি থেকে গণহত্যাকারীদের দ্রুত বিচার ও ৫ আগস্টকে ‘এ্যান্টি ফ্যাসিস্ট ডে’ ঘোষণার দাবিতে বিক্ষুব্ধ কবি সাহিত্যিকের ব্যানারে ‘দ্রোহযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য যে, ২০২৪ সালের ২ আগস্ট কারফিউ এবং ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে রাজধানীর বাংলামোটরে সমবেত কবি-সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ বৃষ্টিভেজা দিনে দেশব্যাপী গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবি করেন। এরপর কবি আবিদ আজমের নেতৃত্বে ‘স্বৈরাচারের গদিতে, আগুন জ্বালাও একসাথে’ শ্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে মিছিল করেন তারা। সর্বস্তরের মানুষের সংহতি ও সমর্থনের কারণে পরদিন ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে একদফা ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।