সীমান্তের ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে দালালদের সহায়তায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

সীমান্তের ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে দালালদের সহায়তায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

সীমান্তের ৩০ পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে রোহিঙ্গা

প্রকাশিত

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কিছুদিন বন্ধ থেকে রোববার রাত থেকে গতকাল সোমবার ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তের ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে দালালদের সহায়তায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন টেকনাফ পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. ইসমাইল।

মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান সংঘাতে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা এখনো কমেনি। রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুই দেশের দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে ২০-৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে গোপনে অনুপ্রবেশ করিয়ে যাচ্ছে এই দালাল চক্র। দালালরাই তথ্য দিচ্ছে, প্রতিদিন হাজারের ওপরে রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটছে। সে হিসাবে আগস্ট মাস থেকে এই পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। তবে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় আটক করে রোহিঙ্গাদের দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়াও অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের শতাধিক নৌকা আটক করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেছে কোস্টগার্ড ও বিজিবি।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানায়, প্রাণের ভয়ে তারা গ্রাম ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। ওপারে সংঘর্ষ

বেড়ে যাওয়ায় তাদের মতো আরও অনেকে এ পারে চলে আসার পথ খুঁজছে। মংডুর নলবইন্য ও মেরোল্য এলাকায় তাণ্ডব চালাচ্ছে আরকান আর্মি। তারা ২০০টি ঘরে আগুন দিয়েছে। তাদের গুলিতে ২০ রোহিঙ্গা গুরুতর আহত হয়েছে। অনেকে মারাও গেছে। প্রাণে বাঁচতে তারা নাফ নদ পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারা বলে, এখন মিয়ানমার সরকারের পাশাপাশি বেশি নির্যাতন করছে আরাকান আর্মি। তাদের দলে যোগ না দিলে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। নইলে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলছে।

টেকনাফ পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. ইসমাইল জানান, অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ক্যাম্পে প্রবেশ করলেও অনেকেই টেকনাফ পৌরসভা এবং সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বাসা ভাড়া নিয়ে আছে। বাংলাদেশে ঢোকার জন্য রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন পয়েন্টে লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে আছে। সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছে হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারের মিয়ানমারের প্যারাংপুরু নামক এলাকায়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, গত দুই-তিন দিনের মধ্যে এখন পর্যন্ত দেশে কমপক্ষে ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ হয়েছে। জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরনতলী, বরইতলী, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলারচর, খুরেরমুখ, আলীর ডেইল, মহেশখালিয়াপাড়া, লম্বরী, তুলাতলী, রাজারছড়া, বাহারছড়া উপকূল, উখিয়ার বালুখালী, ঘুমধুম সীমান্তসহ অন্তত ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে এসব রোহিঙ্গা দেশে প্রবেশ করেছে।

টেকনাফ পৌরসভার বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, কিছু জেলে টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে সহযোগিতা করছে। টেকনাফে তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে আশ্রয় নিচ্ছে। তার এলাকার আশপাশে ভাড়া বাসায় রোহিঙ্গারা রয়েছে বলে জানান তিনি।

টেকনাফের নয়াপাড়ার ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ আয়াছ বলেন, ক্যাম্পে গত এক সপ্তাহে নতুন করে অন্তত ৩০০ রোহিঙ্গা এসেছে।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সাব্বির জানান, মিয়ানমারের জান্তা ও আরাকান আর্মির লড়াইয়ে তার বাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার পর স্ত্রী-সন্তানদের খবর জানেন না। মংডুর কাছাকাছি এলে আরাকান আর্মির সদস্যরা তাকে আটকে রাখে। তাদের ক্যাম্পে নির্যাতন করে নানা বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই ক্যাম্পে তিনি টানা ৩ মাস ছিলেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন করে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদ ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। তাদের নাফ নদ থেকে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে নতুন করে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছে। তবে এ পর্যন্ত কত রোহিঙ্গা ঢুকেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।

এদিকে সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, রোববার রাত দেড়টার দিকে মংডু শহরে নিজেদের দুটি চৌকির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে আরাকান আর্মির সদস্যদের লক্ষ্য করে মর্টার শেল ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিজিপি ও জান্তা বাহিনী। এতে সীমান্তের ওপার থেকে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। এসব শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা টেকনাফ।

একই কথা বলেন টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ কবির আহমদ। তিনি জানান, মর্টার শেল ও গ্রেনেডের বিস্ফোরণে বাড়িঘর কেঁপে ওঠায় রাতভর আতঙ্কের মধ্যে ছিল সীমান্ত এলাকার মানুষ।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com