ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে আসবে: প্রধান উপদেষ্টা

ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে আসবে: প্রধান উপদেষ্টা
প্রকাশিত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ ছিল আমাদের জন্য সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। ভঙ্গুর অর্থনীতি ও বন্যার কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল প্রায় ১৪ পার্সেন্ট। এখন সেটা অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমরা আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে এটি ৬ শতাংশে নেমে আসবে।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে যে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তা ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। এর ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা হয়েছিল। তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ, নজরদারি ও মধ্যস্বত্ব ভোগিদের দৌরাত্ম্য কমানোর ফলে এটি এড়ানো গেছে। বিশেষ করে, এ বছরের পবিত্র মাহে রমজান মাস থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে।

তিনি বলেন, জুন মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে, যা বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ নিয়ে চার মাস ধরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে কমেছে।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি প্রবাসীদের অসীম আস্থার ফলে মুদ্রা বাজারেও স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। গত অর্থবছর ব্যাংকিং চ্যানেলে রেকর্ড তিন হাজার ৩৩ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। রপ্তানি আয় প্রায় ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

এর ফলে টাকা শক্তিশালী হয়েছে। অনেক বছর পর ডলারের বিপরীতে টাকার মান বাড়ছে। গত ১১ মাসে বৈদেশিক পাওনাদারদের পাওনা সুদ ও আসল বাবদ ৪ বিলিয়ন ডলার বা ৪০০ কোটি ডলার অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। আগের বকেয়া দায় পরিশোধের পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। আগামীতে এ ধারা বজায় থাকবে বলে আমরা আশা করি।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার ফলে এই বছরের প্রথম তিন মাসে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটা দ্বিগুণের বেশি। আর অক্টোবর থেকে হিসাব করলে ছয় মাসে ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট এসেছে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা, যা গত সরকারের আমলের শেষ ছয় মাসের তুলনায় দ্বিগুণ।

তিনি আরও বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম বড় লক্ষ্য। সম্প্রতি হংকংভিত্তিক শিল্প গোষ্ঠী হানডা বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছে, যা এখাতে চীনা কোনো কোম্পানির একক সর্বোচ্চ বিনিয়োগ। তাদের এই বিনিয়োগের ফলে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি হানডার এই বিনিয়োগ আরও চীনা কোম্পানিকে এ দেশে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করবে। এর মাধ্যমে আমাদের তরুণ তরুণীদের কর্মসংস্থানের পথ খুলবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত ১৬ বছরে দেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে গিয়েছে, আমরা সেটা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। এই দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার জন্য সরকার নামকরা বিদেশি আইনি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে। যথাযথ আইনি পদক্ষেপের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্যাসিবাদী-দুর্বৃত্তরা যে অর্থসম্পদের পাহাড় গড়েছে তার কিছু কিছু ইতোমধ্যে জব্দ হয়েছে। এ কার্যক্রম সঠিকভাবে চালিয়ে যেতে পারলে অল্প সময়ের মধ্যে আরও কিছু ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে মজবুত করতে হলে আমাদের চিন্তায় মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। আমি বরাবরই বলে এসেছি, এদেশের নদী ও বিশাল সমুদ্র আমাদের মূল্যবান সম্পদ। আমরা এ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে সমান্তরালভাবে ‘পানিভিত্তিক অর্থনীতি’ গড়ে তুলতে চাই।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com